আন্দোলন ঠেকাতে পুলিশ ডাকার হুমকি দিলেন ঢাবি শিক্ষক
১১ জুলাই ২০১৮ ১৩:২৫
।। ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাবি : নিজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঠেকাতে পুলিশ ডাকার হুমকি দিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দিন।
বুধবার (১১ জুলাই) সকাল ৯টা থেকে বিভাগের ছাত্র ও কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী মশিউর রহমানকে রিমান্ডে নেওয়ার প্রতিবাদ ও তার মুক্তির দাবিতে বিভাগের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিল সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরা। সেখানে গিয়ে ওই শিক্ষক শিক্ষার্থীদের ছবি তোলেন, দেখে নেওয়ার হুমকি দেন এবং পরে শিক্ষার্থীদের ঠেকাতে পুলিশ ডাকবেন বলে হুমকি দেন।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমি যদি মনে করি আমার পথে আপনি ব্যারিকেড তৈরি করছেন তাহলে আমি কিন্তু পুলিশ আনব। এখন আপনি চিন্তা করে দেখেন। আমি কিন্তু প্রক্টরিয়াল ডাকব, ডেকে কিন্তু আমি এখানে পুলিশ আনব।’
এসময় সেখানে উপস্থিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সামিনা লুৎফা বলেন, ‘স্যার ওরা প্রক্টরের কাছে চিঠি লিখতে যাচ্ছে, ওদেরকে ওদের কাজ করতে দেন, আমরা আমাদের কাজ করি।’
অধ্যপক আ ক ম জামাল উদ্দিন বলেন, ’যে শিক্ষক ক্লাস নিতে চায় না আপনারা তার ক্লাস করবেন না।’
জবাবে অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, ‘সব শিক্ষকই ক্লাস নিতে চায়। কিন্তু ছাত্ররা না আসলে কি চেয়ার টেবিলের ক্লাস নেবেন?’
অধ্যপক জামাল উদ্দিন বলেন, ’আমি ক্লাস নিব, আপনারা যদি না আসেন সে দায়িত্ব আপনাদের।’ ক্লাসে না আসলে তিনি রেগুলারিটি-ডিসরেগুলারিটির পদক্ষেপ নিবেন বলে জানান। এই পর্যায়ে তিনি আবারও পুলিশ ডেকে আনার হুমকি দেন।
এর আগে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা বেলা ৯টায় ক্লা-পরীক্ষা বর্জনের ব্যানার নিয়ে বিভাগের সামনে অবস্থান নেয়। এক পর্যায়ে তারা বিভাগের একটি কলাপসিবল গেট আটকে তালা মেরে দেয়।
এরপর অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দিন সেখানে আসেন। তিনি বলেন, ‘ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কোনো প্রতিবাদের ভাষা হতে পারে না। আপনারা যদি ক্লাস বয়কট করেছেন। এগুলো বাদ দিয়ে ক্লাসে যান। আপনারা একজন আইনজীবী ঠিক করেন। কোর্টে তার (মশিউর রহমান) জন্য ফাইট করেন।’
আইনজীবী ঠিক করলে বিভাগ থেকে তার খরচের ব্যবস্থা করে দেয়া হবে বলেও জানান এই শিক্ষক। তিনি বলেন, ’যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে তাদের ধরা হচ্ছে।‘
এসময় সাংবাদিকরা এই তথ্যের উৎস জানতে চাইলে এই শিক্ষক বলেন, ‘আমরা অনুমাণ করছি।’
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রকে একটি সংগঠনের নেতাকর্মীরা তুলে নিয়ে গেল তার দায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কি না এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক জামাল উদ্দিন বলেন, আমরা আমাদের বিভাগের কথা বলছি। তিনি বলেন, আপনারা এইটা চালিয়ে গেলে কিছু মানুষের বন্ধু হবেন আবার কিছু মানুষের শত্রত্রুও হবেন।
শিক্ষার্থীরা এটাকে প্রচছন্ন হুমকি কি না জানতে চাইলে অধ্যাপক জামাল উদ্দিন বলেন, ‘হুমকি না। আপনার অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমেই জন্য ভবিষ্যতে আপনি নিজেই সাফার করবেন ‘
তবে এতো কথার পরেও শিক্ষার্থীরা বলেন, ’আমরা ক্লাস করবো না , আমাদের বন্ধু রিমান্ডে আছে।’
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, তারা সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মশিউরের মুক্তির দাবিতে বিভাগের চেয়ারম্যান ও প্রক্টরকে চিঠি দেবেন। সন্তুষজনক কোনো কিছু না পেলে তারা আগামী রোববার আবার অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা দেন। তাদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলেও উল্লেখ করেন।
প্রসঙ্গত, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার দ্য সূর্যসেন হলের আবাসিক ছাত্র মশিউরকে গত ২ জুলাই ছাত্রলীগের সূর্যসেন হল ইউনিটের নেতাকর্মীরা মারধর করে পুলিশে দেয়। পরে পুলিশ তাকে ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবন ভাঙচুরের মামলায় গ্রেফতার দেখায়। মঙ্গলবার (১০ জুলাই) তার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। মশিউরকে গ্রেফতারের দাবিতে গত ৫ জুলাই সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীর মানববন্ধন করে মশিউর ক্লাসে না ফেরা পর্যন্ত তারা ক্লাসে ফিরবে না বলে ঘোষণা দেয়।
সারাবাংলা/কেকে/এসএমএন