নোবিপ্রবি: নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) শহীদ মুগ্ধ মেডিকেল সেন্টারের ডেপুটি চিফ মেডিকেল অফিসার ডা. ইসমত আরা পারভীন তানিয়ার বিরুদ্ধে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে পাঁচ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ অনুযায়ী, মো. আরাফাতুল ইসলাম নামের এক চাকরিপ্রার্থী ২০২৩ সালের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির আওতায় লাইব্রেরি অ্যাসিস্ট্যান্ট, সেমিনার-লাইব্রেরি অ্যাটেনডেন্ট ও কার্যসহকারী—এই তিনটি পদের জন্য আবেদন করেন। এ সময় ডা. তানিয়া তাকে ওই তিনটির যেকোনো একটিতে চাকরি রিটেন টিকলে ভাইভায় টিকিয়ে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে তার কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা নেন। তবে জুলাই আন্দোলনের মুখে আওয়ামী সরকারের পতনের পর তিনি নিয়োগ দিতে ব্যর্থ হন এবং পরবর্তীতে ওই ৫ লাখ টাকা ফেরত দিতেও অস্বীকৃতি জানান।
এ ঘটনায় নিরুপায় হয়ে ভুক্তভোগী আরাফাত ইসলাম ২৭ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত অভিযোগ জমা দেন।
অভিযোগ পত্রে তিনি উল্লেখ করেন, ২০২৩ সনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে আমি ৩টি পদে আবেদন করি। এরপর আমাকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে, সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. ইসমত আরা পারভীন (তানিয়া) প্রলোভন দেখায় । এরপর তিনি আমার আবেদনকৃত ৩ পদের যেকোনো ১ পদে আমাকে চাকুরি দিবে বলে আমি ও আমার পরিবার থেকে ৫ লাখ টাকা নেন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি আমাকে কোনো পদে নিয়োগ দিতে পারেন নি এবং আমার টাকা ফেরত দিতে অস্বীকার করেন।’
এদিকে চাকরি প্রার্থীর স্বজন ও অভিযুক্ত ডা. তানিয়ার কথোপকথনের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ফাসঁ হওয়া অডিওতে তানিয়াকে বলতে শুনা যায়-“আমি কি না চেষ্টা করে আছি নাকি? চেষ্টা না করে কি এভাবে বলতেছি। আমার হাসবেন্ড এর লাখ লাখ টাকা আটকে আছে আমি কারে গিয়ে বলব বলেন? আমার হাসবেন্ড নিজেই বিরক্ত কি করব, কোথায় থেকে শুরু করব আমরা কিছুই বুঝতেছি না।’’
কথোপকথনে তিনি বলেন, ‘‘আপনি এটা ওয়াদা রাখেন যতদিন আমি বেচে আছি আমি কবরে যাওয়ার আগে হলেও আপনার ব্যবস্থা করে যাব। আপনি অন্তত এটা আমরা বিষয়ে নিশ্চিত থাকেন। এখন আল্লাহ কপালের নসিব খারাপ দিছে আপনাদের একটু ধৈর্য ধরতে হবে বুঝছেন। আপনি ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ধৈর্য ধরেন ইনশাআল্লাহ দেখি আওয়ামী লীগ থাক বা না থাক ওরে শুধু রিটেনটা টিকতে বলেন। সে কয়েকদিন আগে একটা পরীক্ষা দিছে রিটেনও টিকে নাই।’’
অডিওতে তিনি আরও বলেন, ‘‘কখনো আমি এইসব কাজ করি না। জাহিদ (চাকরি প্রার্থীর বোন জামাই) আমাকে চাপাচাপি করছে বলে, না হয় এইসব কাজ আমি করি না। এইসব কাজ করতে আমার বিরক্ত লাগে। নিরুপায় হলে আমরা কিভাবে সমাধান করব? ওনারা নেতা মানুষ ওনারা কেউ নেই, দেশে ওনাকে কিভাবে আমি খুজে বের করব?
সামনে সার্কুলার হবে পরীক্ষা হবে আমরা টিকাই দিব। এই ধরণের ফালতু ছাত্ররা কেমনে পরীক্ষা দিবে? রিটেন টিকাই দেওয়ার দায়িত্ব কি আমাদের? রিটেন টিকুক ভাইবা আমরা করাই দিব। সেটা যেই সরকারই হোক। আগে রিটেন দিতে বলেন- রিটেনে টিকলে তারপর ভাইবা। পৃথিবীর কোথায় আছে রিটেন টিকাই দিতে হবে? গাধার বাচ্চাদের। রিটেন টিকতে বলেন। রিটেন টিকার মতো ছেলে না হলে কেমনে পাস করাই দিব। আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি, ওকে বলেন রিটেন এ টিকতে, ভাইবা তে আমি ব্যবস্থা করে দিব। অনেক সময় রিটেন টিকলে ও ভাইবা তে আউট করে দেয়। আমরা তাও চেষ্টা করে দেখব।”
এ বিষয়ে ডা.ইসমত আরা পারভীন তানিয়ার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে সরাসরি দেখা করতে মেডিকেল সেন্টারে গিয়েও তাকে পাওয়া যায় নি।
ভুক্তভোগীর অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার তামজিদ হোসাইন চৌধুরী বলেন, ‘ডা. তানিয়ার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ প্রমান সাপেক্ষে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’