ঢাকা: স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী মর্যাদা) অধ্যাপক ডাঃ মো. সায়েদুর রহমান বলেছেন, ‘বিজ্ঞানের উপর আস্থা রেখে আপনারা আপনাদের শিশুদের টাইফয়েডের টিকা দিবেন, গুজবে কান দিবেন না। আমরা কোনো প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে বিশ্বাস করতে বলিনি। বিজ্ঞানের ও গবেষণার উপর নির্ভরশীল হতে বলেছি।’
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) সকাল ১১টায় রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ইপিআই, ইউনিসেফ বাংলাদেশ এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের যৌথ আয়োজনে টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচির সাফল্য এবং শক্তিশালীকরণের লক্ষ্যে আয়োজিত সভায় গুজবের বিরুদ্ধে এসব কথা বলেন তিনি।
সায়েদুর রহমান বলেন, ‘এই টিকা ট্রায়ালের পর আরো চার ধাপ পরীক্ষা করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ ও বাংলাদেশের গবেষণা সংস্থা এই টিকা যে নিরাপদ, সেটা নিশ্চিত করেছেন। আমরা কোনো প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে বিশ্বাস করতে বলিনি। বিজ্ঞানের ও গবেষণার উপর নির্ভরশীল হতে বলেছি।’
তিনি বলেন, ‘এই টিকার নিরাপত্তা বড় ধরনের গবেষণার মাধ্যমে নিরাপদ ও কার্যকর নির্ধারিত হয়েছে। এই তথ্য কমিটি বা ব্যক্তি নির্ধারণ করেনি। এটা গবেষণা নির্ধারণ করেছে। বিজ্ঞানের উপর আস্থা রেখে আপনারা আপনাদের শিশুদের টাইফয়েডের টিকা দিবেন।’
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ মো. আবু জাফর বলেন, ‘ক্যাম্পেইন শুরু হওয়ার পর যে গুজব শুরু হয়েছে। এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। যেকোনো টিকা নিলে সামান্য একটু সমস্যা হতে পারে। তাই এটা নিয়ে গুজব তৈরি করার কিছু নাই। শিশুদের নিরাপত্তায় প্রতিশ্রুতি বদ্ধ সরকার। গুজবে কান দিবেন না। যারা গুজব তৈরি করছে আমরা তাদের চিহ্নিত করেছি।’
তিনি আরও বলেন, টাইফয়েড টিকা সম্পূর্ণ নিরাপদ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত এবং সৌদি আরব হালাল সেন্টারকর্তৃক হালাল হিসেবে প্রত্যয়িত হয়েছে। এটি শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং টাইফয়েড জ্বরের গুরুতর জটিলতা থেকে সুরক্ষা দেয় এবং এটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি এবং টাইফয়েডের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। বাংলাদেশ ৭ম দেশ হিসেবে (লাইবেরিয়া, মালাউই, নেপাল, পাকিস্তান, সামোয়া এবং জিম্বাবুয়ে) টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচী শুরু করেছে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান। সভায় ইউনিসেফ বাংলাদেশের ডেপুটি রিপ্রেসেনটিটিভ দিপিকা শর্মা, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (জনস্বাস্থ্য অনুবিভাগ), স্বাস্থ্য অধিদফতরের যুগ্মসচিব (জনস্বাস্থ্য অধিশাখা), ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন দুটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এবং ইপিআই হেড কোয়াটার কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভায় টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচির অগ্রগতি এবং শক্তিশালীকরণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ উপস্থাপন করেন ডাঃ মোহাম্মদ শাহরিয়ার সাজ্জাদ, উপ পরিচালক, ইপিআই অ্যান্ড সারভিলেন্স।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি এই টিকা নিয়ে কিছু কিছু স্থানে বিভ্রান্তি দেখা যাচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন টিকা নিলে শিশু অসুস্থ হয়ে পড়বে, জ্বর হবে বা অন্য কোনো জটিলতা দেখা দেবে। আবার কেউ কেউ জানতে চাইছেন, এই টিকা কতটা নিরাপদ, কারা নিতে পারবে, এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কী, আগে নেওয়া টিকার সঙ্গে কোনো সংঘাত আছে কি না, কিংবা এটি কি কোভিড বা অন্য টিকার সঙ্গে একসাথে নেওয়া যায় কি না।
বিনামূল্যে ‘টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইন-২০২৫’-এর আওতায় ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সি প্রায় চার কোটি ৯০ লাখ শিশুকে এক ডোজ টিসিভি টিকা প্রদান লক্ষ্য মাত্রা ঠিক করা হয়। গত ১২ অক্টোবর থেকে এ টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে, যা ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত চলমান থাকবে। এই কর্মসূচিতে এখন পর্যন্ত ১ কোটি ৫০ লাখ ৫৪ হাজার ৬৫ জন শিশুকে এ টিকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে, চট্টগ্রামে ৩,৭৮৪,৭৫৮; ঢাকায় ২,৯৯২,১৭৩; রাজশাহীতে ১,৯৮৪,১৮৮; রংপুরে ১,৭২৯,৭০১; খুলনায় ১,৫২৭,৩০৪; ময়মনসিংহে ১,১৩০,৯১০; সিলেটে ১,০১০,১৫০ এবং বরিশালে ৮৯৪,৮৮১ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী প্রায় ৯০ লাখ মানুষ টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয় এবং তাদের মধ্যে ১ লক্ষ ১০ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে। গ্লোবাল বারডেন অব ডিজিজ ২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী, ঐ বছর বাংলাদেশে টাইফয়েড জ্বরে ৪,৭৮,০০০ জন আক্রান্ত হয়েছিল এবং ৮,০০০ জনের মৃত্যু ঘটেছিল। এদের মধ্যে ৬৮% ছিল শিশু। বাংলাদেশে ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সি শিশুরাই টাইফয়েড জ্বরে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে।
সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০২১ সালে বাংলাদেশে ৮০০০ মানুষ টাইফয়েড জ্বরে মৃত্যুবরণ করেছে, তার মধ্যে প্রায় ৬০০০ জন ১৫ বছরের কম বয়সি শিশু। দূষিত পানি ও অস্বাস্থ্যকর খাবারের মাধ্যমে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে।