Wednesday 22 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

উপদেষ্টাদের কেউ কেউ একটি দলের পক্ষে কাজ করেন: ডা. তাহের

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২২ অক্টোবর ২০২৫ ২১:১৬ | আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২৫ ২১:২৫

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেন। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: সরকারে উপদেষ্টাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রধান উপদেষ্টাকে বিভ্রান্ত করেন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।

তিনি বলেন, ‘আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি আপনার প্রতি আমাদের আস্থা আছে। কিন্তু আপনার পাশে কিছু লোক আপনাকে বিভ্রান্ত করে এবং কোনো একটা দলের পক্ষে কাজ করে। আমরা মনে করি তাদের ব্যাপারে আপনার হুঁশিয়ার থাকা দরকার।’

বুধবার (২২ অক্টোবর) সন্ধ্যায় যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের পর অপেক্ষমান সাংবাদিকদের সঙ্গে তিনি এসব কথা বলেন।

ডা. তাহের বলেন, ‘আজকে আমরা (প্রধান উপদেষ্টার বাস ভবন যমুনায়) এসেছিলাম কয়েকটি বিষয়ে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য। কিছু বিষয়ে আমাদের মতামত ও এই সরকারের করণীয় বিষয়ে আলোচনা করার জন্য। দীর্ঘ কয়েকমাস ধরে বহু লোকের পরিশ্রমে আমরা যে ঐকমত্যে পৌছেছি, প্রায় ৮০টির ওপরে সংস্কার তার ভেতরে বেসিক কতগুলো পয়েন্টস আছে এখানে আমরা সকলে সই করেছি। এখন এটাকে আইনি ভিত্তি দিয়ে বাস্তবায়ন করা এবং এই সনদের মধ্যে যেগুলো আগামী নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সেগুলো আগে পাস করিয়ে তার ভিত্তিতে নির্বাচন দেওয়া।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘আমরা আজকে এটা বাস্তবায়নের জন্য উনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি, উনি আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছেন যে এটা যদি বাস্তবায়ন না হয় তাহলে পরিশ্রমতো পণ্ডশ্রম ছাড়া আর কিছু হবে না। আমরা বলেছি, একটি আদেশের মাধ্যমে এটাকে সাংবিধানিক মর্যাদা দিতে হবে। এটা সংবিধান নয়, এটা যে এক্সট্রা কনস্টিটিউশনাল এরেজমেন্ট এটা কোনো সরকার এ রকম পরিস্থিতিতে পড়লে দেওয়ার এখতিয়ার আছে। উনি আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছেন যে একটা আদেশের মাধ্যমে এটা হবে। কারণ কেউ কেউ বলছেন অধ্যাদেশ দেওয়ার জন্য, কিন্তু অধ্যাদেশ খুব দুর্বল। এগুলোকে সাংবিধানিক মর্যাদায় দেওয়ার মতো অধ্যাদেশ নেই। আদেশ হবে সংবিধান পরিবর্তনের সমতূল্য। অনেক এক্সপার্ট কমিটি বলেছেন একটি আদেশের মাধ্যমে এটাকে বৈধতা দিতে হবে। আর সেই আদেশের ওপরেই গণভোট হবে।’

ডা. তাহের বলেন, ‘গণভোটের ব্যাপারে বিএনপি কোনোভাবেই রাজি হচ্ছিল না। আমরা জোড় দিয়েছিলাম, শেষ পর্যন্ত বিএনপি রাজি হয়েছে। আমরা বিএনপিকে ধন্যবাদ জানাই। তারপরেও তারা একটা জটিলতা তৈরি করার চেষ্টা করছে। সেটা হলো গণভোট এবং জাতীয় নির্বাচন একদিনে করা। দুটি সম্পূর্ণ আলাদা। একটা জাতীয় নির্বাচনে জনপ্রতিনিধিরা কিভাবে দেশ চালাবেন সেটা। আর গণভোট হচ্ছে আমাদের কতগুলো সংস্কার কিভাবে সরকার পরিচালনা হবে, কিভাবে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। কিভাবে প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় থাকবেন, এসব মৌলিক বিষয়। এটার সঙ্গে নির্বাচনের কোনো রিলেসন নেই। সেজন্য আমরা বলেছি গণভোটের মাধ্যমে সংস্কারগুলো আলাদাভাবে পাস করতে হবে।’

গণভোট করার সময় নিয়ে বিএনপির প্রশ্নের জবাবে ডা. তাহের বলেন, ‘সময় আছে। এর আগে দেশে ২টা গণভোট হয়েছে, একটা ১৭ দিনের ব্যবধানে আর একটা ২১ দিনের ব্যবধানে। আমরা বলেছি নভেম্বর মাসের শেষের দিকে গণভোট করেন। তাতে একমাসের বেশি সময় আছে। তারপর আরও আড়াই মাস থাকবে জাতীয় নির্বাচন করার জন্য।’

খরচের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘গণভোটে বেশি খরচ হবে না। জাতীয় স্বার্থে কিছু টাকা খরচ করতে হবে।’

ইলেকশন কমিশনে, সচিবালয়ে, পুলিশ প্রশাসনে প্রায় ৭০/৮০ ভাগ অফিসার একটি দলের আনুগত্য করছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমরা গেলে তারা বলে প্রচণ্ড চাপ। তো চাপ কোথা থেকে আসে। একটি দল থেকে আসে। পুলিশেও একই অবস্থা আছে। তারপর আমাদের প্রোসিকিউটর যারা হয় তারা ৮০ ভাগ একটা বিশেষ দলের। অবশ্য ওনাদের কেউ বলেছেন এটা ৮০ না ৬৫। তো ৬৫ ও যদি হয় তাহলেতো অনেক বেশি হয়ে গেল। একটা দল ৬৫ আর বাংলাদেশ ৩৫। আমরা বলেছি সবার জন্য লেভেল প্লেইং ফিল্ড করেন। নির্বাচনের আগে যেখানে যেখানে রদবদল করা দরকার সেখানে রদবদল করেন। উনি বলেছেন, নিজে তত্ত্বাবধান করবেন এবং লটারি সিস্টেমে পোস্টিং করবেন। আমরা বলেছি, আমাদের আপত্তি নেই। তবে লটারির পেছনে যেন ভূত দাঁড়িয়ে না থাকে, সেটা দেখতে হবে।’

সংস্কারের আদেশের বিষয়ে একটা প্রশ্ন এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা বলে এসেছি যদি আইনে কাভার করে তাহলে আমরা চাই প্রধান উপদেষ্টা আদেশটি দেবেন, প্রেসিডেন্ট এটা দেবেন না। কারণ এই প্রেসিডেন্ট কাদের প্রোডাক্ট সেটা আপনারা জানেন। উনারা বলেছেন, আইনগত দিক পর্যালোচনা করবেন, যদি আইনে কোনো সমস্যা না হয় তাহলে প্রেসিডেন্ট নয় প্রধান উপদেষ্টাই এই ঘোষণাটা দেবেন।’

বিভিন্ন জায়গায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে এটা প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেছন জানিয়ে ডা. তাহের বলেন, ‘নোয়াখালীর কবিরহাট নামক জায়গায় ছাত্র শিবিরের মিটিংয়ে বিএনপির লোকেরা হামলা করেছে। উনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি যে, এরকম যদি এখনই শুরু হয়, তাহলে নির্বাচন কি হবে, মর্নিং শোজ দ্য ডে। সুতরাং আমরা বলে এসেছি এগুলো থামান, যদি না থামাতে পারেন তাহলে নির্বাচনে সংশয় ও অনিশ্চয়তা তৈরি হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পোলিং অফিসার, প্রিসাইডিং অফিসার, আনসার বাহিনী যারা ইলেকশন ডিউটিতে থাকে তারা ভোট দিতে পারে না। এর সংখ্যা প্রায় লাখ লাখ তাদের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য আমরা বলেছি। উনারা এ বিষয়ে খুশি হয়েছেন। বলেছেন গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টি নিয়ে তারা আলোচনা করবেন।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যাপারে আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘সেটা আদালতে বিচারাধীন। আমরা সুপ্রিম কোর্টের রায়ের অপেক্ষায় আছি। কোর্ট রায় দেওয়ার পর এই তত্ত্বাবধায়কের বিষয়টা আলোচনায় আনবো। সুপ্রিম কোর্টের অর্ডারে যদি কোনো ব্যত্যয় না হয় তাহলে এই সরকারই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকা পালন করবেন।’

এ সময় উপস্থিত ছিলেন- জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা এটিএম মাসুম ও মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান।

সারাবাংলা/এমএমএইচ/এইচআই
বিজ্ঞাপন

রিজার্ভ ছাড়াল ৩২ বিলিয়ন ডলার
২২ অক্টোবর ২০২৫ ২৩:০৫

আরো

সম্পর্কিত খবর