Tuesday 28 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

২০ শ্রমিকে ট্রেড ইউনিয়ন হলে পোশাক খাত অস্থিতিশীল হবে: বিজিএমইএ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৮ অক্টোবর ২০২৫ ১৪:২৬ | আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২৫ ১৬:৪৩

মঙ্গলবার রাজধানীর উত্তরায় এক জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে বিজিএমইএ -ছবি : সারাবাংলা

ঢাকা: মাত্র ২০ জন শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের সুযোগ পেলে দেশের পোশাক খাত অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে- এমন আশঙ্কা ব্যক্ত করে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ বলেছে, এমন অযৌক্তিক শ্রম আইন কার্যকর হলে বৈদেশিক বিনিয়োগ কমবে, রফতানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, শিল্পে অস্থিরতা বাড়বে ও দেশের অর্থনীতি দুর্বল হবে।

এ প্রেক্ষিতে অনুমোদিত ‘বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’ পুনর্বিবেচনার দাবি জানানো হয়েছে সংগঠনের পক্ষ থেকে।

মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু এ দাবি জানান। একই সঙ্গে চট্রগ্রাম বন্দরের মাশুল বাড়ানোর প্রতিবাদ এবং এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন আরও ৩ বছর পেছানোরও দাবি জানান তিনি।

বিজ্ঞাপন

বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ ও বিজিএমইএ বর্তমান কমিটির সদস্যরা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, ২০ জনে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন হলে পোশাক শিল্প খাত অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে। আমরা চাই না- শ্রমিকের বাইরে শ্রম সংগঠন করার সুযোগ থাকুক এবং ঝুট ব্যবসায়ীরা ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগ পাক। যেসব এলাকায় গার্মেন্টস আছে, সেখানে এক বাসাতেই ২০ জনের বেশি শ্রমিক বসবাস করেন। ওই বাড়ির মালিকের যদি কোন খারাপ উদ্দেশ্য থাকে তাহলে তিনি তা করতে পারবেন।

তিনি বলেন, টিসিসি ও ওয়ার্কিং কমিটিতে দীর্ঘ আলোচনার মাধ্যমে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে ধাপে ধাপে শ্রমিকের সংখ্যা নির্ধারণে একটি ভারসাম্যপূর্ণ প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল। যেখানে প্রথম ধাপে ৫০ থেকে ৫০০ শ্রমিকের কারখানায় ন্যূনতম ৫০ জন শ্রমিকের সম্মতিতে ইউনিয়ন গঠনের সুযোগ ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় একতরফাভাবে সেটি পরিবর্তন করে ২০–৩০০ শ্রমিক নির্ধারণ করা হয়েছে এবং ধাপ করা হয়েছে ৫টি।

‘এ সিদ্ধান্ত বাস্তবতা বিবর্জিত’ -দাবি করে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, শ্রম আইন এমন হওয়া উচিত যা শ্রমিক ও শিল্প উভয়ের জন্য ভারসাম্যপূর্ণ এবং বাস্তবসম্মত। কারণ মাত্র ২০ জন শ্রমিক দিয়ে একটি ইউনিয়ন গঠন করা হলে কারখানাগুলোতে এমন ব্যক্তিরা ট্রেড ইউনিয়ন করবেন, যারা ঐ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন। এটি অন্তঃদ্বন্দ্ব ও শিল্পে অস্থিতিশীলতা তৈরি করবে ও উৎপাদন ব্যাহত করবে। এতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমবে এবং উদ্যোক্তারা নতুন প্রতিষ্ঠান স্থাপন বা পরিচালনায় নিরুৎসাহিত হবেন।

প্রসঙ্গত্রমে তিনি বলেন, বিজিএমইএ শ্রমিক কল্যাণে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী। আমরা শ্রমিকদের জন্য কারখানা পরিবেশ ও শ্রমমান উন্নয়নে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছি। এর মধ্যে রয়েছে হাসপাতাল, বিদ্যালয়, চাইল্ড কেয়ার সুবিধা প্রদান এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য নিরন্তর প্রচেষ্টা। এছাড়া অন্য দেশগুলো যেখানে একক ও সহজ পেনশন কাঠামো অনুসরণ করে, বাংলাদেশে দ্বৈত পদ্ধতি চালু করলে জটিলতা বাড়বে এবং মালিকপক্ষের প্রশাসনিক খরচ বহুগুণ বাড়বে।

