Friday 31 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গণভোট না জাতীয় নির্বাচন: উত্তপ্ত রাজনীতি

মো. মহসিন হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৩১ অক্টোবর ২০২৫ ১৪:৫৯ | আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২৫ ১৮:৩০

প্রতীকী ছবি।

ঢাকা: আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের জন্য গণভোট জাতীয় নির্বাচনের আগে হবে না একই দিনে হবে এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা দেখা দিয়েছে। বিএনপি বলছে এই গণভোট জাতীয় নির্বাচনের দিনে হতে হবে। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ আটটি দল জাতীয় নির্বাচনের আগে নভেম্বর মাসের মধ্যে গণভোট দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। আর জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সুনির্দিষ্ট সময় না বললেও সংসদ নির্বাচনের আগেই গণভোট আয়োজনের পক্ষে মত দিয়েছে। এনিয়ে রাজনীতির মাঠ এখন উত্তপ্ত।

জানা গেছে, সাংবিধানিক আদেশের মাধ্যমে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন এবং ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন বা আগে জুলাই সনদ নিয়ে গণভোট আয়োজনের সুপারিশ করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এই সুপারিশে তারা গণভোট আয়োজনের জন্য সুনির্দিষ্ট তারিখ না দিয়ে সমস্যা তৈরী করেছে। এ বিষয়ে তারা সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে বলেছে। এখন গণভোট আগে হবে না জাতীয় ভোটের দিনে হবে এটাই বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে। আর এটা নিয়ে রাজনীতিক দলগুলো এখন মুখোমুখি অবস্থানে।

বিজ্ঞাপন

এ প্রসঙ্গে গতকাল ৩০ অক্টোবর রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত দলটির স্থায়ী কমিটির এক সংবাদ সম্মেলনে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারির এখতিয়ার সংবিধান অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। একই সঙ্গে জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট অনুষ্ঠান অপ্রয়োজনীয়, অযৌক্তিক ও অবিবেচনাপ্রসূত। এটা বিএনপি কখনো মেনে নেবে না।

এর আগে গত ২৮ অক্টোবর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট বিষয়ে বিএনপি একমত নয়। তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে হবে, এর বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নাই।

এদিকে ৩০ অক্টোবর বিকেলে মগবাজার আলফালাহ মিলনায়তনে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে দলটির নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচন চায়। তবে নির্বাচনের আগে নভেম্বর মাসেই জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন আদেশের ওপর একটি গণভোট চায় জামায়াত। গণভোটের মাধ্যমে পাস করা আদেশের ভিত্তিতেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন দিতে হবে।

এদিকে ৩০ অক্টোবর দুপুরে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে আগামী নভেম্বরের মধ্যে গণভোট করাসহ পাঁচ দাবিতে নির্বাচন কমিশনের কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ আটটি সমমনা দল।

স্মারকলিপি দেওয়ার পর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘বর্তমান সময়ের আলোচিত বিষয় হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদের আইনি ভিত্তি। আমরা দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের কাছে নভেম্বরের মধ্যে গণভোট আয়োজনের দাবি জানিয়েছি।’

কোনো কোনো দল জাতীয় নির্বাচন আর গণভোট এক দিনে আয়োজনের প্রস্তাব করেছে উল্লেখ করে এই জামায়াত নেতা বলেন, ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হোক, কিন্তু জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের যে চেতনা, ছাত্র–জনতার রক্তের যে স্বীকৃতি আমাদের দিতে হবে, সে জন্য জাতীয় নির্বাচন আর গণভোট এক দিনে হতে পারে না।

জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে একই দাবিতে স্মারকলিপি দিতে যায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন। প্রত্যেকটি দলই একই ভাষায় জাতীয় নির্বাচনের আগে নভেম্বর মাসে গণভোট চেয়েছে।

এদিকে গত ২৮ অক্টোবর জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন রূপরেখা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী জুলাই সনদ বাস্তবায়নে ছয় ধাপের রূপরেখা তুলে ধরে জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনের দাবি করেছেন। তিনি বলেন, অভ্যুত্থানের দাবি অনুযায়ী সংবিধান সংশোধনের গণভোট আগে হলে পরবর্তী নির্বাচনেই বেশকিছু সংস্কার বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।

রাজনীতিবিদদের মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) ঢাকায় ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া কিংবা গণভোট নিয়ে খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

উপদেষ্টা বলেন, ‘গণভোট নিয়ে বিরোধ তো তীব্রতম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এসব বিষয়ে আমাদের একটা সময় সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধান উপদেষ্টা। আমরা তাকে সহায়তা করার জন্য থাকব। সিদ্ধান্ত নির্দিষ্ট কেউ নেবেন না, এটা আপনারা নিশ্চিত থাকেন। এই সিদ্ধান্ত প্রধান উপদেষ্টা নেবেন। আমাদের সঙ্গে পরামর্শের প্রয়োজন হলে তিনি করবেন এবং আমরা যে সিদ্ধান্ত নেব, সেখানে আমরা দৃঢ় থাকব। আর সিদ্ধান্ত খুব দ্রুত নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার সারাবাংলা প্রতিবেদকের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ঐকমত্য কমিশন সরকারের কাছে যে রিপোর্টটা দিয়েছে, ওখানে তারা কংক্রিট কোনো কথা বলেনি। বলেছে যে জাতীয় নির্বাচনের দিনে অথবা আগে যেকোনো সময় (গণভোট) হতে পারে। অর্থাৎ তারা ঝুলিয়ে রেখেছে। এটা বলায় ক্রিটিক্যাল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বল চলে গেছে সরকারের কোর্টে। এখন সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আরও বলেন, ঐকমত্য কমিশন যদি সুনির্দিষ্ট করে জাতীয় নির্বাচনের আগে নভেম্বরে গণদাবি অনুযায়ী গণভোটের তারিখটা বলে দিত তাহলে কিন্তু আর ঝামেলা পাকাত না। গণভোটের তারিখ ঘোষণায় যত দেরি হবে, জাতীয় নির্বাচন তত সংকটে পড়বে।

বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ সারাবাংলাকে বলেন, জামায়াত সবসময় ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করে আসছে। ১৯৪১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই দলটি কখনো জনগণের পক্ষে ছিল না। ১৯৭১ সালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়। তখন জামায়াত রাজাকারের খাতায় নাম লিখিয়ে দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। এখনও দেশের সব মানুষ যখন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে, তখন পিআর আর গণভোটের নামে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।

গণভোট আগে না পরে এর সমাধান কি এমন প্রশ্নের জবাবে আবদুস সালাম বলেন, ‘আমি মনে করি জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য গণভোট এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচন একই দিনে হলে ভাল হবে। একই কর্মকর্তারা ভোট গ্রহণ করবেন। একই ভোটার ভোট দেবে। দুইবারে ভোট নিতে গেলে খরচেরও বিষয় আছে। সুতরাং একবারে হলে সমাধান হবে।’

সারাবাংলা/এমএমএইচ/জিজি
বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর