চট্টগ্রাম ব্যুরো: বর্ধিত মাশুল নিয়ে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানের জন্য এক সপ্তাহের আলটিমেটাম দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা। তবে এর মধ্যেই প্রধান উপদেষ্টার সাড়া পেয়ে শান্ত হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এর ফলে আপাতত কঠোর কর্মসূচি থেকে সরে এসে বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে নগরীর আগ্রাবাদ এক্সেস রোডে একটি কনভেনশন হলে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এ তথ্য জানিয়েছেন চট্টগ্রাম পোর্ট ইউজার্স ফোরামের সভাপতি আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী। চট্টগ্রামের বাণিজ্যিক প্রসারে প্রতিবন্ধক ওজন স্কেল, বন্দর ট্রাফিক এবং চিটাগং চেম্বারকে জবাবদিহিমূলক ও ব্যবসায়ীবান্ধব করার বিষয়ে আলোচনার জন্য এ সভার আয়োজন করেন ‘চট্টগ্রাম পোর্ট ইউজার্স ফোরাম’।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী জানান, চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান মাশুল নিয়ে বন্দর ব্যবহারকারী সকল পক্ষের সঙ্গে আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে বৈঠকে বসতে সম্মত হয়েছেন। এ বৈঠকের মাধ্যমে যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত মাশুল নির্ধারণ হবে বলে তাদের আশা।
এর আগে, গত ১৮ অক্টোবর চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন সেবায় ‘অযৌক্তিক ও অতিরিক্ত’ মাশুল আরোপের প্রতিবাদে চট্টগ্রাম পোর্ট ইউজারস ফোরামের এক সভা থেকে আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী প্রধান উপদেষ্টার সাড়া পেতে এক সপ্তাহের সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। অন্যথায় চট্টগ্রাম বন্দর বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। এরপর ১৯ অক্টোবর থেকে বর্ধিত মাশুল আরোপের প্রতিবাদে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন প্রতিদিন চার ঘণ্টা করে কর্মবিরতি শুরু করে। তবে প্রধান উপদেষ্টার সাড়া পাবার পর সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনও তাদের কর্মসূচি থেকে সরে এসেছে।

মতবিনিময় সভায় চট্টগ্রাম পোর্ট ইউজার্স ফোরামের সভাপতি আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরীসহ অন্যান্যরা। ছবি: সারাবাংলা
এরপর বুধবারের সভায় চিটাগং চেম্বারের সাবেক সভাপতি আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘চট্টগ্রাম পোর্ট ইউজার্স ফোরামের প্রথম সভায় আলটিমেটাম দেওয়ার পরে বন্দরের চেয়ারম্যান স্বপ্রণোদিত হয়ে মন্ত্রণালয়ে লিখে চারটি খাতে- ট্রাক, প্রাইমমুভার, ট্রেইলার, গেট ফি খাতে বর্ধিত ট্যারিফ স্থগিতের ব্যবস্থা করেছিলেন। সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশন চার ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেছিল, সে কারণে উইথড্র করে নিয়েছি। আমরা চাইনি চট্টগ্রাম বন্দরের কোনো ক্ষতি হোক।’
‘মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার কাছে আমরা আবার চিঠি দিয়েছিলাম। উনি একটি পক্ষকে আমাদের সঙ্গে আলাপ করার জন্য নিযুক্ত করেছেন। গতকাল বন্দর চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলাপ করেছি। আমি অত্যন্ত খুশি হয়ে বলতে পারি আপনাদের, বন্দরের চেয়ারম্যান সাহেব সম্মত হয়েছেন যে উনারা বন্দর ব্যবহারকারী, ক্ষতিগ্রস্ত, স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে ১০-১৫ দিনের মধ্যে বৈঠকে বসবেন, ইনশাআল্লাহ। বৈঠকে উনারা ঠিক করবেন কোনটা যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত ট্যারিফ। সেটিই গ্রহণযোগ্য হবে।’
প্রাথমিকভাবে সফল হয়েছেন উল্লেখ করে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় পর্যায়ে অনুরোধ করব সব অ্যাসোসিয়েশনকে বন্দরের ট্যারিফ কোন কোন খাতে বেশি হয়েছে তা আমাদের জানাবেন। আমরা চেষ্টা করব সরকারের সঙ্গে বোঝাপড়া করে যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত ট্যারিফ যাতে নির্ধারণ করতে পারি। আমরা আশা করব সরকার ব্যবসায়ীদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেবে।’
সভায় বিজিএমইএর পরিচালক এমএ সালাম, চেম্বারের সাবেক সভাপতি সরওয়ার জামাল নিজাম, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ আমীরুল হক, শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন পরিচালক শাহেদ সরওয়ার, বারভিডার সাবেক সভাপতি হাবিবুল্লাহ ডন, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল আলম ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু বক্তব্য দেন।