Saturday 25 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জোটে থাকলেও ভোট দলীয় প্রতীকে
ছোট দলের বড় নেতাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ

মো. মহসিন হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৫ অক্টোবর ২০২৫ ২২:৪৪ | আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২৫ ২২:৪৭

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

ঢাকা: ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ (আরপিও)-এর সংশোধিত খসড়া অনুমোদন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে এবারের আরপিওতে কিছু সংশোধনী এনেছে ইসি। আর এতেই বিভিন্ন জোট শরিকের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। এর আগের অভিজ্ঞতা বলছে, জোটের ছোট দলগুলোর ভোট না থাকলেও বড় দলের প্রতীকের ওপর ভর করে সংসদে প্রবেশ করেছেন অনেকেই। অনেকে আবার মন্ত্রিত্বও বাগিয়েছেন। কিন্তু এবার সেই সুবিধায় বাগড়া দিয়েছে ইসি। নতুন আরপিও অনুযায়ী, জোট করলেও নিবন্ধিত দলগুলোকে নিজ দলের প্রতীকে নির্বাচন করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

২৩ অক্টোবর রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘নির্বাচনি জোট হলেও দলীয় প্রার্থীদের নিজেদের প্রতীকে নির্বাচন করতে হবে; যাতে ভোটাররা ক্লিয়ার আইডিয়া পান, তিনি কোন দলের প্রার্থী।’ কিন্তু সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক নেতারা বলছেন, নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচন বাধ্যতামূলক করার বিষয়টি ছোট দলগুলোর নেতাদের জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশের ৫৪ বছরের ইতিহাসে যে ১২টি জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে সেগুলোতে সবসময়ই জোটের রাজনীতি সামনে এসেছে। নির্বাচন এলে যেমন বড় দলগুলো জোট ভারি করতে ছোট দলের পেছনে ছোটে। তেমনি নির্বাচনি বৈতরণী পার হয়ে সংসদে যাওয়ার সিঁড়ি হিসেবে বড় দলগুলোর প্রতীকের ওপর নির্ভর করতে হয় ছোট দলগুলোকে।

বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা নিয়ে এমপি হয়েছেন জাতীয় পার্টির (জেপি) আনোয়ার হোসেন মনজু, ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা রাশেদ খান মেনন, জাসদের রেজাউল করিম তানসেন, হাসানুল হক ইনু, মাইন উদ্দিন খান বাদল, ফজলে হোসেন বাদশা, তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি, ওয়ার্কাস পার্টির মোস্তফা লুৎফুল্লাহ, ইয়াসিন আলী, কল্যাণ পার্টির মেজর জেনারেল অবসরপ্রাপ্ত সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমসহ অনেক হেভিওয়েট নেতা। আর ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেনন ইসলামী ঐক্যজোটের নেতা মুফতি ফজলুল হক আমিনী, একই দলের মাওলানা আবদুল হালিম, মাওলানা আবদুল মালেক, জাতীয় পার্টির আন্দালিভ রহমান পার্থ, গণফোরাম নেতা প্রমুখ।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা আবদুল হালিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘কোনো দলকে আমরা ছোট করে দেখি না। ছোট হোক, বড় হোক, রাজনৈতিক দল মানেই দল। নিজেদের প্রতীকে নির্বাচন করলে দলের সক্ষমতা ও পরিচিতি বাড়বে। একটি রাজনৈতিক দলের সবসময়ই নিজেদের প্রতীকে নির্বাচন করা উচিত। আর একটি দল যখন কোনো জোটে যাবে সেই জোট থেকে যিনি মনোনয়ন পাবেন তার প্রতীক যাই হোক তাকে জেতানোর জন্য অন্যদলগুলো পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে কাজ করবে।’

এনপিপির চেয়ারম্যান ও ১১ দলীয় সমমনা জোটের সমন্বয়ক ফরিদুজ্জামান ফরহাদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রতীক ব্যবহার করতে না পারলে জোটের দরকার কি? তাহলে জোট প্রথা বন্ধ করে দেওয়া হোক। দেশে অনেক সমস্যা, সেগুলোর সমাধান না করে প্রতীক নিয়ে সরকারের মাথা ব্যাথা কেন। কোন দল কোন প্রতীকে নির্বাচন করবে, সেটা ওই দলের বিষয়, সরকারের নয়।’ তিনি প্রশ্ন করে বলেন, ‘বিএনপি যদি তাদের প্রতীক অন্য দলকে দেয় সমস্যা কোথায়? এর আগেও বহু নির্বাচনে এমন হয়েছে।’

অনেক দলের আবার নিবন্ধন নেই। কিন্তু, তারা জোটের সঙ্গে আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে ছিল। সেরকম একটি দল ‘বাংলাদেশ জাতীয় দল’। দলটির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার নিজস্ব মার্কা নেই। আমার দলের যারা মনোনয়ন পাবেন, সবাই ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করব। জুলাই আন্দোলনে ক্রিয়াশীল অনেক দলের নিবন্ধন নেই। তারা বিএনপির প্রতীকে নির্বাচন করতে পারবে। তারপরও আমি মনে করি, আরপিও সংশোধন একটি দুরভিসন্ধিমূলক কাজ। এই মূহূর্তে আরপিও সংশোধন করে ওনারা দলগুলোর হাত-পা বেঁধে ফেলতে চাচ্ছেন। এটা কারও কাম্য নয়। জোট শরিক অন্য কোনো প্রতীকে নির্বাচন করতে পারবে না- এটা কোনো সংস্কার কাজ না। সংস্কার মানে যা ইচ্ছা তাই করবেন? যেভাবে ছিল সেটাই ভালো ছিল।’

সংশোধনী নিয়ে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট রফিক সিকদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘আরপিও সংশোধনে খারাপ কিছু দেখি না। নিবন্ধিত দলগুলো নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচন করলে কোনো ক্ষতি হবে বলে মনে করি না। প্রতিটি দলের স্বকীয়তা থাকা উচিত। আমি মনে করি, নিবন্ধিত দলগুলো ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে দলের পরিচিতি বাড়বে।’

বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ। তিনি ২০০৮ সালে জোট শরিক বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। এবার নির্বাচন কমিশন আরপিও সংশোধন করায় সেই সুযোগ আর থাকছে না। এ বিষয়ে সারাবাংলার এই প্রতিবেদকে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি রাজনৈতিক দলগুলোর ওপরে ছেড়ে দেওয়া উচিত ছিল। যারা জোট করবে, তারাই বসে সিদ্ধান্ত নেবে, কে কোন প্রতীকে নির্বাচন করবেন।’

সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন পাওয়া বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আরপিও সংশোধনের ফলে রাজনৈতিক দলগুলো যদি নিজেদের প্রতীকে নির্বাচিত হয়ে আসতে পারেন সেটা তাদের জন্য ভালো। অন্যদিকে বড় দলের সঙ্গে জোট করে তাদের মার্কা ছাড়া যখন আমরা ছোট দলগুলো নির্বাচন করতে যাব তখন ওই বড় দলের নেতারা নির্বাচনি কাজে কিছুটা হলেও শিথিলতা দেখাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের প্রধান অংশীজন হলো রাজনৈতিক দলগুলো। সেই দলগুলোকে বাইরে রেখে উপদেষ্টা পরিষদ এই সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। কারণ, আরপিও সংশোধনে রাজনৈতিক দলগুলোই যদি মতামত দিতে না পারে তাহলে এটা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।’ এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের দ্রুত রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি দলের নেতা সারাবাংলাকে বলেন, ‘সরকারের এই নতুন সিদ্ধান্ত অনেক নিবন্ধিত দলের জন্য ক্ষতি হলো। কারণ, কেন্দ্রীয় অনেক বড় নেতা আছেন যারা নিজ প্রতীকে নির্বাচন করলে বিজয়ী হওয়া কঠিন হবে। এমনকি অনেক হেভিওয়েট প্রার্থী পরাজিতও হতে পারেন।’ আরপিও সংশোধনীতে নেওয়া এই সিদ্ধান্তটি ঠিক হয়নি বলে অভিমত তার।

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর