ঢাকা: দেশের জনস্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক সুরক্ষার স্বার্থে বিদ্যমান ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন আরও শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়েছেন দেশের খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদরা। তারা বলেছেন, বর্তমান আইনে কিছু দুর্বলতা এবং নতুন কিছু চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হয়েছে—যা মোকাবিলায় আইন সংশোধন এখন সময়ের দাবি।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে ১১ জন অর্থনীতিবিদের পাঠানো বিবৃতিতে এই আহ্বান জানানো হয় ।
বিবৃতিতে সই করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান, ড. রুমানা হক, ড. অতনু রব্বানী, ড. মাসুদা ইয়াসমিন, ড. নাজমা বেগম, এসএম আব্দুল্লাহ, ড. সুজানা করিম, নাজমুল হুসাইন, ড. শাফিউন নাহিন শিমুল, অধ্যাপক জাহিদুল কাইয়ুম এবং ড. সেলিনা সিদ্দিকা।
বিবৃতিতে অর্থনীতিবিদরা বলেন, ২০০৫ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পাস এবং ২০১৩ সালে সংশোধনের মাধ্যমে সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছিল, তা প্রশংসনীয়। তবে সিগারেট কোম্পানিগুলো বরাবরের মতোই বিভ্রান্তিকর প্রচারণার মাধ্যমে আইন শক্তিশালী করার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘তামাক কোম্পানিগুলো মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে যে আইন শক্তিশালী হলে সরকারের রাজস্ব আয় কমে যাবে। বাস্তবে এই দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।’
অর্থনীতিবিদরা উদাহরণ দিয়ে বলেন, ২০০৫ সালে তামাক খাত থেকে সরকারের রাজস্ব আয় ছিল ২,৮৮৮ কোটি টাকা, যা ২০১৩ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ১০,১৭০ কোটি টাকা। আইন সংশোধনের পরবর্তী অর্থবছরে (২০১৩-১৪) তা আরও বেড়ে হয় ১২,৫৫৬ কোটি টাকা, এবং ২০২৪–২৫ অর্থবছরে রাজস্ব আয় দাঁড়ায় ৪০,৪১১ কোটি টাকা।
তারা বলেন, ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী হলেও রাজস্ব আয় হ্রাস পায়নি। বরং তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য ও করহার বৃদ্ধির ফলে আয় বেড়েছে এবং তামাক ব্যবহার কমেছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের এক যৌথ গবেষণার তথ্য তুলে ধরে অর্থনীতিবিদরা বলেন, ২০২৪ সালে তামাক ব্যবহারের কারণে স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত ব্যয় ছিল ৮৬ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে ৬৫ হাজার কোটি টাকাই স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় হয়েছে। অন্যদিকে একই সময়ে তামাক থেকে রাজস্ব আয় ছিল মাত্র ৪০ হাজার কোটি টাকা, যা ক্ষতির অর্ধেকেরও কম।
তারা জানান, তামাকজনিত রোগের চিকিৎসা ব্যয়ে প্রতিবছর প্রায় ৪ লাখ মানুষ দারিদ্র্যের দিকে চলে যাচ্ছে, যা জাতীয় অর্থনীতির ওপর বড় চাপ সৃষ্টি করছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “তামাক কোম্পানিগুলো সচেতনভাবে তরুণ প্রজন্মকে আসক্ত করতে বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করছে। তারা রেস্টুরেন্টে ধূমপান এলাকা তৈরি করছে, খুচরা বিক্রি বন্ধের উদ্যোগকে বাধাগ্রস্ত করছে, বিক্রয়স্থলে আগ্রাসী বিজ্ঞাপন দিচ্ছে এবং গোপনে ‘ভেপিং মেলা’ আয়োজন করছে।” তারা অভিযোগ করেন, এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে কোম্পানিগুলো জনস্বাস্থ্য ধ্বংসের পথ প্রশস্ত করছে।
অর্থনীতিবিদরা সিগারেট কোম্পানির ভ্রান্ত প্রচারণা থেকে নীতিনির্ধারকদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘দেশের মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষা ও অর্থনৈতিক ক্ষতি কমাতে অবিলম্বে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করতে হবে। একটি কার্যকর ও টেকসই তামাক করব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য ‘কমপ্রিহেন্সিভ তামাক কর নীতি’ গ্রহণেরও দাবি জানান তারা।’