৩ দিন ধরে নিখোঁজ শেলটেকের স্থপতি মাহফুজ নবীন
১০ জুলাই ২০১৮ ১৯:৫৫ | আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৮ ২০:১১
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: তিনদিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন আবাসন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান শেলটেকের স্থপতি মাহফুজ নবীন। গত রোববার দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে বাসা থেকে অফিসের উদ্দেশে বের হওয়ার পর তার আর কোনো খোঁজ মেলেনি।
তার কোনো সন্ধান না পেয়ে ৯ জুলাই, সোমবার মাহফুজের ছোট ভায়রা ইমরান হোসেন ভাষানটেক থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন।
মঙ্গলবার (১০ জুলাই) ইমরান হোসেন জিডির বিষয়টি নিশ্চিত করে সারাবাংলাকে বলেন, অফিসে আগেই বলে রেখেছিলেন রোববার তিনি একটু দেরিতে অফিসে প্রবেশ করবেন। তাই তিনি ওইদিন দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে বাসা থেকে বের হন। পান্থপথে তার অফিস। ভাষানটেক থেকে যেতে তার বেশি সময় লাগার কথা নয়। ফোনে চার্জ কম থাকায় তিনি সঙ্গে চার্জারও নিয়ে যান। বেলা ১টার দিকে তার স্ত্রী এশার ফোনে একটি মেসেজ আসে। ফোনে চার্জ নেই, তাই অফিসে গিয়ে ফোন করবেন।
এরপর দুপুর ২টার দিকে এশা মাহফুজের ফোনে কল করলে তার ফোন বন্ধ পান। পরে পান্থপথের শেলটেক অফিসে গিয়ে জানা যায়, মাহফুজ অফিসে প্রবেশ করেননি। আসবেন কি আসবেন না তাও জানাননি তিনি।
ইমরান হোসেন আরও বলেন, দুবছরের একমাত্র ছেলেকে বেশির ভাগ সময় দিতেন মাহফুজ। ছেলে প্রতিবন্ধী হওয়ায় অফিস সময়ের পর বাসাতেই কাটাতেন। এশার সাথেও চমৎকার সম্পর্ক ছিল। অন্য কোনো মেয়ের সঙ্গেও সম্পর্কের ব্যাপারে বলতে পারেননি ইমরান।
এ ব্যাপারে মাহফুজের স্ত্রী এশা বলেন, ‘অসুস্থ মা আর প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়েই যা চিন্তা ছিল তার। আর কোনো সমস্যা ছিল মাহফুজের।’
জিডি করার কারণ হিসেবে ইমরান বলেন, ‘কেউ তাকে অপহরণ করেছে কি-না এই সন্দেহে জিডি করেছেন। তবে এরকম কেউ বাসায় ফোন করেননি। তার ফোন সব সময় বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।’
মাহফুজের ব্যাপারে জানতে চাইলে জিডির তদন্ত কর্মকর্তা ভাষানটেক থানার এসআই রুহুল আমিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘মাহফুজ নিখোঁজের পর তার শেষ কল রেকর্ড পাওয়া যায় রাজধানীর আদাবর এলাকায়। তার আগে বাসা থেকে বের হওয়ার পর ভাষানটেক এলাকায় এটিএম বুথ থেকে ২০ হাজার টাকা তুলেছেন। তবে মাহফুজ নিজেই টাকা তুলেছেন কি-না এজন্য ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে ভিডিও ফুটেজ চেয়েছেন। এ ছাড়া তার কল রেকর্ডে থাকা অন্যান্য মোবাইল নম্বরগুলোও যাচাই করা হচ্ছে।’
মাহফুজকে র্যাব আটক করেছে কি-না জানতে চাইলে র্যাবের মিডিয়া শাখার সহকারী পরিচালক মেজর আব্দুল্লাহ আল মেহেদি সারাবাংলাকে বলেন, ‘মাহফুজ নবীন নামে গত কয়েক দিনে কাউকে আটক করা হয়নি।’
অন্যদিকে ডিএমপির গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার মাসুদুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘ডিবি কিংবা কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কেউ মাহফুজ নামে কাউকে আটক বা গ্রেফতার করেনি। জিডির বিষয়টি তদন্ত করছে পুলিশ।’
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘অতীতে যারা মিসিং হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, কেউ পরকীয়ায় লিপ্ত, কেউ পাওনা টাকার জেরে পালিয়ে আছে, কাউকে অপহরণ করা হয়েছে আবার দেখা গেছে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে ঘর ছেড়েছে। মাহফুজের বেলায় আসলে কোনটি হয়েছে তা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তদন্ত করলে বোঝা যাবে।’
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আর্কিটেকচার বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স শেষে শেলটেক কোম্পানিতে উচ্চ বেতনে চাকরি শুরু করেন মাহফুজ।
সারাবাংলা/ইউজে/এমআই