Sunday 02 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নেপাল হয়ে কানাডা-ইউরোপগামীদের বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা

ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট
২ নভেম্বর ২০২৫ ১৯:০৬ | আপডেট: ২ নভেম্বর ২০২৫ ১৯:৫১

ঢাকা: বাংলাদেশ থেকে নেপাল হয়ে কানাডা, ইউরোপ কিংবা অন্যান্য দেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে একটি মানবপাচার চক্র বাংলাদেশি তরুণদের ফাঁদে ফেলছে। প্রবাসে পাঠানোর নামে নেপালে নিয়ে গিয়ে তরুণদের জিম্মি করছে এবং নির্যাতন করে পরিবার থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করছে এই চক্র। এমন পরিস্থিতিতে বিদেশগামীদের বিশেষ সচেতন থাকতে হবে।

সম্প্রতি এভাবে প্রতারিত তিন বাংলাদেশিকে উদ্ধার করেছে ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম। রোববার (২ নভেম্বর) ব্র্যাকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে বিদেশগামীদের সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান জানান, সম্প্রতি সিলেটের এক ব্যক্তির মাধ্যমে তারা খবর পান— তার ভাইসহ তিনজনকে কানাডায় পাঠানোর প্রলোভন দেখানো হয়। শর্ত ছিল, কানাডায় পৌঁছানোর পরই সব খরচ পরিশোধ করতে হবে। সেই অনুযায়ী গত ১৩ অক্টোবর তিনজনকে নেপালে নেওয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

সেখানে একটি হোটেলে রেখে চক্রটি তাদের পাসপোর্ট ও মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে। এরপর তাদের পাসপোর্টে কানাডার ভিসা ও টিকিট লাগিয়ে ছবি পাঠানো হয় পরিবারের কাছে। চক্রের সদস্যরা দাবি করে—তারা কানাডায় পৌঁছে গেছে। কানাডার একটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে স্থানীয় দালালকে পাঁচ লাখ টাকা দিতে বলা হয়। পরবর্তীতে প্রত্যেকের কাছ থেকে আরও ১২ লাখ টাকা দাবি করা হয়।

পরিবারগুলো সন্দেহ প্রকাশ করলে অস্ত্রের মুখে জিম্মিদের বলতে বাধ্য করা হয়— আমরা কানাডায় পৌঁছে গিয়েছি, কোম্পানির পক্ষ থেকে ১৫ দিনের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

একজনের পরিবার বিষয়টি যাচাই করতে গিয়ে স্থানীয় দালালের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, কানাডায় তাদের পরিচিত ব্যক্তির কাছে ভাইকে পৌঁছে দিলেই ১২ লাখ টাকা পরিশোধ করবেন। কিন্তু পাচারকারীরা তখন টালবাহানা শুরু করে এবং নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দ্রুত টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দেয়।

ব্র্যাক জানায়, পরিবারগুলো গত ২৬ অক্টোবর পুরো ঘটনা জানিয়ে ব্র্যাকের সঙ্গে যোগাযোগ করে উদ্ধার সহযোগিতা চান। এরপর ব্র্যাকের পক্ষ থেকে সিআইডি ও নেপালের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি থানায় মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা রুজু হয়। ওই রাতেই সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ ও সিআইডির যৌথ অভিযানে স্থানীয় একজন দালালকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেফতারের খবর নেপালের পাচারকারীদের কাছে পৌঁছলে তারা ওই দিন রাত ৩টার দিকে কাঠমান্ডু বিমানবন্দরের পাশে তিনজনকে ছেড়ে দেয়। ৩০ অক্টোবর তারা ঢাকায় ফেরেন। এরপর ব্র্যাকের ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম তাদের সহায়তা করে এবং গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা তাদের জবানবন্দি নেন।

ব্র্যাক আরও জানিয়েছে, শুধু কানাডা নয়—ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে একইভাবে নেপালে আটকে রেখে অস্ত্রের মুখে ভয়ভীতি ও নির্যাতনের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটছে।

কারণ, নেপালে যেতে ভিসা লাগে না এবং অন-অ্যারাইভাল ভিসা পাওয়া যায়; এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে পাচারকারীরা। বিশেষ করে ‘কানাডায় পৌঁছানোর পর টাকা পরিশোধ করা যাবে’, এমন প্রলোভনে পড়ছেন অনেকেই।

নেপালের পুলিশ এমন ঘটনায় একাধিকবার বাংলাদেশিদের উদ্ধার করলেও এই প্রতারণা বন্ধ হয়নি। তাই বিদেশগামীদের সতর্ক থাকা জরুরি এবং এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটলে দ্রুত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও জানাতে হবে।

পাশাপাশি বিদেশে বিপদে পড়া যে কেউ ব্র্যাক মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারে যোগাযোগ করতে পারেন। আন্তর্জাতিক ও সরকারি সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে ব্র্যাক তাদের সহায়তা ও পুনর্বাসনে কাজ করবে।

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর