চট্টগ্রাম ব্যুরো: শেখ হাসিনা ও শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে ছাত্র-জনতা চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর করেছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) চট্টগ্রাম মহানগরের যুগ্ম সমন্বয়কারী আরিফ মঈনুদ্দিন। এনসিপি কার্যালয়টি দখল করেনি বলে জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার (২২ অক্টোবর) সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের নগরীর বিপ্লব উদ্যানে এক সংবাদ সম্মেলনে আরিফ মঈনুদ্দিন এসব কথা বলেন।
এর আগে, মঙ্গলবার দুপুরে নগরীর নিউমার্কেট মোড়ে দোস্ত বিল্ডিংয়ের চতুর্থ তলায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর করে। এরপর সেখানে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে ভাঙচুরের সময় আরিফ মঈনুদ্দিনকে দেখা যায়। তখন একদল যুবক কার্যালয়টির বাইরে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ভাঙচুর করছিল।
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর এনসিপি সেটা দখল করেছে বলে খবর প্রকাশিত হয়।
এর ব্যাখ্যা দিতে সংবাদ সম্মেলনে এসে আরিফ মঈনুদ্দিন বলেন, ‘২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যে জনক্ষোভ ছিল, সেই ক্ষোভের অংশ হিসেবে সারা বাংলাদেশে যত আওয়ামী লীগের কার্যালয় ছিল, সবগুলোই মোটামুটি ভাঙচুর করা হয়। বীর চট্টলার ছাত্র-জনতা চট্টগ্রামে যে আওয়ামী লীগের অফিসগুলো ছিল, সেগুলো ভাঙচুর করেছিল। এর ফলে প্রত্যেকটা অফিসই অকেজো ছিল। কিন্তু আমরা খবর পাচ্ছিলাম যে, অফিসগুলো নতুনভাবে সাজানো হয়েছে, চেয়ার বসানো হয়েছে, ব্যানার লাগানো হয়েছে এবং তারা নাকি সেখানে আসা-যাওয়া করে। আমরা সেখানে যেতে চাইনি। আমরা কোতোয়ালী থানাকে বলেছিলাম যে, আপনারা একটু দেখেন।’
‘সর্বশেষ আমরা গত ১৮ অক্টোবর খবর পেলাম যে, ওখানে শেখ রাসেলের জন্মদিন পালন করা হবে। আমরা সেদিন গিয়েছিলাম, কিন্তু সেখানে কাউকে আমরা পাইনি। মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) আমরা আবার খবর পেলাম যে, তারা (আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী) আবার সেখানে এসেছে। সেই খবর পেয়ে আমরা কাজীর দেউড়ির মোড় থেকে রওনা দিই। অনেকে তখন সেখানে চলে আসে। আমরা সেখানে পৌঁছে দেখতে পাই যে, সেটা ভাঙচুর করা হয়েছে।’
আওয়ামী লীগের কার্যালয় দখলের অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দখল হয়েছে বলতে যেটা বলা হচ্ছে, আমাদের বক্তব্য হচ্ছে- আমরা গিয়েছিলাম মূলত অফিসের যে সেটআপ, সেটা ভেঙে দেওয়ার জন্য। আসলে মেসেজটা পাবার পর ছাত্র-জনতাও সেখানে উপস্থিত হয়। আপনারা জানেন, বিচার প্রক্রিয়াটা যেভাবে আগাচ্ছে, ছাত্র-জনতার যে ক্ষোভ সেটা কিন্তু এখনও আছে। সেখানে শেখ হাসিনা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল দেখার পরে, বঙ্গবন্ধু অবশ্যই স্বাধীনতার একজন অন্যতম স্থপতি, কিন্তু গত ১৬ বছর শেখ হাসিনা শেখ মুজিবকে একটা অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে, মানুষের মুখ চেপে ধরার সময় বঙ্গবন্ধুকে ইউজ করা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধকে ইউজ করা হয়েছে, জুলুমের সময় মুক্তিযুদ্ধকে ইউজ করা হয়েছে, শেখ মুজিবকে ইউজ করা হয়েছে, ফলে মানুষের ক্ষোভটা এখনও আছে। এ কারণে ছাত্র-জনতা সেখানে ভাঙচুর করে।’
‘এরপর আমাদের ওপর যেভাবে হুমকি আসতে থাকে, ফেসবুকে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পেইজ থেকে পোস্ট করা হয় যে, ওদেরকে ধর-মার, এই-সেই, তখন আমরা সেখানে আমাদের অবস্থান ঘোষণা করেছি। আমরা দখল-টখল কিচ্ছু করি নাই। দখলের উদ্দেশ্য আমাদের ছিলও না, এখনও নেই। কিন্তু তারা যেভাবে আমাদের দেখে নেবার হুমকি দিচ্ছিল, তখন আমরা আমাদের অবস্থান ঘোষণা করে দেখিয়ে দিতে চেয়েছিলাম যে, আমরা কারা। আমরা বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছি। গণঅভ্যুত্থানের বিচার না হওয়ার আগপর্যন্ত তারা কীভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করবে, সেটা তারা করতে পারবে না, এটা আমরা দেখিয়ে দিতে চেয়েছিলাম।‘
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন মহানগর এনসিপির যুগ্ম সমন্বয়কারী এরফানুল হক। তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার আমরা দোস্ত বিল্ডিংয়ে গিয়ে তাদের (আওয়ামী লীগ) অফিস ব্যবহারের আলামত দেখতে পাই। সেখানে তাদের দলীয় লিফলেট, কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতিকৃতি, খাওয়ার ব্যবস্থা, থাকার ব্যবস্থা দেখতে পাই। ওই বিল্ডিংয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত যারা, তারা আমাদের জানিয়েছেন, গত ১২ থেকে ১৫ বছর ধরে গণহত্যাকারী দলটি বিনা ভাড়ায় ওই অফিস দখল করে বিভিন্ন অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। তারা এর থেকে পরিত্রাণের আশায় আমাদের পার্টির সাহায্য প্রার্থনা করেন। আমরা জাতীয় নাগরিক পার্টির পক্ষ থেকে দৃঢ়ভাবে ঘোষণা দিতে চাই চাই, আমাদের শরীরে এক বিন্দু রক্ত থাকা পর্যন্ত বাংলাদেশে আর ফ্যাসিবাদি সংগঠনের উত্থান ঘটতে দেব না।’
এ সময় চট্টগ্রাম মহানগর এনসিপির যুগ্ম সমন্বয়কারী রাফসান জানিসহ আরও কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন।