Thursday 23 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

হঠাৎ কেন রাজনৈতিক বৈরিতায় মুখোমুখি জামায়াত-এনসিপি?

মো. মহসিন হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৩ অক্টোবর ২০২৫ ২২:২০

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

ঢাকা: জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী রাজনীতির মাঠে জামায়াতের মিত্র হিসেবে জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) দেখা হতো। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করতেন, ইসলামী আন্দোলন-জামায়াত ও এনসিপি আগামীতে নির্বাচনি জোট করবে। দল তিনটি সেদিকে অনেক দূর এগিয়েও গিয়েছিল। এক পর্যায়ে শোনা গেল, ইসলামী আন্দোলন, জামায়াত ও এনসিপিসহ ৮ দলের জোট হচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ করেই এনসিপি ঘোষণা দেয়, তারা সেই জোটে নেই।

এর পর জুলাই সনদে সই নিয়ে এনসিপি-জামায়াতের মধ্যে দূরত্ব বাড়ে। এনসিপি চেয়েছিল জামায়াতও তাদের মতো জুলাই সনদে সই করা থেকে বিরত থাকবে। কিন্তু তাদের আহবানে সাড়া না দিয়ে জুলাই সনদে সই করে জামায়াত। এর পরই শুরু হয় দুই দলের স্নায়ু-যুদ্ধ। সম্প্রতি এনসিপির আহবায়ক নাহিদ ইসলামের ফেসবুকে ইংরেজিতে দেওয়া একটি পোস্টকে কেন্দ্র করে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

বিজ্ঞাপন

গত ১৯ অক্টোবর নাহিদ ইসলাম তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে লেখেন, ‘সংখ্যানুপাতিক বা পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে জামায়াত যে আন্দোলন করছে তা সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়।’ তখন তার এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান জামায়াতের প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের। তিনি বলেন, ‘দায়িত্বশীল জায়গা থেকে নাহিদ ইসলামের পিআর নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর আন্দোলন ইস্যুতে এ ধরনের বক্তব্য অপ্রত্যাশিত ও অগ্রহণযোগ্য। যা কোনোভাবেই সমর্থন করে না জামায়াতে ইসলামী।’

জামায়াত ও এনসিপি সূত্র জানায়, এনসিপি চেয়েছিল জামায়াতও যেন জুলাই সনদে সই না করে। সে অনুযায়ী দলটির সঙ্গে একাধিকবার আলোচনাও করেছে তারা। এনসিপির জুলাই সনদে সই না করার সিদ্ধান্তকে সরকার ও বিএনপির ওপর চাপ রাখার কৌশল হিসেবে সমর্থন দেয় জামায়াত। কিন্তু জামায়াত নিজেরা এই চাপ-কৌশলে যুক্ত হতে রাজি হয়নি।

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে এনসিপির গণপরিষদ গঠনের দাবিকে জামায়াত সমর্থন করে না। আবার জামায়াতের নিম্নকক্ষে পিআরের দাবিকে এনসিপি সমর্থন করে না। এই মতপার্থক্য নিয়েও দু’দল এতদিন কাছাকাছি অবস্থানে ছিল। ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দলগুলোর সংলাপের সময় কার্যত জামায়াতকে সমর্থন দিয়ে আসছিল এনসিপি। কিন্তু তাদের সেই সখ্যতা এখন আর নেই। বক্তব্য বিবৃতিতে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টায় লিপ্ত।

দল দু’টির দীর্ঘদিনের বন্ধন ভেঙে এখন মুখোমুখি অবস্থানে। ধারণা করা হচ্ছে, নতুন বাংলাদেশের রাজনীতিতে এটি এক বড় মোড়। তাহলে এনসিপি কি বিএনপির দিকে ঝুঁকছে? এমনটাও অনেকে ভাবতে শুরু করেছেন। সুত্র বলছে, আসন ভাগাভাগি নিয়ে বিএনপির সঙ্গে এখনও দর-কষাকষি চলছে। এনসিপির চাহিদা মেটাতে গেলে বিএনপিকে বড়ধরনের ছাড় দিতে হবে। বিএনপি এমন ঝুঁকিতে যাবে কি না সেটাও বলা যায় না। কারণ, প্রার্থী মনোনয়নে বিএনপি এখন বেশ কৌশলী। কেউ আসন চাইলেই তারা দিতে রাজি নয়। যার আসনে বিজয়ের সম্ভবনা রয়েছে তাকেই মনোনয়ন দেবে। এ ক্ষেত্রে এনসিপির প্রার্থীদের জনপ্রিয়তার বিষয়টিও মাথায় রাখছে বিএনপি।

