রাজবাড়ী: শাওন শেখ, বয়স ২২ বছর। শারীরিক প্রতিবন্ধী। রাজবাড়ী পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের জেলখানাসংলগ্ন এলাকার অসুস্থ রিকশাচালক শফিক শেখের ছেলে। তিনি ভাইয়ের মধ্যে তিনি মেজো। এই যুবক অজানা রোগে আক্রান্ত হয়ে হারিয়েছে চলৎশক্তি। কিন্তু টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারেনি তার পরিবার। তবে শাওনের অক্ষমতা ও দারিদ্রতা তাকে দমাতে পারেনি। চলাচলের শক্তি হারালেও মনের শক্তি ও জেদের জোরে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি। কোনো অনু্কম্পার সুযোগ না নিয়ে নিজের হুইলচেয়ার-ই বানিয়ে ফেলেছেন ব্যতিক্রমী এক দোকান।
২০২১ সালে রাজবাড়ী সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে থেকে এসএসসি পাস করেন শাওন। এর পর অজানা রোগে আক্রান্ত হয়ে হারিয়ে ফেলেন চলাফেরার শক্তি। এক পর্যায়ে বন্ধ হয়ে যায় লেখাপড়াও। এখন তিনি নিজেই কিছু টাকা জমিয়ে হুইলচেয়ারে ভ্রাম্যমাণ একটি দোকান সাজিয়েছেন। তার দোকানে পাওয়া যায় চিপস, চানাচুর, বিস্কুট, চকলেটসহ মুখোরচক খাবার। প্রতিদিন সকালে তার বাবা রিকশার পেছনে হুইলচেয়ার বেঁধে নিয়ে এসে দোকান সাজিয়ে রেখে যান রাজবাড়ী জেলা শহরের শহিদ স্মৃতি স্টেডিয়াম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে। দিন শেষে নিজের আয়ের টাকায় কিনছেন মায়ের ওষুধ ও ছোট ভাইয়ের খাবার।

শাওনের সঙ্গে কথা হয় সারাবাংলার এই প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, ‘আমি এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার পর আমার হাত-পা শুকিয়ে যেতে থাকে। ভালোভাবে চলাচল করতে পারছিলাম না। আমার পড়ার অনেক ইচ্ছা ছিল। ভেবেছিলাম এইচএসসিতে ভর্তি হব। কিন্তু পারি নাই। অনেকে বলেছে ভিক্ষা করতে, কিন্তু আমি করিনি। একদিন শুয়ে শুয়ে ভাবলাম, কিছু একটা করা উচিত। তার পর হুইলচেয়ারে বসে ব্যবসার আইডিয়া মাথায় আসে। তবে হুইল চেয়ারটি হাত দিয়ে চালাতে আমার খুব কষ্ট হয়। আপনারা যদি আমার পাশে থেকে সহযোগিতা করেন তাহলে এই ব্যবসা বড় করতে পারব। বেশি পণ্য রেখে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বিক্রি করতে পারব। আমার মায়ের চিকিৎসা করাতে পারব এবং আমিও চিকিৎসা নিতে পারব।’
স্কুলটির সামনে থেকে দেখা হয় শাওনের বাবা শফিক শেখের সঙ্গে। সারাবাংলার এই প্রতিবেদকে তিনি বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ, রিকশা চালাই। থাকি ভাড়া বাসায়। এই রিকশা চালিয়ে যে টাকা ইনকাম করি সেটা দিয়ে সংসার চালাই। শাওন প্রায় চার বছর ধরে অসুস্থ, ওর মাও অসুস্থ। শাওন অসুস্থ হওয়ার পর রাজবাড়ী ও ফরিদপুরে ডাক্তার দেখিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো হয়েছে। কিন্তু তারা কোনো রোগ ধরতে পারেনি। ডাক্তাররা বলেছেন, ঢাকায় নিয়ে ওর শরীরের মাংস কেটে একটা পরীক্ষা করাতে। সেই টাকা জোগাড় করতে পারিনি। সেজন্য ঢাকায় নেওয়া হয়নি। ছেলেটার একটা প্রতিবন্ধী কার্ড ছিল। সেই ভাতাও বন্ধ হয়ে গেছে। এখন ছেলের অসুস্থতা দেখে ওর মাও অসুস্থ হয়ে পড়েছে।’

রাজবাড়ী জেলার সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক রুবাইয়াত মো. ফেরদৌস সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের কোনো ভাতা কার্যক্রম বন্ধ নেই। সবগুলো ভাতা চালু আছে। তবে শাওন নামের ওই ছেলেটি যদি ভাতা না পেয়ে থাকেন তাহলে আমাদের সংশ্লিষ্ট অফিসে যোগাযোগ করতে বলব। তিনি যোগাযোগ করলে সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। তিনি যেহেতু ব্যবসা করছেন, সেহেতু প্রতিবন্ধী ঋণ নিতে পারবেন। আমরা তাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব।’
