ঢাকা: চার মাসে একাধিকবার সময় চেয়েও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাক্ষাৎ পাননি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দেশের পোশাক খাতের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতনিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু।
তিনি বলেন, ‘বিজিএমইএ’র দায়িত্ব নেওয়ার চার মাস হয়েছে, এ সময়ে একাধিকবার আমরা প্রধান উপদেষ্টার অ্যাপয়ন্টমেন্ট চেয়েছি, কিন্তু আমাদের কনসার্নগুলো জানানোর জন্য উনি সময় দেননি।’
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে বিজিএমইএ আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ, বাংলাদেশ গার্মেন্ট অ্যাক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএপিএমইএ) সভাপতি মো. শাহরিয়ার, বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ ও বিজিএমইএ’র বর্তমান কমিটির সদস্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
১০০ মিলিয়ন ডলারের কোম্পানি ‘স্টার লিংক’র ভাইস প্রেসিডেন্ট সময় পান, অথচ চার মাস ধরে ঘুরেও ৪০ বিলিয়ন ডলার এক্সপোর্ট করে দেশীয় যে খাত, সেই খাতের প্রতিনিধিরা প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাত পান না এমনটি জানিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘আজকের এই প্রেস কনফারেন্সটি আরও তিন দিন আগে হওয়ার কথা ছিল। গত দুই দিন আমি এবং বিকেএমইএ প্রেসিডেন্ট এবং এখানকার অন্যান্য নেতারা যার যার মতো করে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। এখন আপনার সঙ্গে আমার একটি বিষয় নিয়ে নেগোসিয়েশন হবে, আপনি আমাকে সময় দিচ্ছেন না।’
আরও পড়ুন-২০ শ্রমিকে ট্রেড ইউনিয়ন হলে পোশাক খাত অস্থিতিশীল হবে: বিজিএমইএ
তিনি আরও বলেন, ‘আমি ক্ষোভের সঙ্গে বলছি, স্টারলিংকের ভাইস প্রেসিডেন্টে লেভেলের লোক আসে, উনি উনাকে সময় দেন, আর ৪০ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয়ের পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদের উনি সময় দেন না। এটার দায় উনাকেই নিতে হবে। সময় না দিলে আমাদের কনসার্নটা উনাকে কিভাবে জানাবো। নেগোসিয়েশনের সুযোগ দিলেই তো বলতে পারবো, আমাদের নেগোসিয়েশনের স্কিল আছে কি নেই।’
মাত্র ২০ জন শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের সুযোগ পেলে দেশের পোশাক খাত অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে বলে সংবাদ সম্মেলেন জানান পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু। নতুন শ্রম আইনের এই অধ্যাদেশ পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে চট্রগ্রাম বন্দরের মাশুল বৃদ্ধির তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া এলডিসি গ্র্যাডুয়েশন আরও ৩ বছর পিছিয়ে দেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি।
বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, ‘আমরা চাই না শ্রমিকের বাইরে শ্রম সংগঠন করার সুযোগ পাক। আমরা চাই না জুট ব্যাবসায়ীরা ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগ পাক। যেসব এলাকায় গার্মেন্টস আছে সেখানকার এক বাসাতেই ২০ জনের বেশি শ্রমিক বসবাস করেন। ওই বাড়ির মালিকের যদি কোনো খারাপ উদ্দেশ্য থাকে তাহলে তিনি তো তা করতে পারবেন।’
তিনি বলেন, ‘এলডিসি থেকে এলডিসি থেকে গ্র্যাডুয়েট হওয়ার বিপক্ষে আমরা কেউ নয়। সময় আরও ৩ বছর বর্ধিত হওয়া উচিত।’
চট্রগ্রাম বন্দরের মাশুল বিষয়ে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের উত্তরে বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘বিদেশিদের দিলে কস্ট কমার কথা, বাড়ার তো কথা নয়। বরং বন্দরের ইফিসিয়েন্সি বাড়বে। এখানে আমরা ভূ-রাজনীতি দেখছি না। শ্রম আইনের অধ্যাদেশ বিদেশিদের প্রেসক্রিপশনে হয়েছে মন্তব্য করে হাতেম আরও বলেন, ‘২০ জন শ্রমিকে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের কোনো কথা ছিল না। হঠাৎ করে বিদেশ থেকে এই ওহি নাজিল হয়েছে। বিদেশিদের প্রেসক্রিপশনে এই অধ্যাদেশ হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নির্বাচনের মাধ্যমে বিজিএমইএ’র নতুন বোর্ড গঠিত হয়। চলতি বছরের ৩১ মে বিজিএমইএ’র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আর ১৬ জুন নতুন বোর্ড দায়িত্ব নেয়। নতুন বোর্ডের সভাপতি মাহমুদ হাসান খান রাইজিং ফ্যাশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)। তিনি বিএনপি ঘরনার ব্যবসায়ী হিসাবে পরিচিত।