ঢাকা: সুস্থ ও মেধাবী প্রজন্ম গঠনের জন্য গর্ভকালীন সময়ে পুষ্টি ও মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা এখন সময়ের দাবি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি সুস্থ ভ্রূণের জন্ম নিশ্চিত করতে তরুণ প্রজন্মকে শারীরিক ও মানসিকভাবে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত বিশ্রাম, মানসিক প্রশান্তি ও নিয়মিত চিকিৎসা পরামর্শ অনুসরণ করলে জন্মগত জটিলতা অনেকাংশে কমানো সম্ভব। বিশেষ করে হবু মা-বাবার মানসিক স্থিতিশীলতা ভ্রূণের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই আগামীর প্রজন্মকে জন্ম থেকেই সুস্থ, সচেতন ও সক্ষম হয়ে ওঠার জন্য পরিবার ও সমাজকে একসঙ্গে কাজ করার আহবান জানিয়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁও সমাজসেবা অধিদপ্তরের অডিটরিয়ামে আয়োজিত ‘ন্যাশনাল নিউট্রিশন ও ওয়েলনেস সামিট’ বিষয়ক দু’দিনব্যাপী কনফারেন্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এ আহ্বান জানান। সম্মিলিতভাবে এ কনফারেন্সের আয়োজন করে স্বপ্নপুরী কল্যান সংস্থা, নিরাপদ অ্যালায়েন্স, আনকোরা, মিশন গ্রীন বাংলাদেশ, হার্টওয়াইজ এবং নিউট্রিফিকেশন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেন, ‘আগামীর বাংলাদেশ ও নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে তরুণ সমাজকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ হতে হবে।’ তিনি বলেন, একটি সুস্থ ভ্রূণের জন্ম নিশ্চিত করতে পুষ্টি ও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে তরুণ প্রজন্মকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে।
তরুণ প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শারমীন এস মুরশিদ বলেন, ‘ইসলাম আমাদের প্রথম শিক্ষা দেয়—সকলকে নিয়ে চলা, সকলকে সম্মান করা এবং গ্রহণ করা। সকল ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষকে নিয়েই আমাদের বাংলাদেশ।’
তিনি তরুণদের উদ্দেশ্যে আরও বলেন, ‘তোমাদের মধ্যেই বোধোদয় ঘটাতে হবে, সামাজিক কাজের জন্য প্রস্তুত হতে হবে। তাহলেই তোমরা সমাজে ঐক্য স্থাপন করে দেশকে এগিয়ে নিতে পারবে।’
শারমীন এস মুরশিদ উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের অর্ধেকের বেশি জনগোষ্ঠী তরুণ। তাই দেশের ভবিষ্যৎ তাদের হাতেই নির্ভর করছে। তিনি তরুণ সংগঠকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘দুর্নীতিগ্রস্ত সমাজকে নতুন করে গড়তে হবে—একটি সুস্থ, সুন্দর ও স্বপ্নময় বাংলাদেশ তৈরির লক্ষ্যে। মুক্তিযুদ্ধের সময় যে স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম, সেই স্বপ্ন পূরণে তরুণরাই আমাদের আশার প্রতীক।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সিরাক-বাংলাদেশ এর নির্বাহী পরিচালক এস এম সৈকত বলেন, ‘বাজেট বা সম্পদ ছাড়া কোনো নীতি কেবল কবিতার মতো শোনায়। বাস্তব প্রভাব আনতে হলে, পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক প্রতিশ্রুতিগুলোকে অবশ্যই অর্থায়ন, বাস্তবায়ন এবং তরুণদের কেন্দ্র করে সাজাতে হবে। একটি সুস্থ বাংলাদেশ শুধু হাসপাতালেই গড়ে ওঠে না, বরং আমাদের রান্নাঘর, শ্রেণিকক্ষ ও কমিউনিটিতেই গড়ে ওঠে — যেখানে নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবার হবে সবার অধিকার।’
তিনি আরও বলেন, পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তার নীতিমালাগুলো যদি বাজেট ও সম্পদহীন হয়, তবে তা শুধু শব্দে সীমাবদ্ধ থাকে। কার্যকর পরিবর্তনের জন্য পুষ্টি ও খাদ্য-নিরাপত্তার অঙ্গীকারগুলোকে অবশ্যই অর্থায়ন, কার্যকর বাস্তবায়ন এবং তরুণদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. সাইদুর রহমান খান। এ সময় নিরাপদ অ্যালায়েন্সরে ভাইস চেয়ারম্যান ফাতিন সাদাব লিয়ান, সাধারণ সম্পাদক মাসুম মুহাম্মদসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।