ঢাকা: বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনের আগে শিশুদের সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিত করার দাবিতে সরকার, রাজনৈতিক দল ও সকল সংশ্লিষ্টদের কর্মসূচিতে শিশুদের অগ্রাধিকার নিশ্চিত করতে ৬ দফার একটি ইশতেহার ঘোষণা করা হয়েছে। এই ইশতেহারের মাধ্যমে শিশুদের জন্য মানসম্মত শিক্ষা; স্বাস্থ্য সুরক্ষা; শিশুদের মতামত ও অংশগ্রহণ; সাইবার নিরাপত্তা এবং জলবায়ু ন্যায়বিচার ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি বাল্যবিয়ে, শিশুশ্রম ও সহিংসতা বন্ধে কঠোর আইন প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছে দুই শতাধিক শিশু।
মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) রাজধানীতে অবস্থিত বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে দুই শতাধিক শিশুর উপস্থিতিতে ‘শিশু অধিকার সপ্তাহ-২০২৫’ উদযাপন উপলক্ষ্যে একশনএইড বাংলাদেশ আয়োজিত এক বিশেষ অনুষ্ঠানে এই জোরালো দাবি জানানো হয়। এবারের অনুষ্ঠানের প্রতিপাদ্য ছিল- ‘শিশুদের ক্ষমতায়ন, বাল্যবিবাহের অবসান – ডিজিটাল দুনিয়ায় নিরাপদ শৈশবের আহ্বান’। শিশুদের অংশগ্রহণে আয়োজিত এই বিশেষ অনুষ্ঠানে প্রান্তিক শিশুদের কণ্ঠস্বর তুলে ধরা হয় এবং তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সমন্বিত পদক্ষেপের আহ্বান জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে ‘শিশুদের ক্ষমতায়ন, বাল্যবিয়ের অবসান, ডিজিটাল দুনিয়ায় নিরাপদ শৈশব’ শীর্ষক একটি প্যানেল আলোচনার আয়োজন করা হয়। একশনএইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির-এর সঞ্চালনায় এতে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার শিশু অধিকার বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন।
শিশুদের ইশতেহার ও প্রত্যাশা অনুষ্ঠানে শিশুরা একটি ইশতেহার পাঠের মাধ্যমে তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু দাবি ও প্রত্যাশা তুলে ধরে। দেশের শিশুদের অধিকার নিশ্চিতকরণ এবং তাদের সামগ্রিক বিকাশের জন্য শিশুরা সংশ্লিষ্ট সবার সক্রিয় সহযোগিতা কামনা করে।
শিশুদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি বলে উল্লেখ করেন একশনএইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির। তিনি বলেন, ‘শিশুদের নিয়ে তৈরি নীতিগুলো তাদের জীবনকে সরাসরি প্রভাবিত করে। তাই তাদের কণ্ঠস্বর শোনা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় তাদের অন্তর্ভুক্ত করা কেবল অধিকার নয়, বরং একটি কার্যকর নীতি প্রণয়নের ভিত্তি। বিশেষ করে ডিজিটাল বিশ্বে তাদের নিরাপত্তা ও সুযোগ নিশ্চিত করতে আমাদের সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে- শিশুদের সুরক্ষা না করতে পারলে দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রশ্ন থেকে যাবে।’
বাংলাদেশ শিশু একাডেমির মহাপরিচালক দিলারা বেগম বলেন, ‘বাংলাদেশ শিশু একাডেমি শিশুদের সৃজনশীলতা ও মনন বিকাশে কাজ করছে। আমরা অভিভাবকদের ইতিবাচক ও দায়িত্বশীল সন্তান প্রতিপালন বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে জোর দিচ্ছি। আমাদের শিশুরা যেন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে তাদের দাবিগুলো তুলে ধরে, সেই পরিবেশ নিশ্চিত করা আমাদের সবার দায়িত্ব।’
এতে আরও বক্তব্য দেন ইউনিসেফের শিশু সুরক্ষার প্রধান মিস নাটালি ম্যাককলি, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মাদ এমদাদ-উল-বারি, ডিএমপি’র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. ইলিয়াস জিকু, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের (এনএইচআরসি) সম্মানসূচক সদস্য তানিয়া হক প্রমুখ।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে আইন ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের যুগ্ম সচিব এস. এম. শাফায়েত হোসেন; ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (আইএসপিএবি)-এর সভাপতি মোহাম্মদ আমিনুল হাকিম এবং স্কলাস্টিকা স্কুলের সিনিয়র ভাইস প্রিন্সিপাল নুরুন্নাহার মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।