Saturday 25 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

১২ বছর জেল খেটে বের হওয়া যুবদল কর্মীকে গুলি করে হত্যা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৫ অক্টোবর ২০২৫ ১৯:৫৩ | আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২৫ ২১:০৫

গুলিতে নিহত যুবদলকর্মী মোহাম্মদ আলমগীর। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম ব্যুরো: জেলার রাউজান উপজেলায় দিনের বেলায় প্রকাশ্যে নিজ বাড়ির অদূরে গুলি করে এক যুবদল কর্মীকে খুন করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, মোটরসাইকেল চালিয়ে যাওয়ার পথে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা দুর্বৃত্তরা তাকে লক্ষ্য করে অতর্কিতে গুলি ছোড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

শনিবার (২৫ অক্টোবর) বিকেলে রাউজান পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চারাবটতল এলাকার রশিদারপাড়া সড়কে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।

নিহত মোহাম্মদ আলমগীর (৫০) ওরফে আলম রশিদারপাড়া এলাকার আব্দুস সাত্তারের ছেলে। তিনি চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও রাউজানের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম আকবর খোন্দকারের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিভিন্ন মামলায় প্রায় ১২ বছর তিনি কারাগারে ছিলেন বলে খোন্দকারের পক্ষে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

রাউজান থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘আজ (শনিবার) দুপুরে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নিজ বাড়ির কাছাকাছি এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন আলমগীর। সেখানে দুপুরের খাবার খেয়ে মোটরসাইকেলে চড়ে একাই ফিরছিলেন। রশিদারপাড়া মসজিদের সামনে দেওয়ালঘেরা একটি কবরস্থানে আগে থেকেই তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে একদল দুর্বৃত্ত লুকিয়ে ছিল। আলমগীর মোটরসাইকেলে করে ওই এলাকা অতিক্রমের সময় তাকে লক্ষ্য করে গুলি করে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।’

ওসি জানান, হত্যাকাণ্ডের পর দুর্বৃত্তরা আলমগীরের মোট সাইকেলও নিয়ে গেছে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে কবরস্থানসংলগ্ন সড়কের পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা আলমগীরের মরদেহ উদ্ধার করে। সেখানে দুই জোড়া জুতা পড়ে ছিল। যেখানে মরদেহ পাওয়া যায়, তার আশপাশে রক্ত জমাটবাঁধা অবস্থায় দেখতে পায় পুলিশ। পুলিশ মরদেহটি উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে।

হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে রাজনৈতিক কোনো সংশ্লিষ্টতা পেয়েছেন কী না? জানতে চাইলে ওসি মনিরুল বলেন, ‘নিহত ব্যক্তি যুবদল করতেন। তবে কোনো পদ-পদবি ছিল না। যুবদলের কর্মী ছিলেন। রাজনৈতিক বিরোধের বিষয় থাকতে পারে, সেটা আমরা তদন্ত করে দেখছি। হত্যাকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।’

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাউজানে ফেরা বিএনপির নেতাকর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। একভাগে আছেন গোলাম আকবর খোন্দকারের অনুসারীরা এবং আরেকভাগে আছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীরা। দুই নেতাই সংসদ নির্বাচনে রাউজান থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী। রাজনৈতিক বিরোধে রাউজানে এখন পর্যন্ত এক ডজনেরও বেশি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।

এদিকে আলমগীরকে খুনের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে এক বিবৃতিতে গোলাম আকবর খোন্দকার বলেন, ‘রাউজান পৌরসভা যুবদল নেতা মোহাম্মদ আলমগীর আওয়ামী শাসনামলে দীর্ঘ ১২ বছর কারাভোগের পর সম্প্রতি কারামুক্ত হয়েছিল। আজ সে স্বাধীন, সার্বভৌম দেশের এ সময়ে রাউজানের বিরাজমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নির্মমভাবে খুন হলো। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত প্রকৃত খুনি ও খুনের নির্দেশদাতা যে বা যারা, তারা যত বড় গডফাদারই হোক না কেন, চিহ্নিত করে গ্রেফতারের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। রাউজানের আতঙ্কিত জনসাধারণকে নিরাপত্তা দিতে হবে।’

এদিকে আলমগীর খুনের বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি শুনেছি, আলইম্যা নামে এক ডাকাতকে কারা জানি ‍গুলি করে মেরে ফেলেছে। সে বিএনপি কিংবা যুবদল করতো বলে আমি জানি না। লোকে তাকে আলইম্যা ডাকাত নামে চিনে। এলাকার লোকজনের কাছ থেকে তার আমলনামা নিলে জানা যাবে, সে ডাকাতিসহ অনেক অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল।’

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম
বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর