রাজবাড়ী: প্রতিবছর সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে আগাম জাতের মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ হলেও এ বছর কিছুটা দেরি হয়েছে। মূলত কয়েক দফা বৃষ্টিপাত এই দেরির কারণ। তবে দেরিতে আবাদ শুরু হলেও ভালো ফলন আশা করছেন চাষিরা। এ বছর মুড়িকাটা পেঁয়াজের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৫০ হাজার টন।
এদিকে জমির খাজনা, পেঁয়াজের বীজ, সার ও কীটনাশকসহ প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদন খরচ বাড়ার আশঙ্কা কৃষকের। যদিও কৃষি বিভাগ বলছে, কৃষকেরা যেন চাহিদা অনুযায়ী ন্যায্য দামে সার পান, সেদিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, পেঁয়াজ উৎপাদনে দেশের তৃতীয় অবস্থানে রাজবাড়ী জেলা। সারা দেশের ১৪ শতাংশ পেঁয়াজ এই জেলায় হয়ে থাকে। রাজবাড়ীর পাঁচটি উপজেলার মধ্যে রাজবাড়ী সদর, কালুখালী ও গোয়ালন্দ উপজেলায় বেশি পেঁয়াজ রোপণ করা হয়।
কালুখালী উপজেলার হরিণবাড়িয়া গিয়ে দেখা যায়, চাষিরা কেউ মুড়িকাটা পেঁয়াজের জন্য জমি প্রস্তুত করছেন, কেউ রোপণ করছেন, কেউ সেচ দিচ্ছেন। যারা আগে-ভাগে আবাদ করেছিলেন, তারা চারা গাছের যত্ন নিচ্ছেন। কেউবা চারায় কীটনাশক দেওয়ার কাজ সেরে নিচ্ছেন।

রাজবাড়ীতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ রোপনে ব্যস্ত চাষিরা। ছবি: সারাবাংলা
কালুখালী উপজেলার হরিণবাড়িয়া চরের পেঁয়াজচাষি সিরাজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘এ বছর বৃষ্টির কারণে পেঁয়াজ রোপণে সপ্তাহ দুই দেরি হয়েছে। গতবছর চেয়ে এ বছর মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদে খরচ কম। এ বছর বিঘায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ হবে। ফলন যদি ভালো হয়, তাহলে বিঘায় ৭০ থেকে ৮০ মণ পেঁয়াজ পাব।’
চাষি আব্দুল হাসেম আলী শেখ সারাবাংলাকে বলেন, ‘গতবছর পেঁয়াজ চাষে বিঘায় খরচ পড়েছিল এক লাখ টাকা করে। গুটি পেঁয়াজ কিনতে হয়েছিল ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা মণ। এবার গুটি পেঁয়াজ তিনি থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা মণ দরে কেনা যাচ্ছে। যে কারণে খরচ কমছে। বৃষ্টিতে কয়েক সপ্তাহ পিছিয়ে গেল এবার। তারপরও আশা করছি ভালো ফলন পাব। তবে সমস্যা হচ্ছে, সার পাচ্ছি না বাজারে। যা পাচ্ছি, দাম একটু বেশি নিচ্ছে।’
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. শহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘মুড়িকাটা পেঁয়াজ রোপণের ৯০ দিনের মধ্যে ফলন তোলা যায়। ফলে লাভের আশায় চাষিরা এ জাতের পেঁয়াজের আগাম চাষ করেন। প্রতিবছর সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ ও অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে আগাম মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ শুরু করে। কিন্তু এবার কয়েক দফায় বৃষ্টির কারণে কিছুটা দেরিতে আবাদ শুরু হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সারের দামের ব্যাপারে আমরা সচেতন আছি। ডিলারদের ওপর কড়া নজরে রেখেছি, যেন কৃষক সঠিক দামে সব উপকরণ পেয়ে মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষাবাদ করতে পারে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের এই কর্মকর্তা জানান, এ বছর জেলায় ৫ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ হবে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৫০ হাজার টন।