Friday 24 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বছর ব্যবধানে পেঁয়াজ ও রসুনের দাম কমলেও ক্রেতাকে ভুগিয়েছে তেল-চাল-ডাল

এমদাদুল হক তুহিন সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৪ অক্টোবর ২০২৫ ২৩:৫৯ | আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২৫ ০০:১৬

ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

ঢাকা: গত এক বছরের ব্যবধানে দেশে সয়াবিন তেল, চাল, আটা, ময়দা, মসুর ডাল ও গুড়া দুধ ভোক্তাদের হাঁপিয়ে তুলেছে। তবে কিছুটা স্বস্তি এনে দিয়েছে পেঁয়াজ ও রসুন। আর সবজির বাজার ক্রেতাদের ভুগিয়েছে প্রায় সারাবছর।

গত এক বছরে সয়াবিন তেল লিটারে ১৯ থেকে ২৫ টাকা, প্রতি কেজি চাল ৫ থেকে ৮ টাকা, আটা ৫ থেকে ১০ টাকা, ময়দা ৫ টাকা, মসুর ডাল ১০ থেকে ২৫ টাকা ও গুড়া দুধ কেজিতে ৪০ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আর গত বছরের তুলনায় বাজারে এখন পেঁয়াজের দাম কেজিতে কম। কেজিতে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। রসুন কেজিতে ২০ থেকে ৭০ টাকা কম রয়েছে।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যকে ভিত্তি করে চলতি বছর ও গেল বছরের ২৩ অক্টোবরের বাজারদর বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। আর শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) বাজার ঘুরে প্রকৃত চিত্রে বাজারে কিছু কিছু পণ্যের দাম আরও বেশি দেখা গেছে।

বিজ্ঞাপন

টিসিবির তথ্যমতে, বছর ব্যবধানে খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে লিটারে ১৯ থেকে ২৪ টাকা, বোতলজাত সয়াবিনের দাম বেড়েছে ২৪ থেকে ২৫ টাকা ও পাম ওয়েলের দাম বেড়েছে ৭ থেকে ১৩ টাকা। সামগ্রিকভাবে গেল এক বছরে চালের দাম কেজিতে ৫ থেকে ৮ টাকা বেড়েছে। বছর ব্যবধানে কেজিতে খোলা আটার দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ থেকে ৭ টাকা ও প্যাকেটজাত আটার দাম বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা। তবে খোলা ময়দার দাম কেজিতে ৫ টাকা বাড়লেও প্যাকেটজাত ময়দার দাম স্থির রয়েছে।

ছোট ও মাঝারি দানার মসুর ডালের দাম বছর ব্যবধানে কেজিতে ১০ থেকে ২৫ টাকা বাড়লেও বড় মসুর ডালের দাম কমেছে কেজিতে ১০ টাকা। আর ছোলার দাম কমেছে কেজিতে ২৫ টাকা। আর গুড়া দুধের দাম কেজিতে ৪০ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন সারাবাংলাকে বলেন, ‘চালের দাম আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে। আর সামগ্রিকভাবে বাজারের অবস্থা আগের মতোই (গত সরকার), কোনো পরিবর্তন নেই। আগে তদারকি কিছুটা ছিল, এখন একেবারেই নেই। যারা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ায়, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। যার কারণে অপরাধীরা এখন বীরদর্পে তাদের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। সেই কারণে বাজারে কোনো পরিবর্তন নেই। বরং আরও উলটো হয়েছে। এখন আগের তুলনায় দাম বাড়ার যে প্রক্রিয়া তা আরও বেড়েছে। বেশ কিছু পণ্যের দাম আগের চেয়ে অনেক বেশি রয়েছে। এ সময়ে হাতোগোনা দু একটি ছাড়া বেশিরভাগ পণ্যের দামই বেড়েছে।’

জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের চাটখিল রাইস এজেন্সির মালিক বেলাল হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘সরকার চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বাজার এখন স্থির রয়েছে। নতুন করে চালের দাম বাড়েনি আবার কমেওনি। বাজার অনেকটা থমথমে রয়েছে। আমদানির সিদ্ধান্ত না নিলে বাজার আরও অস্থির হয়ে উঠতো। গত বছরের তুলনায় চালের দাম অনেকটাই বেড়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এখন মৌসুমের সময়ই চালের দাম বেড়ে যায়। আগে এটি কখনও হতো না। কারণ করপোরেট প্রতিষ্ঠান গুলো বা কোম্পানিগুলো ধান ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই বেশি দামে তা কিনতে শুরু করে। পরে মিলাররা আর কম দামে ধান কিনতে পারে না। আবার কোম্পানিগুলো চাল অনেকদিন মজুদ করে রাখতে পারে। যে করপোরেট কোম্পানিগুলো রয়েছে তারা চাইলে একাই চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আমরা মনে হয়, এর প্রভাব পড়েছে বাজারে।’

টিসিবির তথ্যমতে, সরু চাল (নাজির ও মিনিকেট) এখন বাজারে ৭২ থেকে ৮৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। গত বছর একই সময়ে বিক্রি হয়েছে ৬৪ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে। বছর ব্যবধানে এ জাতীয় চালের দাম বেড়েছে ৫ থেকে ৮ টাকা। মাঝারি চাল (পাইজাম ও আটাশ) এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে, গত বছরের এই সময়ে বিক্রি হয়েছে ৫৫ থেকে ৬২ টাকা কেজিতে। বছর ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৫ থেকে ৮ টাকা। মোটা চাল (স্বর্ণা/চায়না ইরি) ৫৫ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে, গত বছর দাম ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। বছর ব্যবধানে দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ টাকা।

টিসিবির তথ্যমতে, সামগ্রিকভাবে গেল এক বছরে চালের দাম কেজিতে ৫ থেকে ৮ টাকা বেড়েছে। ২৩ অক্টোবরের তথ্যকে ভিত্তি ধরে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

আটা ও ময়দার বাজার প্রসঙ্গে টিসিবির তথ্য বলছে, আটা ও ময়দার মধ্যে খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫২ টাকা কেজিতে, গত বছর দাম ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। অর্থাৎ খোলা আটার দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ থেকে ৭ টাকা। প্রতি কেজিতে প্যাকেট আটা এখন ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে, গত বছর বিক্রি হয়েছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। প্যাকেটজাত আটার দাম বছর ব্যবধানে বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা। খোলা ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা, গত বছর এ সময়ে দাম ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। খোলা ময়দার দাম বছর ব্যবধানে বেড়েছে কেজিতে অন্তত ৫ টাকা। আর প্যাকেটজাত ময়দার কেজি ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা, গত বছরও একই দাম ছিল। ফলে বছর ব্যবধানে প্যাকেট জাত ময়দার দাম বাড়েনি। অর্থাৎ বছর ব্যবধানে কেজিতে খোলা আটার দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ থেকে ৭ টাকা ও প্যাকেটজাত আটার দাম বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা। তবে খোলা ময়দার দাম কেজিতে ৫ টাকা বাড়লেও প্যাকেটজাত ময়দার দাম স্থির রয়েছে।

ভোজ্য তেলের বাজারের তথ্যে টিসিবি বলছে, ভোজ্য তেলের মধ্যে লুজ সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭২ থেকে ১৮০ টাকা লিটারে, গত বছর দাম ছিল ১৫৩ থেকে ১৫৬ টাকা। অর্থাৎ লুজ সয়াবিন তেলের দাম লিটারে বেড়েছে ১৯ থেকে ২৪ টাকা। বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম এখন লিটারে ১৮৯ থেকে ১৯৫ টাকা, গত বছর দাম ছিল ১৪৮ থেকে ১৪৯ টাকা। অর্থাৎ বছর ব্যবধানে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে লিটারে ২৪ থেকে ২৫ টাকা। লুজ পাম ওয়েল লিটারে এখন বিক্রি হচ্ছে ১৫৫ থেকে ১৬২ টাকা, গত বছর দাম ছিল ১৪৮ থেকে ১৪৯ টাকা। লিটারে লুজ পামওয়েলের দাম বেড়েছে ৭ থেকে ১৩ টাকা। অর্থাৎ বছর ব্যবধানে খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে লিটারে ১৯ থেকে ২৪ টাকা, বোতলজাত সয়াবিনের দাম বেড়েছে ২৪ থেকে ২৫ টাকা ও পাম ওয়েলের দাম বেড়েছে ৭ থেকে ১৩ টাকা।

টিসিবির তথ্য থেকে আরও দেখা গেছে, বড় মসুর ডাল এখন ৯৫ থেকে ১১০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে, গত বছর ১০৫ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বছর ব্যবধানে বড় মসুর ডালের দাম কমেছে কেজিতে ১০ টাকা। মাঝরি মসুর ডাল এখন ১২০ থেকে ১৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে, গত বছর দাম ছিল ১১০ থেকে ১১৫ টাকা। বছর ব্যবধানে দাম বেড়েছে ১০ থেকে ২৫ টাকা। ছোট দানার মসুর ডাল এখন ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে, গত বছর দাম ছিল ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা। বছর ব্যবধানে দাম বেড়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকা। ছোলা এখন বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজিতে, গত বছর বিক্রি হতো ১২৫ থেকে ১৩৫ টাকা। ছোলার দাম কমেছে কেজিতে ২৫ টাকা। অর্থাৎ ছোট ও মাঝারি দানার মসুর ডালের দাম বছর ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ২৫ টাকা বাড়লেও বড় মসুর ডালের দাম কমেছে কেজিতে ১০ টাকা। আর ছোলার দাম কমেছে কেজিতে ২৫ টাকা।

টিসিবির তথ্যমতে, গত বছর এই সময়ে দেশি পেঁয়াজ ১১৫ থেকে ১৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজিতে। বছর ব্যবধানে পেঁয়াজ ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কমে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। দেশি রসুন গত বছরের এই সময়ে ২২০ থেকে ২৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৪০ টাকা কেজিতে, বছর ব্যবধানে দাম কমেছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। আমদানি করা রসুন ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজিতে গত বছর বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ২০০ টাকা কেজিতে, বছর ব্যবধানে কমেছে ২০ থেকে ৭০ টাকা।

এ ছাড়া প্যাকেটজাত গুড়া দুধের মধ্যে গত বছর ডানোর প্রতি দুধ ৭৪০ থেকে ৮২০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৭২০ টাকা কেজিতে। তবে ডিপ্লোমা এখন বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ থেকে ৯২০ টাকা কেজিতে, গত বছর ৭৯০ থেকে ৮৪০ টাকায় কেনা যেতো। একই চিত্র ফ্রেশ ও মার্কসেরও। গুড়া দুধের দাম কেজিতে ৪০ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

এদিকে, বাজারে শীতের আগাম সবজি উঠছে বেশ কয়েক মাস ধরেই। শিমের পর এ তালিকায় এখন যুক্ত হয়েছে ফুলকপি, পাতাকপি ও মুলা। এ চারটি সবজির দামই এখন তুলনামূলকভাবে আগের চেয়ে কম রয়েছে। তবে প্রচলিত সবজিগুলো দাম আগের মতো বাড়তি রয়েছে। যদিও অনেক সবজির দামই কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা কমেছে। শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) রাজধানীর কারওয়ানবাজার, বিজয় সরণীর কলমিলতা, মহাখালীর বউবাজার ও শেওড়াপাড়ার ইব্রাহিমপুর বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে বেশ কিছুদিন ধরেই শীতকালের সবজি শিম বিক্রি হচ্ছে। এখনো প্রতি কেজি সিম বিক্রি ১২০ থেকে ১৬০ টাকা কেজিতে। কিছুদিন আগেও ২০০ টাকা কেজিতে শিম বিক্রি হয়েছে। বাজারে এখন প্রায়ই দেখা মিলছে মাঝারি বা ছোট আকারের ফুলকুপি। ছোট সাইজের প্রতিটি ফুলকপি কিছুদিন আগেও ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকায়। ছোট সাইজের পাতাকপি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। আর প্রতি কেজি মুলা বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়।

বিজ্ঞাপন

আরো

এমদাদুল হক তুহিন - আরো পড়ুন
সম্পর্কিত খবর