ঢাকা: ঢাকা ও বেইজিংয়ের সম্পর্কের মধ্যে তৃতীয় কোনো দেশের ‘নাক গলানোর সুযোগ নেই’ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।
বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের মনোনীত রাষ্ট্রদূতের সাম্প্রতিক বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে বুধবার ঢাকায় এক আলোচনা অনুষ্ঠানের প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এ মন্তব্য করেন।
চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, “সম্পূর্ণরূপে কোনো বিদেশি শক্তির হুকুম ব্যতিরেকেই প্রত্যক সিদ্ধান্ত বাংলাদেশই নিয়ে থাকে। সুতরাং এটাই আমার বোঝাপড়া।
এটি (বাংলাদেশ) যাতে নিজের সক্ষমতায় আরও স্বাধীন, আরও শক্তিশালী হতে পারে, সেখানে সহযোগিতা করে যাওয়াই হচ্ছে চীনের নীতি। যাতে অত্যাবশ্যকীয়ভাবে কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের কথা আপনাদেরকে শুনতে না হয় বা হুকুমে চলতে না হয়। এটাই আমাদের নীতি।”
২৩ অক্টোবর সেনেটের শুনানিতে এক প্রশ্নে ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনয়ন পাওয়া ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন বলেছেন, চীন এবং দেশটির সামরিক বাহিনীর সঙ্গে কাজে কী ধরনের ‘ঝুঁকি’ রয়েছে, তা বোঝাতে বাংলাদেশের সরকার ও সামরিক বাহিনীর সঙ্গে কাজ করবেন তিনি।
চীন কর্তৃক বাংলাদেশের সাবমেরিন ঘাঁটি ‘সংস্কার’ এবং ‘২০টি চীনা যুদ্ধবিমান কেনার’ প্রসঙ্গে টেনে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় চীনা প্রভাব নিয়ে আপনার উদ্বেগের সঙ্গে আমি একমত। এবং (রাষ্ট্রদূত হিসেবে) নিশ্চিত হলে, চীনের কার্যক্রম, তাদের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে মেরিটাইম খাত এবং গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে জড়িত হওয়ার ঝুঁকির বিষয়টি স্পষ্ট করার জন্য আমি বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর সঙ্গে আলোচনায় যুক্ত হব। একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে, বিশেষ করে দুই দেশের সামরিক বাহিনীর আরও নিবিড় অংশীদারত্বের ফলে যে সুযোগ ও সুফল মিলবে, তা তুলে ধরব।”
ক্রিস্টেনসেনের ওই বক্তব্যের প্রসঙ্গ ধরে বুধবার (২৯ অক্টোবর) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ‘বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক: এগিয়ে যাওয়ার পথ’ শীর্ষক ওই আলোচনা সভায় প্রশ্ন করা হয় রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনকে। আলোচনা সভাটি আয়োজন করে সাবেক রাষ্ট্রদূতদের সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন অব ফরমার অ্যাম্বাসেডরস (এওএফএ)’।
এর আগে লিখিত বক্তব্যে ইয়াও ওয়েন বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন গণতান্ত্রিক উত্তরণ এবং জাতীয় পুনরুজ্জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে দাঁড়িয়ে আছে। বাংলাদেশের একটি সুষ্ঠু সাধারণ নির্বাচন, সামাজিক স্থিতিশীলতা এবং জনগণের জন্য উন্নত জীবনযাত্রা আন্তরিকভাবে কামনা করছে চীন।’
জনগণ-কেন্দ্রিক উন্নয়ন দর্শনকে সমুন্নত রাখতে, স্বাধীনতা ও আত্মনির্ভরতার চেতনাকে এগিয়ে নিতে এবং দুদেশের জাতীয় বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রেখে আধুনিকীকরণের পথ যৌথভাবে অন্বেষণের কাজ করার কথা বলেন রাষ্ট্রদূত।
‘আমরা লক্ষ্য করেছি যে বাংলাদেশের জনগণ তাদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াগুলিকে প্রাণবন্তভাবে এগিয়ে নিচ্ছে এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য প্রাণবন্তভাবে আইডিয়া প্রদান করছে। তারা শাসনব্যবস্থায় জনসাধারণের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং উন্নয়নের সুফল ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার উপায়গুলিও অন্বেষণ করছে। বাংলাদেশের সঙ্গে সুশাসন তত্ত্ব ও অভিজ্ঞতার বিনিময় জোরদারে, আমাদের নিজ নিজ জাতীয় অবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার পথ অন্বেষণে এবং গণতন্ত্রকে উন্নয়নের প্রকৃত চালিকাশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে প্রস্তুত চীন।’