ঢাকা: রমজানকে কেন্দ্র করে আমদানির জন্য এলসি খোলার চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় চলতি সপ্তাহে ডলারের দর ঊর্ধ্বমুখী আকার ধারণ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষিত দরের সর্বোচ্চ সীমাও মানছে না অনেক ব্যাংক।
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) বেসরকারি খাতের গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও কমিউনিটি ব্যাংকের নগদ ডলার বিক্রির ঘোষিত দর ছিল ১২৪ টাকা ২৫ পয়সা। যা দেশের ইতিহাসে ব্যাংকে এ যাবৎকালে ঘোষিত সর্বোচ্চ রেকর্ড। আর খোলা বাজারের ডলারের ঘোষিত ক্রয়মূল্য ছিল ১২৪ টাকা এবং বিক্রয়মূল্য ছিল ১২৫ টাকা ২০ পয়সা। এখানে লক্ষ্যণীয় যে, ব্যাংকের ডলার রেট এবং কার্ব মার্কেটের রেট দীর্ঘদিন পর কাছাকাছি অবস্থান করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে দেখা গেছে, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও কমিউনিটি ব্যাংকের পরই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেটে নগদ ডলার বিক্রি করে ন্যাশনাল ব্যাংক, আল আরাফা ইসলামী ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, আইএফআইসি, কমিউনিটি ব্যাংক, ও সিটিজেন ব্যাংক। তাদের নগদ ডলারের মূল্য ছিল ১২৪ টাকা। আর এবি ব্যাংক ও উত্তরা ব্যাংকের রেট ছিল যথাক্রমে ১২৩ টাকা ৯৫ পয়সা ও ১২৩ টাকা ৯০ পয়সা।
তবে ব্যাংকগুলোর মধ্যে অগ্রণী ব্যাংকের বিক্রয় মূল্য (বিসি সেল) ছিল সর্বোচ্চ ১২২ টাকা ৯০ পয়সা, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, সিটিজেন ব্যাংক ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের বিক্রয় মূল্য (বিসি সেল) ছিল ১২২ টাকা ৭০ পয়সা। যদিও একইদিনে আন্তঃব্যাংক রেট ১২২ টাকা ৫০ পয়সা। তবে গত সপ্তাহ পর্যন্ত ব্যাংকগুলো ১২২ টাকার নিচে ডলার বিক্রয় করেছিল বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লষণে উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, বৃহস্পতিবার আন্তঃব্যাংকে ডলারের গড় দর ছিল সর্বনিম্ন ১২২ টাকা ১০ পয়সা, সর্বোচ্চ ১২২ টাকা ৫০ পয়সা এবং গড় দর (এয়েট অ্যান্ড এভারেজ) ছিল ১২২ টাকা ৩৯ পয়সা। বুধবার গড় দর ছিল ১২২ টাকা ৭০ পয়সা, মঙ্গলবার আন্তঃব্যাংকে ডলারের দাম ছিল ১২১ টাকা ৯৫ পয়সা, সোমবারে ছিল ১২১ টাকা ৯০ পয়সা, রোববার ছিল ১২১ টাকা ৮৭ পয়সায়। আর ১৬ অক্টোবর (সপ্তাহের শেষদিন) ছিল ১২১ টাকা ৮৪ পয়সা। সেই হিসাবে গত ৭ দিনের ব্যবধানে ডলারের দর বেড়েছে ৩ টাকা ৯১ পয়সা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘রমজানকে কেন্দ করে এলসি খোলা বেড়েছে। কিন্তু প্রবাসীদের ডলার পাঠানোর গতি কিছুটা মন্থর। এটা ঠিক হয়ে যাবে সামনে। আর নগদ ডলার তো অনেক ব্যাংক কম বিক্রি করে। তবুও ব্যবধান বেশি হলে তা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করবে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক তিন মাসের ব্যবধানে প্রায় আড়াই বিলিয়ন ডলার কিনেছে। রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় বাড়ার কারণে ব্যাংকগুলোতে ডলার সরবরাহ যথেষ্ট রয়েছে।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক ইঙ্গিত দিয়েছে যে ডলারের দাম বেশি রাখতে চায়। পাশাপাশি আমাদিন ও সরকারি পেমেন্ট বেড়ে যাওয়ার কারণেও ডলার দর বেড়েছে।’
একটি রাষ্ট্রয়ত্ত ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক নিলামের মাধ্যমে ডলার কিনেছে। আর এলসি পেমেন্ট করতে হচ্ছে। তাই ব্যাংকগুলোর ডলার দরকার হয়েছে। তাতে কিছুটা দাম বেড়েছে। শুধু আমদানির জন্য ডলার দর বেড়েছে, বিষয়টি তেমনও নয়।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে দেশে ঋণপত্র (এলসি) খোলার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার, যা আগস্টের ৫ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার।
মানি চেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের এর সভাপতি এস এম জামান বলেন, ‘ডলারের দর খোলাবাজারে তেমন একটা বাড়েনি। ব্যাংকে বেড়েছে বলে শুনেছি। ব্যাংকের তথ্য বলছে, আজ খোলাবাজারে ডলারের ক্রয় মূল্য ছিল ১২৪ টাকা ২০ পয়সা এবং বিক্রয় মূল্য ছিল ১২৫ টাকা ২০ পয়সা। গত সপ্তাহে প্রাইসবোর্ডে ডলারের ক্রয় রেট ১২৩ টাকা ৮০ পয়সা এবং বিক্রয় দর ছিল ১২৪ টাকা ৮০ পয়সা।