Monday 03 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দুবলার চরের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন তীর্থযাত্রীরা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৩ নভেম্বর ২০২৫ ১৬:৩৪ | আপডেট: ৩ নভেম্বর ২০২৫ ১৮:০১

দুবলার চরের পথে তীর্থযাত্রীরা। ছবি: সারাবাংলা

বাগেরহাট: রাশ উৎসবে অংশ নিতে মোংলা থেকে বঙ্গোপসাগরে দুবলার চরের উদ্যেশ্যে সোমবার (৩ নভেম্বর) ভোররাত থেকে রওয়ানা শুরু করেছেন তীর্থযাত্রীরা। বঙ্গোপসাগরে দুবলার চরে সোমবার থেকে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী হিন্দু ধর্ম সম্প্রদায়ের রাশ লীলা উৎসব। প্রতিবছর কার্তিক মাসে রাসমেলা এবং পুণ্য স্নানের জন্যও দুবলার চর বিশ্বখ্যাত। ২০০ বছর ধরে এ রাস উৎসব চলেছে। বনবিভাগ এবং কোস্টগার্ড উৎসবের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে। তবে এবার রাশ মেলা করার অনুমতি দেয়নি বনবিভাগ।

রাস উৎসব মূলত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একটি বার্ষিক উৎসব। যদিও বর্তমানে এটি একটি সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। প্রতিবছর কার্তিক মাসের শেষের দিকে অথবা অগ্রহায়ণ মাসের প্রথমদিকের ভরা পূর্ণিমার সময় এ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।

বিজ্ঞাপন

সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীনে দুবলার চর। দুবলার চর বাংলাদেশ অংশের সুন্দরবনের দক্ষিণে, কটকার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং হিরণ পয়েন্টের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত একটি চর হিন্দুধর্মের পুণ্যস্নান, রাসমেলার জন্য বহুল পরিচিত। কুঙ্গা ও মরা পশুর নদের মধ্যে এটি একটি বিচ্ছিন্ন চর। এই চরের আয়তন ৮১ বর্গমাইল। আলোরকোল, হলদিখালি, কবরখালি, মাঝেরকিল্লা, অফিসকিল্লা, নারকেলবাড়িয়া, ছোট আমবাড়িয়া এবং মেহের আলিরচর নিয়ে দুবলার চর গঠিত। দুবলার চর মূলত জেলেপল্লী। এই চরে মাছ ধরার সঙ্গে চলে শুঁটকি শোকানোর কাজ। শীত মৌসুমে বহু জেলে চার-পাঁচ মাসের জন্য কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, বাগেরহাট, পিরোজপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা থেকে দল বেঁধে সাময়িক বসতি গড়ে সেখানে। হিন্দু ধর্মের অনুসারীরা পূর্ণিমার জোয়ারের নোনা পানিতে স্নান করে পবিত্রতা অর্জন করার জন্য সেখানে গমন করেন।
তাদের বিশ্বাস, এই স্নান তাদের পাপমোচন করে মনের সব উত্তম কামনা পূর্ণ করবে। প্রতিবছর কার্তিক মাসে রাস পূর্ণিমায় দুবলার চরে রাসমেলা অনুষ্ঠিত হয়। এই মেলা উপলক্ষে স্থানীয় দর্শনার্থীরা ছাড়াও বহু দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকরা এখানে ভিড় করেন। অসংখ্য ভক্ত এই মেলায় পুণ্য অর্জনের জন্য সমুদ্র স্নান করে থাকে। খোল-করতাল, নাম সংকীর্তনের হরিধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে চারদিক।

এ বছরও তিন দিনব্যাপী দুবলার চরের রাস উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে । তাই সোমবার ভোর রাত থেকে পূজা ও পুণ্যনস্নানে উদ্যেশ্যে তীর্থযাত্রীরা নৌকা সাজিয়ে মোংলা থেকে রওয়ানা করেছেন।

