পঞ্চগড়: পঞ্চগড়ে বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে মেয়েকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ করতে গিয়ে বাবাকে কারাগারে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে।
মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের দোতলার বারান্দায় বিছানায় শুয়ে আছে চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রী। তার পাশে বসে কাঁদছেন তার মা। ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ করতে থানায় গেলে উলটো ভুক্তভোগীর বাবা, চাচা ও ভাইকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। এমনটিই অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী পরিবার।
ধর্ষণ চেষ্ঠার অভিযোগ উঠেছে বোদা উপজেলার ময়দানদিঘী ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য আশিকুজ্জামান মানিকের (৪৫) বিরুদ্ধে।
সোমবার (২০ অক্টোবর) ঘটনাটি ঘটেছে জেলার বোদা উপজেলায়। এ ঘটনায় থানায় দুইটি মামলা দায়ের হয়েছে। একটি মামলার বাদী আশিকুজ্জামান মানিক নিজে। অপর মামলাটি করেছেন ধর্ষণ চেষ্টার শিকার দাবি করা শিশুটির পরিবার।
১২ বছরের ওই শিশুটির পরিবারের অভিযোগ, সোমবার দুপুরে প্রতিবেশি মানিকের বাড়িতে তার মেয়েদের সঙ্গে টিভি দেখতে যায় চতুর্থ শ্রেণি পড়ুয়া শিশুটি। ফেরার সময় বাড়ির চিপাগলিতে কেউ না থাকার সুযোগে তার মুখ চেপে ধর্ষণের চেষ্টা করে মানিক। শিশুটি কোনোমতে ছুটে বাড়ি গিয়ে তার মাকে বিষয়টি জানায়। খবর পেয়ে পুলিশ এসে তাকে ধরে নিয়ে যায়। এদিকে রাতে থানায় অভিযোগ করতে গেলে বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের লোকজন শিশুটির পরিবারের সদস্যদের হাত থেকে অভিযোগের কাগজটি নিয়ে ছিঁড়ে ফেলে বলেও দাবি করেন তারা। উলটো আটক হন শিশুটির বাবা, ভাই ও চাচা। মঙ্গলবার তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
শিশুটিকে প্রথমে বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
তারা আরও অভিযোগ করেন, বিএনপির নেতা হওয়ায় তাদের বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দেওয়া হচ্ছে।
শিশুটির মা বলেন, ‘আমার মেয়ের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে থানায় গেলে উলটো পুলিশ আমার ছেলে, স্বামী ও তার ভাইকে গ্রেফতার করেছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা সবার সামনে আমাদের অভিযোগ ছিঁড়ে ফেলেছে। আমাদের হুমকি ধামকি দিচ্ছে। আমি কি আমার মেয়ের ওপর নির্যাতনের ন্যায়বিচার পাবো না?’
অন্যদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে আশিকুজ্জামান মানিক দাবি করেন পূর্ব শত্রুতার জেরে তার ওপর হামলা করা হয়েছে। এমনকি তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। ঘটনার দিন টিভি বন্ধ করে দিয়ে ঘাস কাটতে গেলে পূর্ব শত্রুতার জেরে আসামিরা তাকে ধরে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে অমানবিকভাবে মারধর করে। এমনকি তার স্ত্রী সন্তানদের ওপরেও হামলা করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
আশিকুজ্জামান মানিক বলেন, ‘তারা আওয়ামী লীগের সময়ে মানুষের জমি দখল করে ছিল। সরকার পতনের পর এলাকার মানুষকে নিয়ে সেই যদি উদ্ধার করে দেওয়া হয়। এ কারণে তারা আমার ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। আমাকে পরিকল্পিতভাবে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে মারধর করেছে। আমি এখন রংপুরে চিকিৎসাধীন। আমার একটা চোখ নষ্টের পথে। আমার ওপর নির্যাতন দেখে স্থানীয়রা ৯৯৯ ফোন দেয়। পরে পুলিশ এসে আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি আমার নামে মিথ্যে অভিযোগ করা হচ্ছে। আমার ওপর হামলার বিচার চাই আমি।’
বোদা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আজিম উদ্দিন বলেন, ‘পূর্ব শত্রুতার জেরে মব সৃষ্টি করে মানিককে মারধর করে আধমরা করা হয়। ৯৯৯ ফোন করে স্থানীয়রা সহায়তা চাইলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগে মানিক মামলা করেছে। পরে শিশুটির বাবাসহ তিনজন ধর্ষণ চেষ্টার মামলা করতে আসলে তাদের মামলটিও নেওয়া হয়। কিন্তু তারা যেহেতু আসামি, তাই তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এখানে মামলার এজাহার ছেঁড়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি।’