রংপুর: রংপুর বিভাগের প্রায় ৩০ হাজার গ্রাহকের ১২১ কোটি টাকারও বেশি বিমা দাবি নিষ্পত্তির দাবিতে ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের রংপুর জোনাল অফিস অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন।
রোববার (২৬ অক্টোবর) মধ্যরাতে অফিসের কর্মকর্তারা আসবাবপত্র বিক্রি করে পালিয়ে যেতে পারেন–এমন সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে বিকেল থেকে গ্রাহকরা কার্যালয় অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এতে নগরীর জাহাজ কোম্পানি-স্টেশন রোডের যানজট সৃষ্টি হয়।
সূত্র জানিয়েছে, কোম্পানির এই অবস্থা দীর্ঘদিনের আর্থিক অনিয়মের কারণে। কোম্পানিটি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং ইনস্যুরেন্স ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রেগুলেটরি অথরিটি (আইডিআরএ) দ্বারা বহুল সমালোচিত।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, সকালে অফিসের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী চেয়ার-টেবিল, লকারসহ দামি সরঞ্জাম বিক্রি করে বাইরে নেওয়ার চেষ্টা করলে স্থানীয় গ্রাহকরা সন্দেহ করে অফিসে গিয়ে মালপত্র আটক করেন এবং চারজন কর্মকর্তাকে আটকে রাখেন। খবর ছড়িয়ে পড়লে অফিসের সামনে গ্রাহকদের ভিড় জমে এবং দুপুর গড়িয়ে বিকেলে জামাল মার্কেটের নিচে নগরীর প্রধান সড়ক অবরোধ করে তারা বিক্ষোভ শুরু করেন।
রংপুর বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত রংপুরের আট জেলায় ২৯ হাজার ৫৯৬ জন গ্রাহকের বীমার মেয়াদ শেষ হয়েছে। নিয়মানুযায়ী ৯০ দিনের মধ্যে বিমা নিষ্পত্তির কথা থাকলেও গ্রাহকরা বছরের পর বছর ধরে শুধুই আশ্বাস পাচ্ছেন। ২০২১ সালে বিএসইসি কোম্পানির বোর্ড পুনর্গঠন করে এবং ২০২২ সালে বেক্সিমকো গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে আনার পরে সম্পদ বিক্রি করে দাবি পরিশোধের চেষ্টা চলছে।
ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা অভিযোগ করেছেন, কোম্পানিটি দীর্ঘদিন ধরে তাদের কষ্টের টাকা ফেরত দিচ্ছে না। নগরীর ভগিবালা এলাকার বৃদ্ধা আকলিমা বেগম বলেন, ‘স্বামী নেই, কষ্ট করে জমানো টাকা দুই বছর পরও পাইনি। অফিস নিয়ে পালাতে চায় তারা।’
আদর্শপাড়ার আজিজার রহমান বলেন, ‘রিকশা চালিয়ে ১২ বছরের জমানো টাকা ফেরত চাই, না হলে পথে বসব।’ হারাগাছের সায়েম বাদশা বলেন, ‘বৃদ্ধ বয়সের জন্য ১০ হাজার টাকা করে জমিয়েছিলাম, দুই বছর অপেক্ষা করেও পাইনি। সরকার দাবি মেনে টাকা ফেরত দিক।’
মহানগর কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আতাউর রহমান বলেন, “ঘটনাস্থলে গিয়ে গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হচ্ছে।”
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই বিক্ষোভ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। এক ফেসবুক পোস্টে স্থানীয় বাসিন্দা রাকিব হোসেন লিখেছেন, ‘ফারইস্টের এই অবস্থা গ্রাহকদের কষ্ট বাড়াচ্ছে। সরকারি হস্তক্ষেপ জরুরি।’