ঢাকা: ব্যাংকের বাইরে তথা মানুষের হাতে থাকা নগদ টাকার পরিমাণ গত দুই মাস ধরে কমছে। অর্থাৎ নগদ টাকা পুনরায় ব্যাংকে ফিরছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, গত জুলাই শেষে ব্যাংক খাতের বাইরে মানুষের হাতে রক্ষিত টাকার পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৮৭ হাজার ২৯৪ কোটি টাকা। আগস্টে এর পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৭৬ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে ব্যাংক-বহির্ভূত অর্থের পরিমাণ কমেছে ১০ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।
এদিকে মানুষের হাতে থাকা নগদ টাকার পরিমাণ কমার পাশাপাশি বাজারে মুদ্রা সরবরাহ’র পরিমাণও কমেছে। গত আগস্টে ছাপানো টাকা (রিজার্ভ মানি) কমেছে ৮ হাজার ৫৩৭ কোটি ৬ লাখ টাকা।
প্রসঙ্গত: মানুষ ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেওয়ার পর যা আর ব্যাংকে ফেরত আসে না, তা-ই ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকা হিসেবে পরিচিত।
সূত্র মতে, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ব্যাংকে ফিরতে শুরু করে মানুষের হাতে রাখা টাকা। এর ধারাবাহিকতা চলে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। পরের মাস মার্চে মানুষের হাতে থাকা নগদ টাকার পরিমাণ আবার বেড়ে যায়। এরপর এপ্রিলে এসে সেটা আবার কমে। এরপর মে মাস থেকে জুন পর্যন্ত আবার বাড়ে। জুলাইয়ে সেটা আবার কমছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, বিগত সরকারের আমলে অনিয়ম-দুর্নীতি আর লুটপাটের কারণে ব্যাংক খাতের উপর মানুষের আস্থার সংকট চরম আকার ধারণ করেছিল। আতঙ্কিত হয়ে মানুষ ব্যাংকে রাখা তুলে নিয়ে বাসায় রাখতেন। এতে করে ব্যাংকগুলোতে দেখা দেয় চরম তারল্য সংকট। এমন অবস্থায় ব্যাংকগুলো উচ্চ সুদে আমানত সংগ্রহ শুরু করে। কিন্তু এতেও কাজে আসেনি। প্রতি মাসেই বাড়ছিল মানুষের হাতে নগদ টাকা তথা ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকার পরিমাণ। গত বছরের আগস্ট পর্যন্ত মানুষের হাতে নগদ টাকা বা ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকার পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে বাড়ছিল। তবে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর ব্যাংক খাতের উপর মানুষের আস্থা পুনরায় বাড়তে থাকে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের খরচ বেশি হয়। এজন্য ব্যাংক থেকে টাকা তুলে হাতে রাখে। এখন তারপর ব্যাংক খাতের সামগ্রিক পরিস্থিতির কারণে কিছু ব্যাংকের প্রতি মানুষের আস্থায়ও নষ্ট হয়েছিল। মানুষ ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিয়েছিল। এখন মূল্যস্ফীতি আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে এবং ব্যাংকগুলোর প্রতিও মানুষের আস্থা বাড়ছে। সেই কারণে মানুষের হাতে থাকা নগদ টাকা আবার ব্যাংকে ফিরছে।
এদিকে, মানুষের হাতে থাকা নগদ টাকার পরিমাণ কমার পাশাপাশি বাজারে মুদ্রা সরবরাহ’র পরিমাণও কমেছে।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান এ প্রসঙ্গে সারাবাংলাকে বলেন, ‘ব্যাংকের বাইরে নগদ টাকা বেড়ে যাওয়া বা কমা নিয়মিত ঘটে। নগদ চাহিদা বেড়ে গেলে গ্রাহকেরা ব্যাংক থেকে টাকা তোলেন। মূল্যস্ফীতির বাড়তি চাপ ও ক্ষুদ্র আমানতকারীর বাড়তি খরচ নগদ রাখার প্রবণতাকে ত্বরান্বিত করছে। দুর্বল ব্যাংকের গ্রাহকও আস্থা কম থাকায় নগদ টাকা হাতে রাখে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান মন্তব্য করেন, ‘ব্যাংক খাতের অস্থিরতার কারণে মানুষ নিজের কাছে নগদ রাখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেছে। এ প্রবণতা কমিয়ে আনতে হলে সবার আগে গ্রাহকের আস্থা ফিরিয়ে আনা জরুরি। যেহেতু অস্থিরতার দিন দিন কেটে যাচ্ছে,তাই আবার ব্যাংকে টাকা জমা রাখতেছে।’