ঢাকা: রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি হিসাবে ভূমিকা রাখছে। গত এক বছরে রেমিট্যান্স আয় অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। সমাপ্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবাসী আয়ের রেকর্ড ৩ হাজার ৩২ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। চলতি অর্থবছরে একক মাস হিসেবে গত মার্চে ৩৩০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।
জানা যায়, স্বাধীনতার পর ১৯৭৫-৭৬ অর্থবছরে প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে রেমিট্যান্সের তথ্য প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১ কোটি ৬৩ লাখ ৫০ হাজার ডলার। সে হিসাবে গত ৪৯ বছরে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৪৫০ গুণ।
অন্যদিকে ১৯৭৫-৭৬ অর্থবছরে ডলার প্রতি বিনিময় হার ছিল ৭ টাকা ৯৯ পয়সা এবং গত জুনে ছিল ১২২ টাকা। সে হিসাবে আলোচ্য সময়ে ডলারের বিনিময় হার বেড়েছে ১ হাজার ৪২৭ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৫-৭৬ অর্থবছরের দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৬৩ লাখ ৫০ হাজার ডলার। এটি দুই অঙ্কের ঘরে প্রবেশ করে ১৯৭৭-৭৮ অর্থবছরে। তখন রেমিট্যান্স আয় দাঁড়ায় প্রায় ১০ কোটি ২০ লাখ ডলার। আর প্রবাসী আয় ধারিবাহিকভাবে বেড়ে ১০০ কোটিতে উন্নীত হয় ১৯৯৩-৯৪ অর্থবছরে। ওই অর্থবছর রেমিট্যান্স এসেছিল ১০৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার। ওই অর্থবছরে ডলারের গড় বিনিময় হার ছিল ৪৫ টাকার কাছাকাছি।
প্রবাসী আয় তিন অঙ্কের (১ হাজার ৯৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার) ঘরে প্রবেশ করে ২০০৯-১০ অর্থবছরে। ওই বছর প্রতি ডলারের মূল্য ছিল ৬৯ টাকা। তবে করোনাকালে ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবাসী আয় সংগ্রহ হয় ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ডলার। ওই সময় ডলার বিনিময় হার ছিল ৮৫ থেকে ৯০ টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, রেমিট্যান্স বাড়াতে আগের নগদ প্রণোদনা অব্যাহত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর অবস্থানের ফলে হুন্ডি প্রবণতা কমেছে এবং ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানো ব্যাপক হারে বেড়েছে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন সারাবাংলা-কে বলেন, ‘বৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স বৃদ্ধি, অর্থ পাচার হ্রাস এবং ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণের কারণে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। যা রিজার্ভ বাড়াতে ভূমিকা রাখছে এবং অর্থনীতিকে স্বস্তির বার্তা দিচ্ছে।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২১ সালের আগস্টে ডলারের দাম ছিল ৮৪ টাকা ৯৫ পয়সা। কিন্তু ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ডলারের সংকট দেখা দেয়। ফলে তরতর করে দামও বেড়ে যায়। আর ২০২৫ সালের জুনে ডলারের আনুষ্ঠানিক দর বেড়ে ১২২ টাকায় ওঠে। খুচরা বাজারে এটি বেড়ে ১৩১ টাকা পর্যন্ত ওঠে যায়। পরবর্তীতে রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় বাড়ায় ডলারের বাজার স্থিতিশীল হয়।