Tuesday 28 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘স্বাস্থ্য সমতা ও অধিকার নিশ্চিতে ইউনিভার্সেল হেলথ কাভারেজ জরুরি’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৮ অক্টোবর ২০২৫ ১৮:৫৬ | আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২৫ ২০:১৫

‘বাংলাদেশে সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা : প্রেক্ষিত ও করণীয়’ শীর্ষক ওয়েবিনারে বক্তারা। ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: বাংলাদেশে স্বাস্থ্য সমতা ও অধিকার নিশ্চিতে ইউনিভার্সেল হেলথ কাভারেজ জরুরি। দেশে দ্রুত নগরায়নের পাশাপাশি অসংক্রামক রোগও বৃদ্ধি পাচ্ছে। শহুরে নিম্নবিত্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। গ্রামাঞ্চলে চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক ও উপজেলা হাসপাতালসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা থাকলেও মানুষ যথেষ্ট ও প্রয়োজনীয় সেবা পাচ্ছে না। সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার সার্ভিস কাভারেজ সূচকে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। এজন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় ব্যাপক বিনিয়োগ করতে হবে।

মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) বিকেলে ‘বাংলাদেশে সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা : প্রেক্ষিত ও করণীয়’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। গবেষণা প্রতিষ্ঠান আর্ক ফাউন্ডেশনের আয়োজিত এ ওয়েবিনারটি মিটিং সফটওয়ার জুমে অনুষ্ঠিত হয়।

বিজ্ঞাপন

ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মহাপরিচালক (ডিজি) ড. মো. এনামুল হক। প্যানেল আলোচক হিসেবে ছিলেন-সুইডেনের ইউনিভার্সিটি অফ গোথেনবার্গের স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক জাহাঙ্গীর খান, কোয়ালিটি কেয়ার কনসার্নের সিইও ও ফাউন্ডার এবং ইউএইচসি ফোরামের মেম্বার সেক্রেটারি ড. মো আমিনুল হাসান, সেন্টার ফর ল এন্ড পলিসি এফেয়ার্সের সেক্রেটারি এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও আর্ক ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ড. রুমানা হক। ওয়েবিনারটি সঞ্চালনা করেন আর্ক ফাউন্ডেশনের রিসার্চ এসোসিয়েট বদরুদ্দিন সাইফী।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. মো. এনামুল হক সরকারের চলমান সার্বিক সংস্কার প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘বাংলাদেশে স্বাস্থ্য সমতা ও অধিকার নিশ্চিতে ইউনিভার্সেল হেলথ কাভারেজ জরুরি। সেটা অনুভব করে ইতোমধ্যে পঁয়ত্রিশটি মন্ত্রণালয় বহুখাতভিত্তিক সহযোগিতা সংক্রান্ত এক ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেছে। স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশন সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ত্বরান্বিত করতে ৩৩টি প্রস্তাব জমা দিয়েছে। সরকার স্বাস্থ্যসেবায় আর্থিক সুরক্ষা ও ন্যায়সংগত প্রবেশাধিকারের উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় নীতি ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

অধ্যাপক ড. রুমানা হক বলেন, ‘সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হলে পুরো ব্যবস্থার রূপান্তর প্রয়োজন। বিচ্ছিন্ন কিছু পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়। সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা শুধু অর্থায়নের বিষয় নয়। এটি একটি সামগ্রিক সংস্কার প্রক্রিয়া। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা শক্তিশালীকরণ, কার্যকর রেফারেল ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ এবং প্রয়োজনীয় ওষুধের জন্য ব্যক্তিগত খরচ কমানো; এ সবগুলোতে উন্নতি করাই হবে মূল চাবিকাঠি। দেশে এখনো অনেক মানুষ ফার্মেসি থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করে, জেন্ডারভিত্তিক সেবাদানে দ্রুটি রয়েছে, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরাও সেবা গ্রহণে এখনো অনেক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, বিভাগভিত্তিক সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা সূচকে অনেক বিভাগ পিছিয়ে রয়েছে। এ খাতগুলোর দ্রুত উন্নতি করতে হবে।’

আইন ও অধিকারভিত্তিক দৃষ্টিকোণ থেকে অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, ‘সিভিল সোসাইটিকে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ার অংশ হতে হবে। তামাক নিয়ন্ত্রণের অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে সরকার ও সিভিল সোসাইটির দৃঢ় সহযোগিতার মাধ্যমে সিন্ডিকেট ভাঙা এবং বাস্তব সংস্কার সম্ভব।’
আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা তুলে ধরে অধ্যাপক জাহাঙ্গীর খান বলেন, ‘বাংলাদেশে দক্ষ পেশাজীবী রয়েছে। তবে শক্তিশালী রাজনৈতিক নেতৃত্ব ছাড়া এসব সংস্কার সার্বিক পরিবর্তনে রূপ নেবে না।’

ড. মো আমিনুল হাসান বলেন, কোভিড-১৯ ও ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হবার পরে দেশে দারিদ্রতা ও মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে। ২০৩০ সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জনের কথা থাকলে সেটা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। হেলথ কেয়ার ফিনান্সিয়াল স্ট্রাটেজি ২০১২ সালে নেওয়া হয়েছিলো জনগণের নিজ খরচের স্বাস্থ্য ব্যয় কমানোর জন্য। কিন্তু সেটা না কমে আরও বেড়ে গেছে। সে জন্য দ্রুত আমাদেরকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবার সুযোগ সুবিধা বাড়াতে হবে, দক্ষ স্বাস্থ্য কর্মী বাড়াতে হবে ও ডিজিটাল স্বাস্থ্য অবকাঠামো বাড়াতে হবে।

ওয়েবিনারে দেশের বিভিন্ন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, তামাক নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞ, গণমাধ্যমের প্রতিনিধিগণসহ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অর্ধশতাধিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর