চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়ায় যুবদলের দুই গ্রুপে গোলাগুলিতে ছাত্রদল কর্মী নিহতের ঘটনায় আট যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এরাও যুবদল-ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। পুলিশ জানিয়েছে, খুনের ঘটনায় মামলা হওয়ার পরপরই টানা অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগরী এবং সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকায় আসামিদের অবস্থান শনাক্ত করে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাকলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইখতিয়ার উদ্দিন।
গ্রেফতার আট জনের মধ্যে ছয় জনের নাম মামলার এজাহারে আছে। তারা হলেন- সবুজ ইসলাম মিরাজ (২৪), সাইদুল ইসলাম (২০), এমরান হোসেন সাগর (৩০), তামজিদুল ইসলাম সাজু (৪৭), মো. আরাফাত (২২) ও জিহান (২২)। এদের মধ্যে সাইদুল ছাড়া সবার বাড়ি দক্ষিণ চট্টগ্রামে।
এ ছাড়া তদন্তে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা পাওয়ায় মো. ওসমান (২৮) ও দিদারুল আলম রাসেলকে (২৪) গ্রেফতার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
বাকলিয়া ওসি ইখতিয়ার উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের পরই আমরা ঘটনাস্থল থেকে ভিডিও ফুটেজসহ বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করি। ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করার কাজ শুরু করি। হত্যাকাণ্ডের প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর মামলা হয়েছে। মামলা রেকর্ডের সঙ্গে সঙ্গেই আমরা অভিযানে নামি। শহরের বাকলিয়াসহ আশপাশের এলাকা এবং পটিয়া, সাতকানিয়া, বাঁশখালীর বিভিন্ন এলাকায় একাধিক টিম একযোগে অভিযান চালিয়ে রাতের মধ্যেই আমরা আটজনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হই। তাদের সবাইকে আজ দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’
এর আগে, সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাত পৌনে ১টার দিকে নগরীর বাকলিয়া থানার সৈয়দ শাহ রোডের মদিনা আবাসিকের সামনে এক্সেস রোডে যুবদলের দুই গ্রুপে দফায় দফায় গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে মো. সাজ্জাদ (২৩) নামে এক ছাত্রদল কর্মী নিহত হন। আহত হন আরও অন্তঃত ১৩ জন।
নিহত সাজ্জাদ চসিক মেয়র ও নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনের অনুসারী এবং নগর যুবদলের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক এমদাদুল হক বাদশার গ্রুপের কর্মী ছিলেন। নগরীর বাকলিয়ার তক্তারপুল এলাকায় তাদের বাসা এবং বাড়ি কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলায়।
পুলিশ ও স্থানীয়দের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বাকলিয়া থানার সৈয়দ শাহ রোডে লাগানো ব্যানার ছেঁড়া নিয়ে বিরোধ থেকে যুবদলের এমাদাদুল হক বাদশা ও বোরহান উদ্দিনের অনুসারীদের মধ্যে সংঘাতের সূত্রপাত হয়। সেখানে মেয়র শাহাদাত হোসেন ও নগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি গাজী সিরাজের ছবি ব্যবহার করে ব্যানার লাগিয়ে ছিলেন স্থানীয় যুবদল নেতা বোরহান উদ্দিন। অবৈধ ব্যানার-পোস্টার অপসারণে মেয়রের নির্দেশনা থাকায় বাদশার অনুসারীরা নিজ উদ্যোগে সেগুলো খুলে ফেলতে গিয়েছিলেন। সেই ব্যানার খোলার সময় উভয়পক্ষে গোলাগুলি হয়।
সাজ্জাদ খুনের ঘটনায় তার বাবা মোহাম্মদ আলম মঙ্গলবার রাতে বাকলিয়া থানায় ১৭ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৩৫ থেকে ৪০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।
খুনের ঘটনার পর মেয়র শাহাদাত হোসেন বাকলিয়া থানার ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। মেয়রের অভিযোগ, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীরা অনুপ্রবেশ করে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে এবং তাদের ‘দলের ভেতর’ কেউ কেউ আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন। পুলিশকে বারবার বলার পরও তাদের গ্রেফতার না করায় হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
এদিকে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতার আট জনের সবাই চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি গাজী সিরাজের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।