‘তারা পুলিশ, আমরা মানুষ’
১০ জুলাই ২০১৮ ১৯:৩৩ | আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৮ ১৯:৩৯
।। শাহ্ ওমর, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: কাঁটাবন থেকে শাহবাগের পথে ছিল গাড়িটি। গন্তব্য মতিঝিল। শাহাবাগ মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের সিগন্যাল, থেমে যায় গাড়ি। এরপর চিরচেনা চিত্র— ট্রাফিক পুলিশের হাতে গাড়ির কাগজ, টাকা না দিলে মামলার হুমকি, অবশেষে ট্রাফিক পুলিশকে টাকা দিয়ে ‘মুক্তি’।
ট্রাফিক পুলিশের কথা না শুনলে কোনো নিয়ম না ভাঙলেও নিয়ম ভাঙার অভিযোগ গাড়িচালকদের মামলা দেওয়া হয়— বহুল শ্রুত এমন অভিযোগেরই যেন আরেকবার চিত্রায়ন হলো শাহবাগের সিগন্যালে, সারাবাংলা’র এই প্রতিবেদকের সামনে।
https://www.youtube.com/watch?v=wDP9W2DdqN0&feature=youtu.be
মঙ্গলবার (১০ জুলাই) দুপুরে ট্রাফিক জ্যামের ঝক্কি পেরিয়ে গন্তব্যের পথে ছিল গাড়িটি। শাহবাগের সিগন্যালে তখন তপ্ত দুপুর। শ্রান্ত কাঠঠোকরার মতোই ট্রাফিক পুলিশ আমিরুলের নখের ঠকঠক শব্দ গাড়ির কাঁচে, চালকের পাশে। কাঁচ নামাতেই তার প্রশ্ন (প্রকারান্তরে তার হাতে তুলে দেওয়ার আদেশ), ‘গাড়ির কাগজ কই?’
চালকের দেরি হয় না ট্রাফিক পুলিশের হাতে কাগজ দিতে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সেগুলো দেখাও হয়ে যায় তার। কাগজ দেখে আমিরুল বলেন, ‘হুম, সব ঠিক আছে।’ চালকের মিনতি, ‘স্যার, তাহলে গাড়ির কাগজগুলো দিয়ে দেন। আমার তাড়া আছে।’
কিন্তু চালকের কথায় কান দেন না ট্রাফিক পুলিশ আমিরুল। চালককে নামতে বলেন গাড়ি থেকে। বলেন, ‘তুমি কাগজ ফেরত পাইবা না। আগে ট্যাকা দাও।’
চালক প্রতিবাদ করে ওঠেন, ‘আমি তো কোনো ট্রাফিক আইন ভাঙি নাই। টাকা কেন দেবো, স্যার?’ এমন জবাব যেন বেয়াদবি! তাই আমিরুলের সাফ কথা, ‘বেশি কথা বললে একদম মামলা দিয়ে দেবো।’
তপ্ত দুপুরের রোদে আর সময় নেন না চালক। আমিরুলকে টাকা দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যান গাড়ি। পেছন থেকে তাকে অনুসরণ করা সারাবাংলা’র এই প্রতিবেদক কথা বলেন তার সঙ্গে।
চালকের কণ্ঠে ফুটে ওঠে অসহায়ত্ব, ‘কোনো কারণ ছাড়াই গাড়ি থামিয়ে কাগজ দেখতে চাইল। আমি কাগজ দেওয়ার পর স্পষ্ট বলে দেয়, টাকা না দিলে কাগজ ফেরত দেওয়া হবে না। আমার আর কী করার আছে!’
কোনো অন্যায় না করেও পুলিশকে টাকা দিয়ে তো আরও বড় অন্যায় করেছেন- প্রতিবেদকের এমন কথার জবাবে চালক বলেন, ‘তারা পুলিশ, আমরা মানুষ। দুই বেলা খাইটা খাই। পুলিশের কথামতো না চললে তারা অভিযোগ না থাকলেও অভিযোগ বানায়ে মামলা দেবে। এত ঝামেলা আমাদের পোষায়!’
দুপুর ২টার দিকে শাহাবাগ মোড়ের এ ঘটনা নিয়ে কথা বলতে চাই ওই ট্রাফিক পুলিশ আমিনুলের সাথে। তবে এ ঘটনা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান তিনি। ওদিকে, চালক কথা বললেও নাম-পরিচয় প্রকাশ করেননি।
সারাবাংলা/এসও/টিআর
** দ্রুত খবর জানতে ও পেতে সারাবাংলার ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে রাখুন: Sarabangla/Facebook