Wednesday 29 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কুরিয়ারে অবৈধ বাণিজ্য: ‘নাম পার্সেল, ভেতরে কী?’

জুলফিকার তাজুল, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২৯ অক্টোবর ২০২৫ ০৮:০০ | আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০২৫ ১০:২৫

সিলেটের কানাইঘাট থানায় অবৈধ চোরাচালানের চা-পাতাসহ আটক সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের পিকআপ। ছবি: সারাবাংলা

সিলেট: দেশের সীমান্তঘেঁষা অঞ্চল সিলেট—চোরাচালানের জন্য বহুদিন ধরেই ঝুঁকিপূর্ণ। তবে এখন সেই চিত্র পালটেছে। পাচারকারীরা আর সীমান্তপথে নয়, এখন ব্যবহার করছে কুরিয়ার সার্ভিসের বৈধ মোড়ক। সাধারণ পার্সেলের আড়ালে ছড়িয়ে পড়ছে মাদক, ভারতীয় চা-পাতা, প্রসাধনী ও নানা অবৈধ পণ্যের চালান।

সাম্প্রতিক সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক অভিযানে মিলছে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য। সব মিলিয়ে সিলেটজুড়ে এখন প্রশ্ন একটাই—‘নাম পার্সেল, ভেতরে কী?’ এই ধোঁয়াশার ফাঁকেই ফুলে–ফেঁপে উঠছে অবৈধ বাণিজ্যের এক অদৃশ্য জাল।

গত ২১ অক্টোবর গভীর রাতে কানাইঘাট থানার পুলিশ সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের একটি কাভার্ডভ্যান আটক করে। তল্লাশিতে মেলে ৮০ বস্তা ভারতীয় চা-পাতা, যার ওজন প্রায় ৪ হাজার কেজি। বাজারমূল্য আনুমানিক ১২ লাখ টাকা। এ ঘটনায় চালক মাসুম মিয়াকে (২৬) গ্রেফতার করা হয়।

বিজ্ঞাপন

এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে। গত ৩০ জুলাই সিলেট নগরের জিন্দাবাজারে সুন্দরবন কুরিয়ারের সামনেই র‌্যাব–৯ অভিযানে আটক হয় ৩ মাদক কারবারি। তারা শিশুদের পোশাকের ভেতর লুকিয়ে ২০০ বোতল ফেনসিডিল পাঠানোর চেষ্টা করছিল।

১৮ সেপ্টেম্বর হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে এক মাদক ব্যবসায়ী গাঁজাসহ ধরা পড়ে কুরিয়ারে পার্সেল পাঠানোর সময়। আর ১৭ সেপ্টেম্বর সিলেট নগরের নাইওরপুলে এসএ পরিবহনের অফিসে যৌথ বাহিনীর অভিযানে জব্দ হয় বিপুল পরিমাণ ভারতীয় শাড়ি, কম্বল ও বিদেশি ব্র্যান্ডের প্রসাধনী।

সূত্র বলছে, এখন পাচারের কৌশল আরও আধুনিক ও ছদ্মবেশী। কখনও টেলিভিশনের বাক্সে, কখনও পোশাক বা ল্যাপটপের ভেতর লুকিয়ে পাঠানো হচ্ছে ফেনসিডিল, ইয়াবা বা গাঁজা। প্রেরকের নাম–ঠিকানা বেশিরভাগ সময় ভুয়া থাকে, এমনকি ফোন নম্বরও মিথ্যা। ফলে পণ্য জব্দ হলেও আসল প্রেরক অধরা থেকে যায়।

র‌্যাব–৯ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া অফিসার) কে. এম. শহিদুল ইসলাম সোহাগ বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে। তবে কুরিয়ার সার্ভিসগুলো যদি আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করে, এই রুটে মাদক পাচার অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও শনাক্তকরণ ব্যবস্থা উন্নত করা জরুরি। এতে পাচারকারীরা সুযোগ নিতে পারবে না।’

বিশ্লেষকদের মতে, কুরিয়ার খাতে তদারকি ও প্রযুক্তিগত নজরদারি দুর্বল। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে নেই পার্সেল স্ক্যানিং বা শনাক্তকরণের আধুনিক ব্যবস্থা। প্রেরক ও প্রাপকের পরিচয় যাচাইয়ের বাধ্যতামূলক নিয়ম না থাকায় পাচারকারীদের জন্য এটি হয়ে উঠেছে তুলনামূলক “ঝুঁকিমুক্ত পথ”।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মনে করছে, প্রতিটি পার্সেলের প্রেরক–প্রাপকের জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই বাধ্যতামূলক করা। সন্দেহভাজন পার্সেলে স্ক্যানিং প্রযুক্তি ব্যবহার, ট্র্যাকিং ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করা দরকার।

এছাড়া, স্থানীয় প্রশাসন, র‌্যাব, বিজিবি ও কাস্টমসের সমন্বয়ে একটি স্থায়ী নজরদারি টাস্কফোর্স গঠনের পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস সিলেট জোনের ডিজিএম মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের সঙ্গে কোনোভাবেই অবৈধ চোরাচালানের সম্পর্ক নেই। সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় আমাদের এজেন্সি রয়েছে, তারা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই করে বুকিং কনফার্ম করে থাকে। তারপরও যদি কোনো এজেন্টের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়, তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে কোম্পানি ব্যবস্থা নেবে।’

সিলেট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সম্রাট তালুকদার (মিডিয়া) বলেন, ‘সিলেটের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা থেকে কুরিয়ার সার্ভিসের গাড়ি ব্যবহার করে ভারতীয় অবৈধ চোরাচালান পণ্য আনার খবর আমরা পেয়েছি। কুরিয়ার সার্ভিসের গাড়ি ও চালক আটক করা হয়েছে। আদালতের মাধ্যমে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টি নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে।’

বিজ্ঞাপন

আজও ঢাকার বায়ু অস্বাস্থ্যকর
২৯ অক্টোবর ২০২৫ ০৯:০০

আরো

সম্পর্কিত খবর