ঢাকা: বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় ২১টি আসনে বিএনপির মনোনয়ন কারা পাচ্ছেন এ নিয়ে সর্বত্র আলোচনা চলছে। গত সোমবার (২৭ অক্টোবর) বিকেলে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশনা দেন।
জানা গেছে, বরিশালের ২১টি আসন থেকে এবার মনোনয়ন চাচ্ছেন তিন শতাধিক নেতা। তাদের মধ্যে অন্তত ৬০ জন ডাক পেয়েছিলেন গুলশানে। সবাইকে হাইকমাণ্ড থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দল যাকে মনোননয়ন দেবে সবাইকে তার সঙ্গে কাজ করতে হবে। ব্যত্যয় হলে ব্যবস্থা।
সম্ভাব্য প্রার্থী
বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) নির্বাচনি এলাকার চার জনকে ডাকা হয়েছিল গুলশানে। এরা হলেন- জহির উদ্দিন স্বপন, আকন কুদ্দুসুর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহান ও অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম সজল। আসনটিতে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপনকে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) আসন থেকে ডাকা হয়েছে সরফুদ্দিন সান্টু, কাজী দুলাল হোসেন, রওনাকুল ইসলাম টিপু ও সাইফ মাহমুদ জুয়েলকে। এই আসনে সরফুদ্দিন সান্টু ধানের শীষ পেতে যাচ্ছেন।
বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) এই আসনে দলের দুই জন হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছেন। বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, বর্ষীয়ান রাজনীতিক বেগম সেলিমা রহমান ও কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ আইনজীবী ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন মনোনয়ন চাচ্ছেন। এরমধ্যে জয়নুল আবেদীনের পাল্লা ভারি বলে জানা গেছে।
বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ) আসনে ডাক পেয়েছেন রাজীব আহসান, মেসবাহউদ্দিন ফরহাদ, অ্যাডভোকেট হেলাল উদ্দিন ও আব্দুল খালেক হাওলাদার। এই আসনটি ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান পেতে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
বরিশাল-৫ (সদর) বরিশালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসন বরিশাল সদর। এটি বরিশাল সিটি করপোরেশন ও কয়েকটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এখানে মনোনয়ন চাচ্ছেন হেভিওয়েট প্রার্থী সাবেক মেয়র ও সাবেক এমপি মজিবর রহমান সরোয়ার। অপরদিকে দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমতউল্লাহ, এবায়েদুল হক চাঁন ও মনিরুজ্জামান ফারুক। তবে আসনটি মজিবর রহমান পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে আবু নাসের রহমাতুল্লাহও পেতে পারেন।
বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) নির্বাচনি এলাকা থেকে ডাক পেয়েছেন আবুল হোসেন খান ও নজরুল ইসলাম খান রাজন। আসনটি সাবেক এমপি আবুল হোসেন খান পাচ্ছেন।
ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসন থেকে রফিকুল ইসলাম জামাল এবং গোলাম আজম সৈকতকে ডাকা হয়েছে। এ আসনটি রফিকুল ইসলাম জামাল পেতে যাচ্ছেন।
ঝালকাঠি-২ (নলছিটি-ঝালকাঠি) থেকে ডাক পেয়েছেন মাহবুবুল হক নান্নু, ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো, অ্যাডভোকেট শাহাদাৎ হোসেন ও ব্যারিস্টার মোহাম্মদ জাকারিয়া। তবে নির্বাচনি সমঝোতা হলে এই আসনটি লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরানকে দেওয়া হতে পারে।
পিরোজপুর-১ (সদর-জিয়ানগর-নাজিরপুর) আসন থেকে ডাকা হয়েছে নজরুল ইসলাম খান, অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেন, সাইদুল ইসলাম কিসমত ও এলিজা জামানকে। এখানে আলমগীর হোসেনের সম্ভাবনা বেশি। তবে নির্বাচনি সমঝোতা হলে এই আসনটি জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা জামাল হায়দারকে ছেড়ে দেবে বিএনপি।
পিরোজপুর-২ (ভাণ্ডারিয়া-কাউখালী-স্বরূপকাঠি) থেকে ডাক পেয়েছিলেন মাহমুদ হোসাইন ভিপি মাহমুদ, ফখরুল আলম, সুমন মঞ্জুর, আহসান কবির ও আল বিরুনী সৈকত। তবে এখানে ফখরুল আলমের সম্ভাবনা বেশি।
পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া) থেকে ডাকা হয়েছিল রুহুল আমিন দুলাল, কর্নেল (অব.) শাহজাহান মিলন, হুমায়ুন কবির ও এ আর মামুন খানকে। আসনটিতে মঠবাড়িয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক রুহুল আমিন দুলালকে গ্রিন সিগন্যাল দেওয়া হয়েছে।
বরগুনা-১ (সদর-আমতলী-তালতলী) থেকে ডাক পেয়েছিলেন নজরুল ইসলাম মোল্লা, মতিউর রহমান তালুকদার, ফিরোজ উজ জামান মামুন ও ফারুক মোল্লা। এখানে নজরুল ইসলাম মোল্লার মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
বরগুনা-২ (বামনা-বেতাগী-পাথরঘাটা) থেকে নুরুল ইসলাম মনি। তবে এই আসন থেকে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছেন লন্ডন প্রবাসী মাওলানা শামীম। তিনি দীর্ঘ ১৭ বছর পর গত ১৭ অক্টোবর দেশে ফিরে গণসংযোগ করছেন। তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে মনোনয়ন পাবেন বলে তিনি মনে করেন।
ভোলা-১ (সদর) আসন থেকে গোলাম নবী আলমগীর, হায়দার আলী লেনিন, রাইসুল ইসলাম এবং শফিউর রহমান কিরন ডাক পেয়েছিলেন। মনোনয়ন কে পাবেন জানা যায়নি। সাবেক ছাত্র নেতা হায়দার আলী লেলিন ও গোলাম নবী আলমগীরের মধ্যে একজন পেতে পারেন।
ভোলা-২ (বোরহানউদ্দিন-দৌলতখান) থেকে হাফিজ ইব্রাহিম ও শহিদুল্লাহ তালুকদার। এখানে হাফিজ ইব্রাহিমের মনোনয়ন অনেকটা চূড়ান্ত। তিনি তারেক রহমানের বন্ধু দীর্ঘ ১৭ বছর কারাবন্দি থাকা গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের ভাই।
ভোলা-৩ (লালমোহন-তজুমদ্দিন) থেকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। তিনি একক প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন।
ভোলা-৪ (চরফ্যাশন-মনপুরা) থেকে মনোনয়ন চাচ্ছেন নুরুল ইসলাম নয়ন ও নাজিমউদ্দিন আলম। এই আসনটি নাজিম উদ্দিন আলম পাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
পটুয়াখালী-১ (সদর-দুমকি-মির্জাগঞ্জ) থেকে স্নেহাংশু সরকার কুট্টি ও আলতাফ হোসেন চৌধুরী মনোনয়ন প্রত্যাশী। আসনটি দলের ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী পাচ্ছেন এটা প্রায় নিশ্চিত।
পটুয়াখালী-২ (বাউফল) থেকে মুনির হোসেন, শহিদুল আলম তালুকদার এবং ইঞ্জিনিয়ার ফারুক তালুকদার। এবার দলের কেন্দ্রীয় সহ-দপ্তর সম্পাদক মুনির হোসেন ধানের শীষ পেতে যাচ্ছেন।
পটুয়াখালী-৩ (দশমিনা-গলাচিপা) থেকে হাসান মামুন। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি হাসান মামুন বিএনপির একক প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পাওয়ার কথা। তবে এই আসনে ছয় মাসেরও বেশি সময় আগে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নূরকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গ্রীন সিগন্যাল দিয়ে রেখেছেন। আসন সমঝোতা হলে আসনটি নূর পাবেন। অন্যথায় হাসান মামুন।
পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) থেকে এবিএম মোশাররফ ও মনিরুজ্জামান মনির। আসনটি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশারফ হোসেন পাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
দলের সূত্র জানায়, মনোনয়নপ্রত্যাশীদের আন্দোলনে ভূমিকা, সাংগঠনিক অবস্থান ও জনপ্রিয়তা যাচাই করে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। নভেম্বর মাসের মধ্যে সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হবে। চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হবে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর।
বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশারফ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, যেসব আসনে মনোনয়ন নিয়ে কোনো সমস্যা নেই সেগুলো আগে থেকেই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জানিয়ে দিয়েছেন। আর যেগুলোতে ঝামেলা আছে সেগুলো নিয়ে এখন বিশ্লেষন চলছে। শিগগিরই জানিয়ে দেওয়া হবে। মোশারফ হোসেন পটুয়াখালী-৪ আসনের প্রার্থী। তিনি আগেই গ্রিন সিগন্যাল পেয়েছেন বলে জানান। জেলার চারটি আসনের মধ্যে পটুয়াখালী-১ সদর আসনের মনোনয়ন এখনো চূড়ান্ত হয়নি বলে তিনি জানান।
দলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল হক নান্নু সারাবাংলাকে বলেন, বিএনপির মতো বড় একটি দলে সংসদ-সদস্য নির্বাচন করার মতো যোগ্যতাসম্পন্ন নেতা প্রতিটি আসনেই গড়ে চার থেকে পাঁচজন করে রয়েছেন। মনোনয়ন চাইলেই যেমন সবাই পাবেন না, তেমনি দলেরও তো একটি পদ্ধতি রয়েছে। গত ২৭ অক্টোবর গুলশান কার্যালয়ে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের জন্য দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। যিনি মনোনয়ন পাবেন তার পক্ষে সবাইকে কাজ করতে হবে।
বরিশাল-৫ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, গত ১৫ বছর রাজনীতির মাঠে ছিলাম। কয়েক বছর যাবত বরিশাল-৫ আসনের গ্রামে-গঞ্জে ঘুরেছি। জনগণের সুখ-দুঃখে তাদের পাশে ছিলাম। তৃণমূলের মনোনয়ন জরিপও আমার পক্ষে। আশা করি দলের হাই কমাণ্ড আমার পক্ষে সিদ্ধান্ত দেবেন। আর সিদ্ধান্ত যদি আমার পক্ষে নাও আসে আমি ধানের শীষের কর্মী হিসেবে যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষে কাজ করব।