Tuesday 28 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

হিটলারের গ্যাস চেম্বার আর হাসিনার আয়নাঘরে কোনো পার্থক্য নেই: রিজভী

ঢাবি করেসপন্ডেন্ট
২৮ অক্টোবর ২০২৫ ২০:২৯ | আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২৫ ২২:৪১

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ফাইল ছবি

ঢাবি: বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, “হিটলারের ফ্যাসিবাদ থেকে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদ কোনো অংশে কম নয়, বরং কিছু ক্ষেত্রে তা হিটলারকেও ছাড়িয়ে গেছে। হিটলারের গ্যাস চেম্বারের সঙ্গে শেখ হাসিনার আয়নাঘরের কোনো পার্থক্য নেই।”

মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে ‘লগি-বৈঠার লাশতন্ত্র থেকে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের উত্থান: ২৮ অক্টোবর পরিপ্রেক্ষিতে’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)।

রিজভী বলেন, মৃত্যুকেও যেন আরও মর্মান্তিক করা যায়, সে ব্যবস্থা নাৎসীরা করেছে। এগুলো থেকে কোনো অংশে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদ থেকে কম নয়। শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাও ছাড়িয়ে যায়। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার খুব বড় ধরনের এক অফিসারের কথা শুনলাম। উনি মাথায় গুলি করার পর রক্ত না দেখলে পরে নাকি তিনি ঘুমাতেন না। এইতো শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাসদের একটি দৃষ্টান্ত। এরকম কত আছে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, চারদলীয় জোট তো হাসিনার মত ফ্যাসিবাদ তৈরি করেনি। এসপি হবে ছাত্রলীগের, ডিআইজি হবে আওয়ামীলীগের। ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ডে কারও মামার শ্বশুর যদি বিএনপি বা জামায়াতের লোক হয়, তাহলে সে থাকতে পারবে না। হিটলার মুসোলিনিদের মতো ঠিক একই কায়দায় এইভাবে শেখ হাসিনা প্রশাসন সাজিয়েছেন।

২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর ১৪ দলীয় জোটের লগি-বৈঠার আন্দোলনের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, সেদিন বেগম খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতির কাছে যাচ্ছেন পদত্যাগ করার জন্য। সেদিন আওয়ামীলীগ সর্বত্র তাণ্ডব চালায়। তখন ছাত্রদলের সভাপতি শাহাবুদ্দিন লালটু দেশের বাড়ি থেকে ঢাকায় আসছেন। রাস্তায় তাকে পেয়ে ১৪ দলের কর্মীরা এমন প্রহার করেছে। ইট দিয়ে ভয়াবহভাবে মাথায় থেতলে তাকে পুকুরে ফেলে দিয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা তখন এই ঘটনা শুনছি, পল্টনে অফিসে মিটিং হচ্ছে। সামনে কী হবে, আমরা কিছু বুঝতে পারছি না। এমন সময় পদত্যাগপত্র দিয়ে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ায় আমাদের কাছে আসলেন। আমরা মিটিংয়ে বসলাম। তখন বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে জামায়াতে ইসলামের মিটিং শুরু হয়ে গেছে। আমরা টিয়ার গ্যাসের শব্দ শুনছি, বোমাবাজির শব্দ শুনছি। কে এগিয়ে যাবে, এই প্রস্তুতিও নেই। তান্ডব যখন শেষ পর্যায়ে তখন জামায়াতের পক্ষ থেকে তাকে (খালেদা জিয়া) খবর দেওয়া হলো যে, এইরকম রক্তাক্ত ঘটনা ঘটেছে। নির্মমভাবে হত্যার পর লাশের উপর নৃত্য করছে ১৪ দলীয় জোট। তিনি দেখলেন, পুলিশ-র‍্যাব কোনো কথা শুনছে না। তিনি তখন বিডিআরকে বললেন। বিডিআর তখন মুভ করে একটি দায়িত্ব পালন করে। এরমধ্যেই অনেক রক্তাক্ত ঘটনা ঘটে গেছে।

তিনি বলেন, জামায়াতের অফিশিয়াল পেজে এই পুরো ঘটনার বিবরণ আছে। সেদিন এমন এক দিন, যে কে কার জন্য এগিয়ে আসবে, প্রশাসন কথা শুনছে না; শেখ হাসিনা সেই সুযোগ নিয়েছে। তার প্রথম ফ্যাসিবাদের বহিঃপ্রকাশ ২৮ অক্টোবরের ঘটনা। এর মর্মান্তিকতা ও নিষ্ঠুরতা গোটা বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিয়েছে। ঠান্ডা মাথায় আঘাত করার পর মাটিতে শুয়ে পড়েছে, তার উপর চলছে নারকীয় নৃত্যের উল্লাস। জাতিসংঘের মহাসচিব এটার প্রতিবাদ করেছেন।

রিজভী আরও বলেন, আন্তর্জাতিক মাস্টার-প্ল্যান তো আগে থেকেই চলছে। ২০০৫ সালে সালে আমেরিকার অ্যাম্বাসেডর বলছেন, সবকিছু ঠিকঠাক করুন না হলে তৃতীয় পক্ষ আসবে। উনি কি করে জানলেন তৃতীয় পক্ষ আসবে। কেন জঙ্গিবাদের হঠাৎ করে উত্থান শুরু হলো। ডক্টর হুমায়ুন আজাদ আঘাত প্রাপ্ত হলেন কোনো তদন্ত ও আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই জামাতের নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া শুরু করল। বিভিন্ন ইউরোপিয়ান নেতৃবৃন্দ এবং প্রতিনিধিদের নিয়ে এনে বাংলা ভাইয়ের উদ্ভব দেখানো হয়েছে। আমার মনে আছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় মেহেরচন্ডিতে স্বয়ং বিদেশী কূটনীতিকরা বলছেন যে এখানে জঙ্গিবাদের উৎপত্তি হচ্ছে। এই আন্তর্জাতিক প্রচারকে এই গোষ্ঠী উদ্ধুদ্ধ করেছে, যারা এখানে ১৫ বছর ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে চায়। এটা ছিল জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক একটা সিন্ডিকেশন।

তিনি বলেন, এই সিন্ডিকেশনটা অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছে। ২৮ অক্টোবর তার প্রথম বহিঃপ্রকাশ। তারা ক্ষমতায় আসার পর প্রথম আঘাত করল বিএনপির নাটোর উপজেলা চেয়ারম্যান নূর হোসেন বাবুকে। তার মাথা থেতলালো এবং তার লাশের উপর তারা ওইভাবেই নৃত্য করেছে। কীভাবে তারা হিমালয়ের চূড়ায় নিয়ে গেছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

রিজভী বলেন, হাসিনা যেদিন ক্ষমতা ছেড়ে দেবেন, সেদিন তিনি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এবং নিরাপত্তা বাহিনীর লোকদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন, পুলিশ তো প্রস্তুত আছে, আপনারা কেন দায়িত্ব নিচ্ছেন না এই আন্দোলন দামাতে। অর্থাৎ যে শিশু বাচ্চা, তরুণরা, কিশোররা রাস্তায় নেমেছে, তাদেরকে অবলীলায় গুলি করে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে হবে। শেখ হাসিনার এই যে মনোভাব এই মনোভাবের সঙ্গে আপনার আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অনেকেই এর সাথে যুক্ত থেকেছেন।

তিনি বলেন, পুলিশের আইজি আজকে রাজসাক্ষী হয়েছেন বটে। কিন্তু তিনি তো শেখ হাসিনার ভাষ্য অনুযায়ী, আন্দোলন দমাতে ব্যাপকভাবে গুলি ছাড়বেন বলে প্রস্তুত ছিলেন।

অভ্যুত্থানের সময়কার স্মৃতিচারণ করে তিনি বলনে, যখন দেখলাম যে তারা এক দফার ঘোষণা দিয়েছে। আমরা খুবই আশান্বিত হলাম যে, এইবার আর শেখ হাসিনা টিকতে পারবে না। ভেতরে পুলিশরা দেখলাম, আমাদেরকে একটু চা খাওয়াচ্ছে। সকালে উঠে জিজ্ঞেস করে, আপনাদের নাস্তা লাগবে কিনা।

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন সাদা দলের আহ্বায়ক মোর্শেদ হাসান খান, ইউটিএলের আহ্বায়ক আতাউর রহমান বিশ্বাস, এবি পার্টির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ, গণঅধিকার পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি ফারুক হাসান, এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় প্রচার ও দাওয়াহ বিষয়ক সম্পাদক শেখ ফজলুল করীম মারুফ।

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর