চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম বন্দরের কোনো টার্মিনালের মালিকানা বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা সরকারের নেই বলে জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। কতিপয় সংবাদমাধ্যমের অসত্য তথ্য সাধারণ জনগণ ও বন্দর ব্যবহারকারীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে উল্লেখ করে এ বিষয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করা হয়েছে।
রোববার (২৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো চট্টগ্রাম বন্দর সচিবের সই করা এক বিশেষ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বক্তব্য এসেছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের চিফ পারসোনাল অফিসার মো. নাসির উদ্দিনের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘সাম্প্রতিক সময়ে অত্যন্ত উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনালসমূহ পরিচালনার ব্যাপারে কতিপয় সংবাদমাধ্যম সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, কল্পনাপ্রসূত, অসত্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্য উপস্থাপন করছে। এ সকল অসত্য, ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর তথ্য সাধারণ জনগণ ও বন্দর ব্যবহারকারীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে।’
চট্টগ্রাম বন্দরের সকল টার্মিনাল, জেটি, ইয়ার্ড ও অন্যান্য সকল স্থাপনার একক মালিকানা বন্দর কর্তৃপক্ষের উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, ‘চট্টগ্রাম বন্দরের কোনো টার্মিনালের মালিকানা ইতোপূর্বে কখনোই কোনো বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা বন্দর কর্তৃপক্ষ বা সরকারের ছিল না বা এখনো নেই। বাংলাদেশের প্রচলিত বিধিবিধান প্রতিপালন সাপেক্ষে শুধুমাত্র লাইসেন্সধারী হিসেবে অপারেটর নিয়োগ প্রক্রিয়া পরিচালিত হচ্ছে, যা সম্পূর্ণরূপে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও জনবান্ধব।’

সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দর ভবন অভিমুখে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের মিছিলে বাধা দেয় পুলিশ। ফাইল ছবি: সারাবাংলা
গণমাধ্যমে ধারণাভিত্তিক সংবাদ পরিবেশন হচ্ছে দাবি করে বন্দর কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, ‘বিভিন্ন গণমাধ্যমে কোনো বিষয়ে প্রকৃত তথ্য সম্পর্কে সম্পূর্ণ জ্ঞাত না হয়ে মনগড়া বা ধারণাভিত্তিক বা অনির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাতে সংবাদ পরিবেশন করা হলে তা জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দর সম্পর্কিত মনগড়া, অবাস্তব সংবাদ বন্দরের স্বাভাবিক কর্মপরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, যা বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতির হৃদপিন্ড চট্টগ্রাম বন্দর এবং বাংলাদেশের উন্নয়নে বড় অন্তরায়।’
‘বন্দরের সুষ্ঠু কর্ম পরিবেশ বজায় রাখা এবং ক্রমবর্ধমান উন্নতির অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখাসহ দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে সকলের সহযোগিতা একান্ত কাম্য।’ চট্টগ্রাম বন্দর সম্পর্কিত সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে আরও বেশি পেশাদারিত্ব বজায় রেখে দায়িত্বশীল হওয়ার জন্য এবং অসত্য ও বিভ্রান্তিকর সংবাদ পরিবেশন থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দরের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি), বে-টার্মিনাল ও লালদিয়ার চর পরিচালনার জন্য তিনটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ডিসেম্বরের মধ্যে এ সংক্রান্ত চুক্তি হওয়ার কথা ইতোমধ্যে সরকারের নীতিনির্ধারকদের ভাষ্যে এসেছে।
শুরু থেকেই চট্টগ্রাম বন্দরের স্থাপনা বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেওয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ বন্দরনগরীর নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। বামপন্থী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ঢাকা-চট্টগ্রামে প্রায় প্রতিদিন বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছে। ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র (টিইউসি), স্কপসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনও রাজপথে নেমেছে।
এ অবস্থায় গত ৯ অক্টোবর চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজের জারি করা এক গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ১১ অক্টোবর থেকে পরবর্তী ৩০ দিন চট্টগ্রাম বন্দর সংলগ্ন বারেক বিল্ডিং মোড়, নিমতলা মোড়, ৩ নস্বর জেটি গেট, কাস্টমস মোড়, সল্টগোলা ক্রসিংসহ বন্দর এলাকায় যেকোনো ধরনের রাজনৈতিক, শ্রমিক বা সামাজিক সংগঠনের মিছিল, সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন, পথসভা নিষিদ্ধ করা হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের আমদানি-রফতানি কার্যক্রম নির্বিঘ্ন ও নিরবচ্ছিন্ন রাখতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে এতে উল্লেখ করা হয়।