রাজবাড়ী: বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সামগ্রীক স্বাধীনতা ভোগ করার জন্য আগামী নির্বাচন অবাধ সুষ্টু হবে কিনা, কারিগরি হবে কিনা, কোনো ইঞ্জিনিয়ারিং হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫ সই হলো, যখন সই করেছে সব রাজনৈতিক দল, দেখা গেল সেখানে বিএনপি যে পাতায় সই করেছে, সেটা নেই। এটা দুঃখজনক কথা।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে রাজবাড়ী সদর উপজেলার পাচুরিয়া ইউনিয়নের খোলাগ্রামের বাসিন্দা গফুর মল্লিকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার পর সাংবাদিকদের তিনি এ অভিযোগ করেন।
রিজভী বলেন, ‘ড. ইউনূসকে সবাই সম্মান করে, তিনি একজন গুণিজন। তার নেতৃত্বে সরকার তাকে তো বিএনপিসহ আন্দোলনরত সব দল সাপোর্ট করে। তার গঠন করা বিভিন্ন কমিশনের দ্বারা এ ধরনের প্রতারণামূলক কাজ হবে তা মানুষ আশা করে না। জুলাই সনদে ৪৭-৪৮টি ধারা রয়েছে, তার মধ্যে কিছু ধারা আইনি করতে হলে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। এখন আছে এক কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট, দ্বিকক্ষ করতে হলে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। যে প্রস্তাবগুলো আছে এতে সংবিধান বাতিল করতে হবে। নতুন করে নতুন সংবিধান করবেন, না সংবিধানের নিয়ম স্বাধীনতার পর জনগণ ও সমাজের তাগিদ অনুযায়ী সেটা সংশোধিত হতে হয়। এটা আমেরিকান, ভারতে হয়েছে। জনমতের প্রতিফলন নিশ্চিত করার জন্য যেটা প্রয়োজন সেটা করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘২৭০ দিনের মধ্যে পার্লামেন্ট গঠনের পর পাস না হলে সেটা অটোমেটিক পাস হবে। পৃথিবীর কোনো দেশে এ ধরনের কোনো ঘটনা নেই, এককেন্দ্রীক, একদলীয় কর্তৃত্ববাদী দেশে সম্ভব। পার্লামেন্ট নির্বাচনের কি দরকার, গণভোট কি দরকার। সত্যিকার গণতন্ত্রের জন্য অফুরান্ত লড়াই আবু সাঈদ, মুগ্ধ, আহনাফ, ওয়াসিম আকরাম জীবন দিল, তার ঐকমত্য কমিশনের এ ধরনের ভেজাল, জনগণের সঙ্গে একটি প্রতারণামূলক জুলাই সনদ কিভাবে হয়। আমরা নিরাশাবাদী নই, আমরা আশাবাদী। জনগণের স্বার্থকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে, সংবিধান অনুযায়ী করতে হবে। আওয়ামী লীগ আসলে একরকম, বাকশাল আসলে একরকম, সংবাদপত্র নিষেধ করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র, মানুষের কথা বলার স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দিয়েছেন। গণতন্ত্র ও ধর্মীয় মূল্যবোধ জিয়াউর রহমান দিয়েছেন। নতুন সংবিধান করতে চান, সেটা অন্য জিনিস। জুলাই সনদে, সংবিধানের মধ্যে যেটা করা হয়েছে, সেটা পার্লামেন্টের মাধ্যমে পাশ করতে হবে। এভাবে আমরা সুন্দর রাষ্ট্র করতে পারব না। এখানে বহু ষড়যন্ত্রকারীরা কাজ করছে। আমরা জনগণের জন্য কাজ করব। গণতান্ত্রিক শাসনে আমরা কাজ করব।’
আর্থিক সহায়তা পেয়ে জন্মান্ধ গফুর মল্লিক বলেন, ‘আল্লাহর হুকুমে তারেক রহমান আমাকে আর্থিক সহায়তা করেছে। তারেক রহমানের দেওয়া আর্থিক সহায়তার টাকা দিয়ে আমি এক পাখি জমি কিনব এবং বাড়িতেই কিছু সদাইপাতি এনে টুকটাক ব্যবসা করব। আর ট্রেনে নাড়ু বিক্রি করব না। বাড়িতে কিছু টুকটাক বানিয়ে বিক্রি করব, বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে যাব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি তারেক রহমানের জন্য দোয়া করি। জিয়া পরিবারের জন্য দোয়া করি। তারেক রহমান নির্বাচনে পাস করলে আমার সৌভাগ্য হবে। কারণ সে পাস করলে ফের আমার সঙ্গে এসে দেখা করবে।’
জানা গেছে, রাজাবাড়ীর জন্মান্ধ গফুর মল্লিক (৭৯) ট্রেনে ও বিভিন্ন স্থানে ফেরি করে বাদাম-নাড়ু বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এমন দৃশ্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নজরে আসলে তিনি গফুর মল্লিকের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেন বিএনপি নেতাকর্মীদের। তারই ধারাবাহিকতায় ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর পক্ষ থেকে জন্মান্ধ গফুর মল্লিককে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
এ সময় রাজবাড়ী জেলা বিএনপির সদস্যসচিব অ্যাড. কামরুল আলম, যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাড. আসলাম মিয়া, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. হারুন অর রশিদ হারুন, আমরা বিএনপি পরিবারের আহ্বায়ক আতিকুল রহমান রুমন, সদস্যসচিব কৃষিবিদ মোকছেদুল মমিন মিথুন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব মো. তুহিনুর রহমান, জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম রোমান, রাজবাড়ী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেদ পাভেলসহ বিএনপি জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
 
                                     
                         
                         
                        