ঢাকা: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বর্তমান আমির ডা. শফিকুর রহমানের মেয়াদ শেষ হচ্ছে নভেম্বরে। তাই আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই নতুন আমির পেতে যাচ্ছে দলটি। লক্ষাধিক সদস্যের (রুকন) ভোটে দলটির আমির নির্বাচিত হবে। সূত্র জানায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই নতুন আমিরের নাম ঘোষণা করবে দলীয় নির্বাচন কমিশন। এর পর নতুন আমির শপথ নেবেন।
জানা গেছে, জামায়াতে ইসলামী দেশের অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংগঠন। ১৯৪১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত দলটির নেতৃত্বে আসীন হয়েছেন ছয়জন আমির। বর্তমান আমির ডা. শফিকুর রহমান প্রথমবার ২০১৯ সালে আমির নির্বাচিত হন। এর পর ২০২২ সালে দ্বিতীয়বার আমির হন তিনি। চলতি বছরের নভেম্বরে শেষ হচ্ছে তার বর্তমান মেয়াদ। দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছর মেয়াদ শেষে সরাসরি ভোটে নতুন আমির নির্বাচিত হবেন। রাজনীতির অঙ্গনে এ নিয়ে চলছে জোর আলোচনা— কে হচ্ছেন জামায়াতের সপ্তম আমির?
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, এবারের আমির নির্বাচনে জামায়াত তিন জনকে প্যানেলভুক্ত করেছে। চাইলে প্যানেলের বাইরেও (যে কোনো রুকনকে) ভোট দিতে পারবেন রুকনরা। এবারের প্যানেলে যে তিনজন রয়েছেন তারা হলেন- বর্তমান আমির ডা. শফিকুর রহমান, বর্তমান নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ও সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। এই তিন জনের মধ্যে যেকোনো একজন তিন বছরের জন্য আমির নির্বাচিত হবেন। অবশ্য জামায়াতে ইসলামী তাদের প্যানেল প্রার্থীদের নাম কখনো প্রকাশ্যে আনে না। গোপন ব্যালটে যিনি নির্বাচিত হন তার নাম নির্বাচন কমিশন থেকে ঘোষণা করা হয়। সূত্র জানায়, গোপন ব্যালটের মাধ্যমেই এই তিন জনকে মনোনীত করা হয়েছে।
জানা গেছে, এবারের আমির নির্বাচনের জন্য জামায়াত কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য এবং সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম মাসুমের নেতৃত্বে একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে। সারা দেশের বিভিন্ন কেন্দ্রে সরাসরি ব্যালটে ভোট দিচ্ছেন রুকনরা (সদস্য)। ৩০ অক্টোবরের মধ্যে ভোট গ্রহণ শেষ হবে। নভেম্বরের প্রথম অথবা দ্বিতীয় সপ্তাহে নির্বাচন কমিশন ফলাফল ঘোষণা করবে।
সূত্র বলছে, যেহেতু নভেম্বরের শেষের দিকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে, সেহেতু জামায়াতে ইসলামী তাদের দলীয় সব নির্বাচনি কার্যক্রম নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে শেষ করতে চায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাতীয় কাউন্সিলের (রোকন) সদস্যদের সরাসরি গোপন ভোটে জামায়াতের আমির তিন বৎসরের জন্য নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হওয়ার পর আমির কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার নির্বাচিত সদস্য/কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ/কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্যদের উপস্থিতিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে শপথ নেন। এর পর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে সেক্রেটারি জেনারেল মনোনীত করেন আমির।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘জামায়াত গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় বিশ্বাসী। সেজন্য তারা গণতান্ত্রিক চর্চা দলের মধ্যেও করে থাকে। প্রতি তিনবছর পরপর গোপন ব্যালটে দলের আমির নির্বাচন গণতান্ত্রিক চর্চার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। বর্তমান আমিরের মেয়াদ যেহেতু শেষ তাই ভোটগ্রহণ চলছে। নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে নির্বাচন কমিশন নতুন আমিরের নাম ঘোষণা করবেন।’
এ প্রসঙ্গে দলের সহকারী সেক্রেটারি এবং প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের সারাবাংলাকে বলেন, ‘সারাদেশের জেলা ও মহানগরে সরাসরি ব্যালটে ভোটগ্রহণ চলছে। অক্টোবর মাস ভোট চলবে। নভেম্বর মাসের ১০ থেকে ১৫ তারিখের মধ্যে ফলাফল ঘোষণা করা হবে।’
এ বছর কতজন ভোট দিচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রায় এক লাখ পাঁচ হাজারের মতো ভোটার ভোট দেবেন। ফলাফল ঘোষণার পরে নতুন আমিরের শপথের তারিখ ঠিক হবে।’ তিনি বলেন, ‘ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই দলের অভ্যন্তরীণ নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ হবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতের এক নেতা বলেন, ‘বর্তমান আমির দেশকে নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। ভালো কাজ করছেন। দলের রুকনরা আবারও তাকে দলের আমির হিসেবে বেছে নিতে পারেন। একজন কতবার আমির হতে পারবেন তা নির্দিষ্ট নয়।’
জানা গেছে, দলের বর্তমান আমির ডা. শফিকুর রহমান ১৯৯৮ সালে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। এর পর সিলেট মহানগর আমির, কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল, নির্বাহী পরিষদ সদস্য, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এবং পরে সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ডা. শফিকুর রহমানের আগে দলের আমির ছিলেন মকবুল আহমদ (২০১৬-২০১৯)। তার আগে আমির ছিলেন মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী (২০০০-২০১৬), তার আগে প্রয়াত অধ্যাপক গোলাম আযম প্রথমে ১৯৬০ থেকে ১৯৭১ পরে ১৯৯২ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত আমিরের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত আমির ছিলেন আব্বাস আলী খান। তারও আগে ১৯৫৬ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত জামায়াতের আমির ছিলেন আবদুর রহিম।