এলডিসি থেকে গ্র্যাজুয়েশনের বিষয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, এলডিসি থেকে গ্র্যাজুয়েশনের বিপক্ষে আমরা কেউ নই। তবে সময় আরও ৩ বছর বাড়ানো উচিত। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পথ মসৃন রাখার জন্য প্রতিযোগী সক্ষমতা ধরে রাখতে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ, জরুরি ভিত্তিতে গ্যাস সংকটের সমাধান, কাস্টমস ও এনবিআর প্রক্রিয়াগুলো সহজ করা, বিনিয়োগ ও ব্যবসাকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য উন্নত অবকাঠামো, উন্নত লজিস্টিক নিশ্চিত করা, স্বল্প ব্যয়ে অর্থায়নের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। সমস্ত রফতানিমুখী শিল্পখাতের পক্ষ থেকে প্রস্তুতিগুলো না নেয়া পর্যন্ত এলডিসি উত্তোরণের সময়সীমা অন্তত ৩ বছর পিছিয়ে দেয়ার জন্য সরকারকে অনুরোধ করছি।

চট্রগ্রাম বন্দরের মাশুল বিষয়ে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বিদেশিদের দিলে কস্ট কমার কথা। বাড়ার তো কথা নয়। বরং বন্দরের ইফিসিয়েন্সি বাড়বে। এখানে আমরা ভূ-রাজনীতি দেখছি না।

এ বিষয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন,আমরা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রফতানিতে শুল্ক মোকাবেলা করছি। স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদের হার, ডিসেম্বর ২০২৪ হতে ৫৬ শতাংশ মজুরি বৃদ্ধি, শ্রমিকদের বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট ৯ শতাংশ বৃদ্ধি, গ্যাস ও ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধি, ২০২৩ থেকে রফতানি প্রনোদনা ৬০ শতাংশ হ্রাস প্রভৃতি কারণে শিল্পে পরিচালন ব্যয় লক্ষ্যনীয়ভাবে বেড়ে গেছে। এখন এই সব কিছুর উপর সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দর বন্দরের সেবার বিপরীতে মাশুল প্রায় ৪১ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এ রকম একতরফা সিদ্ধান্ত শিল্প ও অর্থনীতির জন্য মোটেও কল্যাণকর নয়।

নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রায় ৪০ বছর ধরে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারে মাশুল বাড়ানো হয়নি। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের সেবার বিপরীতে ডলারে মাশূল আদায় করে থাকে। যেখানে ১৯৮৬-৮৭ অর্থবছরে প্রতি ডলারের বিনিময় হার ছিল ২৯.৮৯ টাকা, বর্তমানে তা ১২২ + টাকা। অর্থাৎ মাশুলের হার অপরিবর্তিত থাকলেও, ডলারের বিপরীতে টাকার বড় ধরনের এই অবমূল্যায়নের কারণে আমরা উদ্যোক্তারা টাকার অংকে বর্ধিত হারে মাশুল প্রদান করে আসছি, যা গত ৪০ বছর ধরে কার্যত ৩০৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর কখনোই লোকসান করে নি। বরং এটি একটি ধারাবাহিকভাবে মুনাফা অর্জনকারী প্রতিষ্ঠান। বরং প্রতি বছর এটির মুনাফা অর্জন বেড়েই চলেছে। এটি একটি সরকারী সেবাদান প্রতিষ্ঠান। এর লক্ষ্য কখনোই মুনাফা অর্জন হতে পারে না। তারপরও আমদানি-রফতানিকারীদের উদ্বেগ স্বত্ত্বেও কেন চার্জ বৃদ্ধি করা হলো, তা আমাদের বোধগম্য নয়। বরং বাস্তবতা হলো, আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলো যে বন্দরগুলো ব্যবহার করে, সেগুলোর তুলনায় আমাদের বন্দর একদিকে যেমন ব্যয় বহুল, অন্যদিকে তেমনই সবচেয়ে কম দক্ষ। বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বের ৪০৩টি কন্টেইনার পরিবাহী সমুদ্র বন্দরের মধ্যে আমাদের চট্রগ্রাম বন্দরের অবস্থান ৩৫৭। সার্বিকভাবে আমাদের ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে আমরা এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, যেখানে সবচেয়ে বেশি দরকার হলো সকল ক্ষেত্রে ব্যয় কমিয়ে প্রতিযোগী সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর