ঢাকা: বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকুরীতে মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে এবং তাদের ধরে রাখার লক্ষ্যে গ্রেড-৯ ও গ্রেড-১০ পদে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মেধার ভিত্তিতে অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট (বাড়তি বোনাস) ফের চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যেসব কর্মকর্তার শিক্ষাজীবনে চারটি প্রথম শ্রেণী বা বিভাগের অধিকারী, তারা নির্ধারিত ইনক্রিমেন্টের অতিরিক্ত আরো তিনটি ইনক্রিমেন্ট বা বোনাস উপভোগ করবেন। যাদের তিনটিতে প্রথম শ্রেণী বা বিভাগ থাকবে তারা অতিরিক্ত দুইটি ইনক্রিমেন্ট (বোনাস) পাবেন।
মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংকের হিউম্যান রিসোর্সেস ডিপার্টমেন্ট-২ থেকে এ-সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করা হয়েছে।
জানা যায়, সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা প্রতিবছর একটি (৫ শতাংশ হারে) ইনক্রিমেন্ট পান। এর সঙ্গে মেধীবাদের বাড়তি ইনক্রিমেন্ট যোগ হবে।
সার্কুলারে বলা হয়েছে, সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়ায় প্রাপ্তরা চাকরীতে যোগদানের শুরু থেকে অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট পাবেন। এসব কর্মকর্তাদের নিয়োগপ্রাপ্তির পূর্বে অর্জিত শিক্ষাগত যোগ্যতার উৎকর্ষতার ভিত্তিতে প্রাপ্যতা অনুসারে সর্বোচ্চ ৩ এবং বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত শতকরা নম্বরের ভিত্তিতে ১ টিসহ সর্বোচ্চ ৪ টি অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট প্রদান করা হবে। নিয়মিত ইনক্রিমেন্টসহ সর্বোচ্চ মোট ইনক্রিমেন্ট হবে ৫ টি। একজন কর্মকর্তা যোগদানের পর থেকে ইনক্রিমেন্ট পেলেও চাকরি স্থায়ীকরণের পর বকেয়া হিসাবে ইনক্রেমিন্টের অর্থ পাবেন। বাংলাদেশ পরিচালক পর্ষদে ২০২৪ সালের ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ৪৩৮তম সভার সিদ্ধান্তক্রমে বাংলাদেশ ব্যাংকে গ্রেড-৯ ও গ্রেড-১০ ভুক্ত পদে নিয়োগপ্রাপ্তির পূর্বে অর্জিত শিক্ষাগত যোগ্যতার (এসএসসি বা সমমান, এইচএসসি বা সমমান, স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর) উৎকর্ষতার ভিত্তিতে বর্ণিত কর্মকর্তাগণকে অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট প্রদান করা হবে।
আরো জানানো হয়, যে সকল প্রশিক্ষণার্থী বুনিয়াদি প্রশিক্ষণে সামগ্রিক মূল্যায়নের ভিত্তিতে ৮০ শতাংশ বা তদূর্ধ্ব নম্বর প্রাপ্ত হবেন, তাদের মধ্য হতে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ কর্মকর্তাকে ১ অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট প্রদান করা হবে। অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট বর্ণিত কর্মকর্তাগণকে স্বীয় পদে (গ্রেড-৯/গ্রেড-১০ ভুক্ত) স্থায়ীকরণ হওয়ার পর নিয়োগপ্রাপ্তির তারিখ হতে বকেয়াসহ প্রদান করা হবে। তবে উক্ত সময়ের মধ্যে কোনো কর্মকর্তার বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ সম্পন্ন না হয়ে থাকলে পরবর্তীতে যখনই তা সম্পন্ন হবে তখনই তিনি উক্ত প্রশিক্ষণের জন্য নির্ধারিত ১টি অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট (যদি পাওয়ার যোগ্য হন) নিয়োগপ্রাপ্তির তারিখ হতে বকেয়াসহ পাবেন।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকে নবম ও দশম গ্রেডের কর্মকর্তারা শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে ইনক্রিমেন্ট পেতেন। কিন্তু ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তা কোন কারণ দর্শানো ছাড়া কয়েকটি ব্যাচের কর্মকর্তাদের জন্য বন্ধ করা হয়। তবে ২০২৪ সালের আগস্টে সরকারের পালাবদলের পর তা চালু হয়। যদিও পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদে গত ৮ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত হয়। সর্বশেষ আজ বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে।
২০২৪ সালের ২৩ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংক জানায় অফিস আদেশে জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ৫৭ জন কর্মকর্তা। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসসহ (বিসিএস) অন্য চাকরিতে যোগ দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাকরি ছেড়েছেন তারা। পদত্যাগকারীদের মধ্যে রয়েছেন একজন উপ-পরিচালক ও একজন অফিসার। বাকি ৫৫ জন সহকারী পরিচালক। মূলত তুলনামূলক আরও ভালো চাকরি পাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চাকরি ছেড়েছেন ওই ৫৭ কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি থেকে অব্যাহতি নেওয়া একাধিক কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি তুলনামূলক ভালো মনে করা হয়। বেশি সুযোগ-সুবিধার জন্য অনেকে বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার পরও বাংলাদেশ ব্যাংকে থেকে যেতেন। এখন চিত্রটা বদলে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রমান্বয়ে সুবিধা কমিয়ে আনা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সুযোগে পেলেই বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়া শ্রেয় হয়েছে।