সুনামগঞ্জ: জেলার তাহিরপুর উপজেলার দলীয় সমাবেশে কর্মীর থেকে দশ লাখ টাকার চেক গ্রহণ করে সমালোচনার মুখে পড়েছেন তাহিরপুরের বিএনপি নেতা কামরুজ্জামান কামরুল। অনেকে বলছেন- সস্তা জনপ্রিয়তা দেখাতে এসব করেন তিনি। কেউ আবার অভিযোগ করছেন, তিনি মুখে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বললেও প্রাকৃতিক সম্পদসহ সরকারি সম্পদ লুটের সঙ্গে জড়িতরা তার পৃষ্ঠপোষকতা পায়। কেউ আবার উন্মোচন করছেন তার দুর্নীতি ও কারসাজি।
শনিবার (২৫ অক্টোবর) বিকেলে নির্বাচনি এলাকা জামালগঞ্জ উপজেলার সাচনা বাজারে আয়োজিত এক সমাবেশ মঞ্চে বিএনপির কর্মী নূর কাসেম নির্বাচনে খরচের জন্য কামরুজ্জামানের হাতে ১০ লাখ টাকার একটি চেক তুলে দেন। পরে সেই চেক তিনি রোববার (২৬ অক্টোবর) বিকেলে ফেরত দেন। তবে ব্যাংক কর্মকর্তা জানায়, নূর কাসেমের অ্যাকাউন্টে রয়েছে তিন হাজার ৮৩৪ টাকা।
কামরুজ্জামান কামরুল সুনামগঞ্জ- ১ (জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, মধ্যনগর ও তাহিরপুর) আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। তার এই চেক নেওয়ার ঘটনা সুনামগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গনে ‘হট টপিক’। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও চলছে ব্যাপক সমালোচনা। কেউ আবার এর সঙ্গে বালু উত্তোলনের কারসাজির বিষয়ও তুলে এনেছেন।
অভিযোগ উঠেছে, সুনামগঞ্জের সবচেয়ে বড় বালু মহাল রূপের নদী যাদুকাটায়। এই পাহাড়ি নদীতে অবৈধ বোমা মেশিন, সেভ মেশিনসহ নানা খননযন্ত্র দিয়ে বালু উত্তোলন করা হয়। গত বছরের পাঁচ আগস্টের পর কামরুলসহ তাহিরপুরের রাজনীতিবিদরা ওখানকার আওয়ামী লীগ সমর্থক ইজারাদারদের অতিরিক্ত টোল আদায়ে বাধা দেন। প্রতিফুট বালু ১৫ টাকার স্থলে নয় টাকা আদায়ে বাধ্য হয় ইজারাদার। তখন স্থানীয়ভাবে প্রশংসিত হয় এই উদ্যোগ। কয়েকদিন নয় টাকা আদায়ের পর, আবার ১১ টাকা আদায় করতে থাকে ওই ইজারাদার কর্তৃপক্ষ। নয় টাকা থেকে ১১ টাকা করতেও ওখানকার রাজনৈতিক নেতাদের সম্মতিতেই করা হয় বলে জানায় স্থানীয় বিএনপি নেতারা।
জামালগঞ্জের সমাবেশে কামরুলের হাতে ১০ লাখ টাকার চেক প্রদানকারী বিএনপি কর্মীর সামাজিক ভাবমূর্তি গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় এক বিএনপি নেতা। পাটলাই নদীতে ‘চরণদার’ (কয়লা বুঝাই বাল্কহেড একটি নির্দিষ্ট সীমানায় পৌঁছে দেওয়া যার কাজ) হিসেবে কাজ করা তাহিরপুরের মন্দিয়াতা গ্রামের নূর কাসেমের দাবি, এখন তিনি এলাকায় ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। তিনি বলেন, ‘আমার হিসেবে ১০ লাখ টাকা না থাকলেও আমি জননেতা কামরুলকে দেওয়া চেকের বদলে প্রয়োজনে জমি-বাড়ি দিয়ে দেব।’
তবে সমালোচনার বিষয়ে কামরুজ্জামান কামরুল বললেন,‘আমি দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করি বলেই আমার শত্রু বেশি। যাদুকাটায় প্রতিফুট বালুর ১৫ টাকার রয়েলিটি ছিল বিগত সময়ে। আমার চেষ্টায় নয় টাকা হয় পাঁচ আগস্টের পর। যাদুকাটা বালু মহালে আমি ব্যবসা করি না। অতিরিক্ত রয়্যালিটি বা চাঁদা আদায়ের বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা সভায়ও কথা বলেছি। নৌ-ঘাটগুলোতে টোল আদায় নির্ধারণের চার্ট টাঙানোর দাবি করেছি। অনৈতিক কাজে আমার যোগসূত্র থাকলে সেটি করা সম্ভব হতো না। যারা যুক্ত তারা কথা বলেন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘দলীয় মনোনয়ন পেলে ইনশাল্লাহ্ আমি জয়ী হব এবং তাহিরপুরে লুটের কোনো সিন্ডিকেট থাকবে না।’ জামালগঞ্জে দলীয় কর্মীর দেওয়া চেক সরলভাবে তিনি গ্রহণ করেছেন দাবি করে বলেন, ‘ওই কর্মীকে চিনি না। তার চেক সঙ্গে সঙ্গেই ফেরত দিতে চেয়েছিলাম। সমাবেশে দিলে মন খারাপ হতো, সেজন্য রোববার বিকেলে চেক ফেরত দিয়েছি।’
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন বললেন, ‘জামালগঞ্জের সমাবেশে দলীয় কর্মীর দেওয়া ১০ লাখ টাকার চেক কামরুজ্জামান কামরুলের গ্রহণ করা ঠিক হয়নি। দলীয় নেতাদের আরও অনেক অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে।’