এদিকে গত ২১ অক্টোবর, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার এনসিপির উদ্দেশে বলেন, ‘তোমরা নতুন দল। জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে পাল্লা দিতে গেলে তোমাদের আরও বহুদূর যেতে হবে। জন্ম নিয়েই বাপের সঙ্গে পাল্লা দিয়ও না।’ নাহিদের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘আমি কারও নাম বলতে চাই না। তারা চাচ্ছেন, আমরা যেন তাদের সমালোচনা করি। কেউ তো তাদের নামই নেয় না। আমরাও আপনাদের এত আমলে নিই না।’

এদিকে নাহিদের বক্তব্যের রেশ কাটতে না কাটতে আবার আগুনে ঘি ঢেলেছেন এনসিপির আরেক শীর্ষ নেতা নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী। এনসিপির মুখ্য এই সমন্বয়ক তার ফেসবুক পেইজে লিখেন, ‘জামায়াতের রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার প্রশ্নই আসে না।’ মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) সন্ধ্যার পর নিজের ভেরিফায়েড পেইজে তিনি আরও বলেন, ‘জামায়াতের রাজনৈতিক দর্শন ও অতীত আচরণ বাংলাদেশের স্বাধীনতা, মানচিত্র ও জাতীয় চেতনার পরিপন্থী। তারা যতবার ইতিহাসের মঞ্চে ফিরে আসতে চেয়েছে, ততবারই জনগণের অন্তর থেকে প্রতিধ্বনি উঠেছে— এই দেশকে আর অন্ধকারে ফেরানো যাবে না। আমরা ন্যায়, মানবতা ও সংহতির বাংলাদেশে বিশ্বাস করি। এখানে প্রত্যেক নাগরিকের মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে। কিন্তু এই স্বাধীনতা কোনো ষড়যন্ত্রের ঢাল হতে পারে না। প্রশাসনে ছদ্মবেশে অনুপ্রবেশ, বিভাজনের রাজনীতি বা ধর্মের নামে রাষ্ট্র দখলের চেষ্টা এই মাটিতে আর সফল হবে না।’

জামায়াত ও এনসিপির একাধিক সূত্র জানায়, সনদ সই অনুষ্ঠানের দিনও (১৭ অক্টোবর) জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে ফোন করে অনুষ্ঠানে যাওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু সেই অনুরোধ রাখেননি নাহিদ। এদিন জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই জাতীয় সনদ সই হয়। বিএনপি, জামায়াতসহ ২৪টি দল সেদিন সনদে সই করে। আমন্ত্রিত হয়েও এনসিপি অনুষ্ঠানে যায়নি। এনসিপির সঙ্গে জামায়াতের দূরত্বকে এরই প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখছেন রাজনীতি সচেতন মহল।

জানতে চাইলে জামায়াতে ইসলামীর প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা কারও বিরুদ্ধে কিছু বলি না। যারা আমাদের বিরুদ্ধে বলে বা লেখে সেটার ব্যাখ্যা তাদেরকেই দিতে হবে। আমরা আগামীর বাংলাদেশকে সুন্দর করে গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছি। সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল, আগামীতেও সুসম্পর্ক রেখে কাজ করতে চাই। আমাদের কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই।’

জামায়াতে ইসলামী জুলাই সনদে সই করার কারণেই কি এনসিপি নেতারা আপনাদের বিরুদ্ধাচারণ করছে? এমন প্রশ্নের জবাবে এহসানুল মাহবুব বলেন, ‘জুলাই সনদে শুধু আমরাই সই করিনি, ২৫টি দল সই করেছে। এটার আইনি ভিত্তি দেওয়ার জন্য আমাদের দাবি ছিল, এখনো আছে। তার পরও এতদিন ধরে এত আলোচনার পর একটি সনদ তৈরি করা হয়েছে। সেটাতে সইয়ের মাধ্যমে একটা অর্জন হয়েছে। এখন আইনি ভিত্তির জন্য আমাদের দাবি অব্যাহত থাকবে। এ বিষয়ে সব দলের উচিত ধৈর্য ধারণ করা।’

তবে এ সনদ সই প্রশ্নে এনসিপির যুগ্ম-আহবায়ক সরোয়ার তুষার সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সংস্কার প্রশ্নে আপসহীন। এ বিষয়টি আমরা সিরিয়াসলি দেখছি। জামায়াত জুলাই সনদে সই করে আবার বলছে, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি না দিলে তারা সই প্রত্যাহার করবে। একবার কোথাও সই করলে সেটা কি আর প্রত্যাহার করা যায়? এটা তাদের দ্বিচারিতা।’

তাহলে জুলাই সনদে সই করা নিয়েই কি জামায়াত-এনসিপি দ্বন্দ্ব? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আইনি ভিত্তি ছাড়া আমরা সনদে সই করব না। কিন্তু, জামায়াত একই কথা বলে আবার সই করেছে।’

সারাবাংলা/এমএমএইচ/পিটিএম
বিজ্ঞাপন

সাভারে স্টার টেকের নতুন শাখা
২৩ অক্টোবর ২০২৫ ২৩:৪৬

আরো

সম্পর্কিত খবর