চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন স্থাপনা দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে গণঅনশন কর্মসূচি পালন করেছে শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ)। এতে সংহতি জানিয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ শাহআলম দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে বড় ধরনের চক্রান্ত চলছে বলে হুঁশিয়ার করে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদের আহ্বান জানান।
শনিবার (১ নভেম্বর) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত নগরীর জামালখানে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে এ অনশন কর্মসূচিতে বিভিন্ন সংগঠনের শ্রমিক-কর্মচারীরা অংশ নেন।
অনশন শেষে আগামী ৮ নভেম্বর বিকেল ৩টায় নগরীর লালদীঘি ময়দান থেকে পুরাতন রেলস্টেশন পর্যন্ত গণমিছিল এবং ১৫ নভেম্বর চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে শ্রমিক কনভেনশন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
কর্মসূচিতে সিপিবির পক্ষ থেকে সংহতি জানিয়ে মোহাম্মদ শাহআলম বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরের একটা কনটেইনার টার্মিনাল, নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল, সেটা ডিপি ওয়ার্ল্ডকে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই ডিপি ওয়ার্ল্ড কারা ? তারা দেশে-দেশে সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠীর চক্রান্ত বাস্তবায়নে কাজ করে। লালদিয়ার চরও বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এজন্য আজ শ্রমিক-কর্মচারী ভাইয়েরা অনশনে বসেছেন। এভাবে আমরা ১৯৯৬ সালে মার্কিন প্রতিষ্ঠান এসএসএ পোর্টকে চট্টগ্রাম বন্দর তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে সেটা ঠেকিয়েছিলাম।’
‘এই ডিপি ওয়ার্ল্ডকে ডেকে চট্টগ্রাম বন্দরে এনেছিল আওয়ামী লীগ। তাদের পতন হয়েছে, অথচ অন্তর্বর্তী সরকার তাদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করছে। বন্দরকে বাঁচানোর জন্য আন্দোলন করলেও আমাদের একইসঙ্গে আরও কিছু বিষয় বুঝতে হবে। এই যে ডিপি ওয়ার্ল্ড, স্টারলিংক আর আরাকানে করিডোর- তিনটি বিষয় একটি আরেকটির সঙ্গে জড়িত। আমাদের দেশের বিরুদ্ধে ভূরাজনৈতিক চক্রান্তের সাথে এসব বিষয় জড়িত।’

গণঅনশন কর্মসূচি পালন করে শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ)। ছবি: সারাবাংলা
শাহআলম আরও বলেন, ‘স্টারলিংকের সঙ্গে ইতোমধ্যে চুক্তি হয়ে গেছে, তাদের দেশে নিয়ে আসা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরকে ডিপি ওয়ার্ল্ডের কাছে দিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে আর ওইদিকে আরাকানে করিডোর দেওয়া হচ্ছে। আরাকানে করিডোর দেওয়ামাত্র বিভিন্ন ধরনের সাপ্লাই এই বন্দর থেকে হওয়া শুরু করবে। সুতরাং আমাদের দেশের জাতীয় স্বাধীনতা, সাবভৌমত্বের বিরুদ্ধে একটা বড় চক্রান্ত চলছে, এটা বুঝতে হবে। শুধু শ্রমিক-কর্মচারী নয়, দেশের সর্বস্তরের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ করতে হবে। দেশের বিরুদ্ধে এই চক্রান্ত বন্ধ করতে অন্তর্বর্তী সরকারকে বাধ্য করতে হবে।’
ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের (টিইউসি) চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সভাপতি ও শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য তপন দত্ত বলেন, ‘দেশের কৌশলগত সম্পদ বিদেশিদের হাতে তুলে দেয়ার এই চক্রান্ত জনগণ কখনোই মেনে নেবে না। সরকারকে অবশ্যই এনসিটি ও লালদিয়ার চর ইজারা দেয়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে। অন্যথায় হরতাল-অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচির মাধ্যমে চট্টগ্রাম অচল করে দেয়া হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল নেতা ও চট্টগ্রাম বন্দর সিবিএ’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী শেখ নুরুল্লাহ বাহার বলেন, ‘রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো জনগণের সম্পদ রক্ষা করা, বিক্রি বা ইজারা দেওয়া নয়। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা।’
অনশন কর্মসূচির উদ্বোধন করে স্কপের কেন্দ্রীয় নেতা ও জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর দেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি। সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত ও আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন এনসিটি বর্তমানে দেশের সবচেয়ে সফল কনটেইনার টার্মিনাল। অথচ এটিকে বিদেশি কোম্পানি ডিপি ওয়ার্ল্ডের হাতে তুলে দেয়ার সরকারি সিদ্ধান্ত জাতীয় স্বার্থবিরোধী ও আত্মঘাতী। এই সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই মেনে নেয়া হবে না।’
টিইউসি’র কেন্দ্রীয় সংগঠক ফজলুল কবির মিন্টুর সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি এস কে খোদা তোতন, ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সভাপতি খোরশেদুল আলম, বাম গণতান্ত্রিক জোট চট্টগ্রাম জেলার সমন্বয়কারী শফি উদ্দিন কবির আবিদ, বাসদ নেতা আল কাদেরী জয়, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শ ম জামাল উদ্দিন, ডক শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক তসলিম হোসেন সেলিম, টিইউসি চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মছিউদ্দৌলাও স্কপের যুগ্ম আহ্বায়ক রিজোয়ানুর রহমান খান, বিএলএফ চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সভাপতি নুরুল আবসার তৌহিদ, জাহেদ উদ্দিন শাহিন, শানেওয়াজ চৌধুরী মিনু, ইফতেখার কামাল খান, কাজী আনোয়ারুল হক হুনিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, শ্রমিক, পেশাজীবী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা।
এর আগে গত ২২ অক্টোবর ইজারা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে স্কপ। সমাবেশ শেষে বন্দর এলাকার দিকে মিছিল নিয়ে যেতে চাইলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। ওই কর্মসূচি থেকেই গণঅনশন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছিল।