চট্টগ্রাম ব্যুরো: সবুজ সংকেত কিংবা অন্তত ইঙ্গিত হলেও পাবার আশা নিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ডাকে চট্টগ্রাম থেকে হাজির হয়েছিলেন বিএনপির ৬০ জনেরও বেশি মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতা। তবে শেষ পর্যন্ত কাউকে কোনো সংকেত দেওয়া হয়নি। বরং, ঐক্য রক্ষার তাগিদ দিয়ে তারেক রহমান বলেছেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে যাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে, তার পক্ষে যেন সবাই ‘এক পরিবারের সদস্য’ হয়ে মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
এ অবস্থায় মনোনয়নের জন্য চট্টগ্রামের বিএনপি নেতা ও তাদের অনুসারী-সমর্থকদের অপেক্ষার পালা বাড়ল। তবে নির্বাচনের ডামাডোল আরও ঘনিয়ে আসার আগে মাঠে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের প্রতিযোগিতা যে আরও জোরালো হচ্ছে, এই বার্তা স্পষ্ট হলো।
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে রোববার (২৬ অক্টোবর) বিকেলে বৈঠক করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তিনি লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন।
জানা গেছে, চট্টগ্রামের মোট ১৬টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ১৪টি আসনে অর্ধশতাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীকে বৈঠকে ডেকে নেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় দফতর থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের প্রত্যেকের জাতীয় পরিচয়পত্র, ছবি এবং যে আসন থেকে মনোনয়ন চান তার তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
তবে চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-হালিশহর) ও চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসন থেকে কোনো মনোনয়নপ্রত্যাশীকে বৈঠকে ডাকা হয়নি। এর মধ্যে বন্দর-পতেঙ্গা আসন বিএনপির হেভিওয়েট নেতা, জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর ‘নিজস্ব আসন’ হিসেবে পরিচিত। এ আসন থেকে তিনি একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। বন্দরকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিচিত এ আসনে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বেশ গ্রহণযোগ্যতা ও নিয়ন্ত্রণ আছে।
অন্যদিকে ডবলমুরিং-হালিশহর আসনের আওতাধীন কাট্টলীতে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর পৈতৃক বাড়ি। ওই আসনেও পারিবারিকভাবে তাদের ভালো অবস্থান আছে। আলোচনা আছে, দুই আসনের একটিতে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আরেকটিতে ছেলে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ইসরাফিল খসরু চৌধুরী প্রার্থী হবেন।
বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন জানিয়েছেন, বৈঠকে চট্টগ্রামের ১৪টি আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ৬০ জনেরও বেশি নেতা অংশ নিয়েছেন।
এদের মধ্যে বিভিন্ন আসনে উল্লেখযোগ্যরা হলেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার, কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও প্রয়াত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, নগর কমিটির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ, চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, নগর কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, দক্ষিণ জেলার আহ্বায়ক এম ইদ্রিস মিয়া, সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম, সাবেক সংসদ সদস্য গাজী শাহজাহান জুয়েল ও সরওয়ার জামাল নিজাম, এস এম মামুন মিয়া, কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ডা. মহসিন জিল্লুর করিম, সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর ছেলে দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পা।
মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘চট্টগ্রামের দুটি আসন বাদে বাকি ১৪টি আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয় বৈঠক করেছেন। সবার উদ্দেশে উনি খুবই হৃদয়গ্রাহী, আবেগময় একটি বক্তব্য দিয়েছেন। পরিষ্কার বার্তা দিয়েছেন- দলকে সন্তানতুল্য হিসেবে যেন সঠিকভাবে পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণ করি। আমাদের মধ্যে ঐক্যের যেন কোনো ঘাটতি না হয়, ঐক্যটা যেন ধরে রাখি। যাকে-ই মনোনয়ন দেওয়া হোক না কেন, সবাই যেন এক পরিবারের সদস্যের মতো করে মাঠে নেমে কাজ করেন এবং ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করেন।’
কোনো প্রার্থীকে ‘সবুজ সংকেত’ দেওয়া হয়েছে কী না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গ্রিন, রেড-কোনো সিগনালই দেওয়া হয়নি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যে বক্তব্যটা দিয়েছেন, সেটাতেই সবকিছু পরিষ্কার হয়ে গেছে। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা সবাই দলের অবস্থানটা পরিষ্কার বুঝতে পেরেছেন এবং হাসিমুখেই সবাই বের হয়েছেন।’
সর্বশেষ ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিয়েছিল। তখন চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনে মোট ১২১ জন দলের কাছে মনোনয়ন চেয়েছিলেন।
বিএনপি নেতারা জানান, ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের একচ্ছত্র আধিপত্যের মধ্যে বৈরি পরিস্থিতিতে বিএনপি অংশ নিয়েছিল। এরপরও গড়ে প্রতি আসনে বিএনপির অন্তত আটজন করে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতনের পর এবার অনুকূল পরিবেশে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। ফলে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা আরও বাড়বে বলে তাদের ধারণা।