চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মানবস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর তিন কনটেইনার ঘনচিনি আমদানির তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। শিল্প কারখানার কাঁচামালের ঘোষণা দিয়ে আমদানি নিষিদ্ধ ঘনচিনি আনার তথ্যের ভিত্তিতে কনটেইনারগুলোর খালাস প্রক্রিয়া দুই মাস আটকে রাখা হয়। শেষপর্যন্ত তিনটি পরীক্ষাগারে রাসায়নিক পরীক্ষায় আমদানি করা পণ্যগুলো ঘনচিনি বলে প্রমাণিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) চট্টগ্রাম কাস্টমসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, তিনটি কনটেইনারে ৬০ হাজার ৪৮০ কেজি ঘনচিনি পাওয়া গেছে। চট্টগ্রাম নগরীর সিটি গেইটে গোল্ডেন কনটেইনার ডিপোতে আমদানি করা কনটেইনার তিনটি আটকে রাখা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, ঘনচিনি বা সোডিয়াম সাইক্লামেট হচ্ছে একটি কৃত্রিম মিষ্টি জাতীয় দ্রব্য যা সাধারণ চিনির চেয়ে ৩০ থেকে ৫০ গুণ বেশি মিষ্টি। দামে কম হওয়ায় একশ্রেণির ব্যবসায়ী ঘনচিনি দিয়ে তৈরি করে মিষ্টি ও মিষ্টিজাতীয় বিভিন্ন খাদ্য। আর শিশুদের চকলেট, আইসক্রিম, কনডেন্সড মিল্ক ও বেভারেজ জাতীয় পানীয় তৈরিতেও ঘনচিনি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘনচিনি ব্যবহারে ক্যানসার, হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশি শক্ত হয়ে যাওয়া, কিডনি,সহ বিভিন্ন জটিল রোগের সম্ভাবনা তৈরি হয়।
স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণে দেশে ২০০৬ সালে ঘনচিনির আমদানি ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। অপব্যবহার রোধে ২০২১-২৪ সালে প্রণীত আমদানি নীতি আদেশেও ঘনচিনিকে আমদানি নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকায় রাখা হয়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের উপ-কমিশনার এইচ এম কবির জানান, শিল্পের কাঁচামাল সোডা অ্যাশ লাইট আমদানির ঘোষণা দিয়ে ঢাকার প্রতিষ্ঠান এইচপি ইন্টারন্যাশনাল গত ১৬ আগস্ট তিনটি কনটেইনার চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়ে আসে। কনটেইনার তিনটি থেকে পণ্য খালাসের জন্য গোল্ডেন ডিপোতে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ পণ্য খালাস বন্ধের নির্দেশনা দিয়ে কনটেইনার তিনটিকে আটকে রাখে।
এরপর গত ১৬ সেপ্টেম্বর তিনটি কনটেইনার খুলে নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যানো প্রযুক্তি সেন্টার, খুলনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাব এবং কাস্টম হাউসের ল্যাবে। রাসায়নিক পরীক্ষার পর আজ মঙ্গলবার তাদের পাঠানো প্রতিবেদনে ওই পণ্য ঘনচিনি হিসেবে শনাক্ত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
কাস্টমস আইন অনুযায়ী ঘনচিনির চালানটি আটক করে আমদানিকারকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে বলে কাস্টমস কর্মকর্তা কবির জানান।