ঢাকা: গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, সমবায় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সমাজে সভ্যতা ফিরিয়ে আনতে হবে। শিক্ষা, চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান তৈরিসহ যেসব প্রতিষ্ঠান সমাজ বিনির্মাণে কাজ করবে এমন তা তৈরিতে ক্রেডিট ইউনিয়নকে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা ও ছেলে-মেয়েদের শিক্ষা ব্যয় নিয়ে অবিভাবকরা উদবিগ্ন! জন গুরুত্বপূর্ণ এ দুটি খাত আজ ব্যাবসায়ীদের হাতে চলে গেছে।’
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর আফতাবনগরস্থ সম্প্রীতি ভবনে ড. আখতার হামিদ খান মিলনায়তনে আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক সমবায় বর্ষ উদযাপনের অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় সমবায় প্রতিষ্ঠান প্রস্তাবিত ‘দি সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড’ এই সেমিনারের আয়োজন করে। ‘উন্নত বিশ্ব বিনির্মাণে সমবায়’ শীর্ষক এই সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সিএসএল এর সভাপতি ও সম্প্রীতি কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী এমদাদ হোসেন মালেক। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সরকারের সাবেক সচিব মো. হুমায়ুন খালিদ।
সেমিনারে মুখ্য আলোচক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এবং বিশিষ্ট গবেষক ও শিক্ষাবিদ ড. এম এম আকাশ বলেন, ‘উন্নত পৃথিবী গড়তে হলে ধনী গরীবের বৈষম্য কমাতে হবে। কেউ থাকবে ৮ তলায় আর কেউ থাকবে গাছ তলায়, এভাবে উন্নত পৃথিবী গড়া সম্ভব না। ক্রেডিট ইউনিয়নের কোঅপারেশনের মাধ্যমে ধনি গরীবে দুরুত্ব কমাতে হবে।’
এ সময় বিশেষ অতিথি সমবায় অধিদফতরের অতিরিক্ত নিবন্ধক মো. আহসান কবীর (ইপিপি) এবং ঢাকা বিভাগের যুগ্ম নিবন্ধক মো. কামরুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের সভাপতি ও সম্প্রীতি কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী এবং সিএসএল এর সভাপতি এমদাদ হোসেন মালেক বলেন, ‘ক্রেডিট ইউনিয়ন সাধারণের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা চাই ক্রেডিট ইউনিয়নের সহয়োগীতায় সরকার ও সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা এগিয়ে আসবেন।’
সরকারের সাবেক সচিব মো. হুমায়ুন খালিদ মূল প্রবন্ধে বলেন, ‘জাতিসংঘের কাছে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়েছে যে, স্থানীয় পর্যায়ে টেকসই উন্নয়নে সমবায় ব্যবস্থা শুরু থেকেই গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর ভূমিকা পালন করে আসছে। তাই ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্ব এজেন্ডা এসডিজি অর্জনে সমবায় পদ্ধতিকে পাশে পাওয়ার জন্য অনেক আগেই জাতিসংঘের পক্ষ থেকে ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেটিভ অ্যালায়েন্স এর প্রধানকে আহ্বান জানানো হয়।’
পৃথিবীর সর্ববৃহৎ অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রে ২০০৭-০৮ অর্থবছরে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দাকালে একমাত্র সমবায়ভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাই সগৌরবে টিকে ছিল এবং মুনাফা অর্জন করতেও সক্ষম হয়েছিল। বিশ্বে বর্তমান প্রায় তিন কোটি সমবায় প্রতিষ্ঠানে ১০০ কোটির বেশি মানুষ প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে যুক্ত। ওয়ার্ল্ড কো-অপারেটিভ মনিটর এর ২০২৩ সালের তথ্য অনুযায়ী বিশ্বের বৃহাদাকারের ৩০০ সমবায় প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত বার্ষিক আয় প্রায় ২ হাজার ৪০৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। টাকায় হিসাব করলে যা দাঁড়ায় ৩ লাখ ১২ হাজার ১৭৩ কোটি টাকা।
এ ছাড়া সমবায় খাতে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে প্রায় ২ কোটি ৮০ লাখ মানুষের, যা বিশ্বে কর্মসংস্থানের আওতাধীন মানুষের প্রায় ১০ শতাংশ। বাংলাদেশে বর্তমানে রয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ৭১টি নিবন্ধিত সমবায় সমিতি, যার সদস্য প্রায় ১ কোটি ২৫ লক্ষাধিক। এসব সমবায় সমিতির মাধ্যমে মোট ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৮৯৬ জন মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে এবং মোট মূলধন দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি।
২০২৩-২৪ সনের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই খাত থেকে অর্জিত নিট মুনাফা ৪৯৬৬ দশমিক ৪৫ লাখ টাকার বেশি। সমবায় সমিতিগুলো এখন কৃষি, মৎস্য, পোলট্র্রি, গবাদিপশু, চামড়াশিল্প, আবাসন, পরিবহন, ক্ষুদ্রশিল্প, স্বল্প আয়ের মানুষের মধ্যে ঋণদান, দুগ্ধ ও মাংস উৎপাদন, বিপণন, সঞ্চয়, বিমা ও সেবার মতো মোট ৩৫টি শ্রেণিতে বিভক্ত।
উল্লেখ্য, গত ২০১৫-১৬ অর্থ বছর থেকে সমবায় প্রতিষ্ঠান সরকারকে করদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবেও গণ্য হয়েছে।