ঢাকা: আগামীতে সরকার গঠন করতে পারলে বিএনপি অর্থনীতির নতুন মডেল তৈরি করবে বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। যেখানে সরকারের হাত থেকে নিয়ন্ত্রণের পরিমাণ কমিয়ে এনে বেসরকারি খাতকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও দুর্নীতি কমিয়ে কাজের গতি ফিরিয়ে আনতে এই উদ্যোগ নেওয়া হবে।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) ইকোনমিক ফোরাম সামিটে অংশ নিয়ে এ মন্তব্য করেন তিনি। রাজধানীর লেকশোর হোটেলে দুই দিনব্যাপী সামিটের আয়োজন করেছে ভয়েস রিফর্ম, বি রেইন, ফিনটেক সোসাইটি, ইনোভিশন ও নাগরিক কোয়ালিশন নামের পাঁচটি সংগঠন।
সামিটে অংশ নিয়ে আমীর খসরু বলেন, ‘৩১ দফা বিএনপির প্রতিশ্রুতি। কেউ ঐকমত্য হোক বা না হোক বিএনপি বাস্তবায়ন করবে। নির্বাচনি জোটের শরিকদের পছন্দ মতো প্রতীকে ভোট করতে দেওয়া উচিত। রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন না হলে কোনো সংস্কারই কাজে আসবে না।’
তিনি বলেন, ‘নীতি প্রণয়ন আমলাদের কাজ না। যারা সংশ্লিষ্ট তাদের দিয়ে করতে হবে। মূল অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় নতুন অর্থনৈতিক মডেল প্রস্তুত করতে হবে। সবার অংশগ্রহণ থাকতে হবে। সবার সুযোগ থাকতে হবে। গণতান্ত্রিক অর্থনীতির প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে বিএনপি। ক্ষমতায় গেলে অর্থনীতির নতুন মডেল করবে বিএনপি। তৃণমূলের অর্থনীতির কারিগরদের ওপর বিনিয়োগ করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রত্যেকটি অঞ্চলে স্পোর্টস কমপ্লেক্স করা হবে। সেখানে সবরকম খেলাধুলা হবে। ঢাকায় বড় থিয়েটার ডিস্ট্রিক্ট করা হবে। সেখানে শিল্পীরা কাজ করবে। বিনিয়োগ আনতে হলে পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। বিডাতে বেসরকারি লোকজন থাকতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংককে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। ওয়াচ ডগ হিসেবে কাজ করতে হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘রাজনৈতিক দল সরকার চালায় না, সরকার চালায় প্রতিষ্ঠান। মানুষের জন্য সরকার চালাতে চাইলে প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাধীন করতে হবে। বিএনপি প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ করেনি, তাই ব্যাংক-শেয়ারবাজারে লুটপাট হয়নি। বড় প্ল্যান নিয়ে আমরা আসতেছি। ব্যাংকিং ডিভিশন থাকবে না।’
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বড় প্রকল্পে অর্থায়ন কোনো ব্যাংকের কাজ নয়। পুঁজিবাজার থেকে বড় ও দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্পে পুঁজি তুলতে হবে। তাহলে ব্যাংকের ওপর চাপ কমবে। কিন্তু বিগত সরকারের আমলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) নিজের পছন্দের লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ইচ্ছেমতো টাকা লুটপাটের জন্য। যার কারণে অর্থনীতি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পৌঁছতে পারেনি।’
দেশের সব প্রান্তিক মানুষকে জিডিপির সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘আগামীতে বিএনপি সরকার গঠন করতে পারলে দেশের মানুষের কর্মসংস্থান বাড়ানোসহ জনকল্যাণমূলক অর্থনীতির মডেল হাতে নেওয়া হবে। অতীতের অর্থনীতির মডেল ছিল শুধুমাত্র একটি শ্রেণির মানুষের জন্য। যেখানে সাধারণ মানুষ ছিল উপেক্ষিত। আগামীতে এই বৈষম্য দূর করা হবে।’
আমলাদের হাতে জাতীয় রাজস্ব আদায়ের নীতি প্রণয়নের সমালোচনা করে আমীর খসরু বলেন, ‘আমলারা কিভাবে দেশের রাজস্ব আদায়ের নীতি প্রণয়ন করবে? তারা তো দেশের অর্থনীতির অনেক কিছুই বোঝেন না। সাধারণ মানুষের আয়-ব্যয়ের সম্পর্কে তাদের ধারণা কম। সে কারণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড দুই ভাগ করার সুফল আসবে না। বিএনপি সরকার গঠন করলে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা হবে।’
সামিটের প্রথম দিনে চারটি সেশন অনুষ্ঠিত হয়। বিনিয়োগ বাধা দূরীকরণে প্রয়োজনীয় সংস্কার শীর্ষক সেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এতে আরও বক্তব্য দেন আবুল কাশেম খান, ড. মাশরুর রিয়াজ, মাহাদী আমিন, ড. নকিবুর রহমান, খালেদ সাইফুল্লাহ, ড. মনজুর হোসেন, প্রফেসর ম তামিম, ইসরাফিল খসরু, স্নেহাশীষ বড়ুয়া ও ওয়াসিম আলিম। ক্যাশলেস ইকোনমি অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশান শীর্ষক সেশনে বক্তৃতা করেন সায়ীদ মোহাম্মদ কামাল, ড. শাহাদত খান ও মোহাম্মদ রাশেদ।