আজ ৩১ অক্টোবর, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রহস্য আর রঙিন সাজসজ্জায় উদযাপিত হচ্ছে হ্যালোইন। একে কখনো বলা হয় ভূতের উৎসব, কখনো বলা হয় মৃতদের দিন। এই হ্যালোইনের উদযাপনের পেছনে রয়েছে হাজার বছরের রহস্যময় ইতিহাস, লোকবিশ্বাস, ধর্মীয় রূপান্তর এবং সময়ের সঙ্গে বদলে যাওয়া মানব-সমাজের চিন্তা-ভাবনা।
হ্যালোইনের যাত্রা শুরু দুই হাজার বছরেরও বেশি সময় আগে আয়ারল্যান্ড ও স্কটল্যান্ড অঞ্চলে বসবাসকারী প্রাচীন কেল্টিক জনগোষ্ঠীর হাত ধরে। সেই সময় ‘স্যামহেইন’ নামে পরিচিত এই রাতকে তারা বিশ্বাস করত জীবিতদের জগৎ ও আত্মার জগৎকে এক সূতোর মধ্যে বাঁধা এক মুহূর্ত হিসেবে। তাদের ধারণা ছিল, বছরের এ দিন মৃত আত্মারা পৃথিবীতে ফিরে আসে, আর সেই অতৃপ্ত আত্মাদের দূরে রাখতেই আগুন জ্বালানো হতো, পশুর চামড়া পরে চরিয়ে বেড়ানো হতো, মুখোশ পরে ভয়ঙ্কর আকৃতি ধারণ করা হতো। ঠিক সেখান থেকে আজকের কস্টিউম আর ভৌতিক রূপসজ্জার জন্ম।
খ্রিস্টান যুগে এসে স্যামহেইন বদলে যায় প্রার্থনা ও সাধুদের স্মরণে পালিত ‘অল হ্যালোজ ইভ’-এ, যার সংক্ষিপ্ত রূপই ধীরে ধীরে দাঁড়ায় ‘হ্যালোইন’। লোকজ আচার, ধর্মীয় ইতিহাস সবকিছু মিলিয়ে দিনটি হয়ে ওঠে বহুমাত্রিক এক দিন। সময়ের সঙ্গে তা রূপ কল্পনার উৎসব, ভয় আর ভক্তির দুদিক মিলিয়ে গড়ে উঠেছে আধুনিক হ্যালোইন।
আজকের দিনে হ্যালোইন সবচেয়ে বেশি উদযাপিত হয় যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, আয়ারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। শিশুরা ‘ট্রিক-অর-ট্রিট’-এর মাধ্যমে দরজায় কড়া নেড়ে মিষ্টি নেওয়ার ঐতিহ্যে মেতে ওঠে এদিন। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তরুণ-তরুণীরা ভৌতিক, পৌরাণিক, কার্টুন বা সিনেমার চরিত্রে সাজে। আয়োজন করা হয় থিম-পার্টি, হরর মুভি ম্যারাথন, রাস্তার সাজসজ্জা ও বিনোদনের। কুমড়ার লণ্ঠন জ্যাক-ও-ল্যান্টার্ন এখন শুধু ভয় নয়, বরং এক ধরনের শিল্প ও প্রতীক যা, শরতের ফসল আর নতুন ঋতুর বার্তা বহন করে।
তবে শুধু বিনোদন নয় হ্যালোইনে এক ধরনের স্মরণের ছাপও রয়ে গেছে। মৃত্যু, স্মৃতি, অজানা ও অদেখার প্রতি মানুষের সেই আদিম ভীতি-কৌতূহলই যেন আধুনিক রূপে ফিরে আসে। কেউ এটিকে কুসংস্কারের অবশেষ বলেন, কেউ পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রতীক; আবার কারও কাছে এটি পরিবার-বন্ধুদের সঙ্গে এক রাতের আনন্দ, সৃজনশীলতা, সাজসজ্জার উৎসব।
সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানী ঢাকায়ও হ্যালোইন উপলক্ষ্যে উৎসবের আয়োজন করা হয়। এর বেশিরভাগই তরুণ-তরুণী, যারা তাদের সৃজনশীলতার মাধ্যমে ভৌত্তিক বিভিন্ন সাজসজ্জায় এ উৎসব পালন করে।
