ঢাকা: বেসরকারি খাতে ঋণের ঐতিহাসিক নিম্নমুখী প্রবৃদ্ধি দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ। একই সঙ্গে ব্যাংক ঋণের ওপর সরকারের অব্যাহত উচ্চ নির্ভরতা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
অতি সম্প্রতি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ‘সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ’ (জিইডি) কর্তৃক প্রকাশিত ‘ইকোনমিক আপডেট অ্যান্ড আউটলুক’-এর অক্টোবরের প্রতিবেদনে সরকারকে এমন সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের গত আগস্টে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৩৫ শতাংশে নেমেছে। এটি ঐতিহাসিকভাবে নিম্নমুখী এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রত্যাশিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কম। এটি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ ও সম্প্রসারণে আগ্রহ হারাচ্ছেন। এর মূলে রয়েছে উচ্চ সুদের হার, সতর্ক ঋণনীতি এবং রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা। আর এর ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগও সংকুচিত হচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজস্ব ঘাটতি মেটাতে ব্যাংকের ওপর সরকারের অব্যাহত উচ্চ নির্ভরতা বেসরকারি খাতকে বাধাগ্রস্ত করছে। এর ফলে উৎপাদনশীল বেসরকারি বিনিয়োগের জন্য খুব কম জায়গা থাকছে। গত আগস্টে সরকারি খাতে নিট ঋণ ১৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেড়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, তবে যেহেতু নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে, সেহেতু আগামী কয়েক মাসে অর্থনীতিতে নির্বাচনী কার্যক্রম দেখা যাবে। এতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা কিছুটা বাড়তে পারে।
প্রতিবেদনে টেকসই ও শক্তিশালী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য বেসরকারি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলা হয়েছে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা এবং ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির জন্য সহায়ক পরিবেশ গড়ে তোলা প্রয়োজন।
প্রতিবেদনে মূল্যস্ফীতির বিষয়ে বলা হয়েছে, মূল্যস্ফীতি এখনও উচ্চ থাকলেও গত কয়েক মাসে স্থিতিশীলতার লক্ষণ দেখা দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর মুদ্রানীতি ধীরে ধীরে মূল্যস্ফীতি কমাতে সাহায্য করেছে, তবে এতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বড় ক্ষতির মুখে পড়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মূল্যস্ফীতি গত মে মাসে ৯ দশমিক ০৫ শতাংশ থেকে জুনে ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশে নেমে আসার পর সেপ্টেম্বরে সামান্য বেড়ে ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা এক মাস আগে ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ ছিল।
প্রতিবেদনে আর্থিক খাত প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের (২৫-২৬ অর্থবছর) প্রথম কয়েক মাসে আমানতের বৃদ্ধি কিছুটা ধীর হলেও ওঠা-নামার ধারা বজায় রয়েছে, যা জনসাধারণের আস্থা ফেরানোর জন্য নেওয়া সংস্কারের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে। আমানতের ধীর বৃদ্ধি মূলত উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে ঘটে, যা বাস্তব আয় কমিয়ে দেয় এবং পরিবারগুলোর সঞ্চয় করার ক্ষমতা সীমিত করে। তবে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ বেশি আসা এবং সরকারের পদক্ষেপে আমানত কিছুটা বেড়েছে।