শ্রীকৃষ্ণের রসপূর্ণ অর্থাৎ তাত্ত্বিক রসের সমৃদ্ধ কথা বস্তুকে রাসযাত্রার মাধ্যমে জীবাত্মার থেকে পরমাত্মায় রূপান্তরিত করতে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এ উৎসব পালন করে থাকে। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকরা বঙ্গোপসাগরের চর আলোর কোল এলাকায় বসে পূর্ণিমার জোয়ারে স্নান করে, যাতে তাদের সব পাপমোচন হয়ে যায়।

পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, রাসপূর্ণিমা উপলক্ষে আগামী ৩ থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী সুন্দরবনের দুবলারচরে শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অংশগ্রহণে ঐতিহ্যবাহী ‘রাসপূর্ণিমা পূজা ও পুণ্যস্নান’ অনুষ্ঠিত হবে। পুণ্যনস্নান নিরাপদে যাতায়াতের জন্য দর্শনার্থী ও তীর্থযাত্রীদের জন্য সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগ পাঁচটি পথ নির্ধারণ করেছে। এ সকল পথে বনবিভাগ, পুলিশ, বিজিবি ও কোস্টগার্ডের টহল দল তীর্থযাত্রী ও দর্শনার্থীদের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে।

পূজা ও পুণ্যনস্নানে তীর্থযাত্রীরা বিভিন্ন নদী পথে লঞ্চ, ট্রলার, স্পীডবোট ও দেশি নৌকাযোগে গমন করে থাকেন। এক্ষেত্রে অনুমোদিত পাঁচটি পথের প্রথমটি হলো বুড়িগোয়ালিনী, কোবাদক থেকে বাটুলানদী-বলনদী-পাটকোষ্টা খাল হয়ে হংসরাজ নদী হয়ে দুবলার চর। দ্বিতীয়টি কয়রা, কাশিয়াবাদ, খাসিটানা, বজবজা হয়ে আড়ুয়া শিবসা অতঃপর শিবসা নদী-মরজাত হয়ে দুবলার চর। তৃতীয় পথ নলিয়ান স্টেশন হয়ে শিবসা-মরজাত নদী হয়ে দুবলার চর। চতুর্থ পথ ঢাংমারী অথবা চাঁদপাই স্টেশন-তিনকোনা দ্বীপ-বরাবর পশুর নদী হয়ে দুবলার চর এবং অনুমোদিত পঞ্চম পথ হলো বগী-বলেশ্বর-সুপতি-কচিখালী-শেলারচর হয়ে সুন্দরবনের বাহির দিয়ে দুবলার চর।

পুণ্যনস্নানে অংশ নিতে দর্শনার্থী ও তীর্থযাত্রীদের ৩ থেকে ৫ নভেম্বর-এ তিন দিনের জন্য অনুমতি প্রদান করা হবে এবং প্রবেশের সময় এন্ট্রি পয়েন্টে লঞ্চ, ট্রলার ও নৌকার প্রবেশ ফি, অবস্থান ফি এবং লোকের সংখ্যা অনুযায়ী বিধি মোতাবেক রাজস্ব আদায়পূর্বক পাশ প্রদান করা হবে। অনুমতি পেতে জাতীয় পরিচয়পত্রের কপিসহ তীর্থযাত্রীদের আবেদন করতে হবে। প্রতিটি অনুমতিপত্রে সিল মেরে পথ/রুট উল্লেখ্য করা হবে এবং তীর্থযাত্রী ও দর্শনার্থীগণ পছন্দমত একটি রুট বা পথ ব্যবহার করবেন।

৩ নভেম্বর দিনের ভাটায় যাত্রা আরম্ভ করতে হবে। রাসপূর্ণিমা পুণ্যনস্নানের উদ্দেশ্যে নৌযান নির্ধারিত রুটে শুধু দিনের বেলায় চলাচল করতে পারবে। বন বিভাগের চেকিং পয়েন্ট ছাড়া কোথাও লঞ্চ, ট্রলার ও নৌকা থামানো যাবে না। ট্রলারে প্রয়োজনীয় সংখ্যক লাইফ জ্যাকেট বা বয়া সংরক্ষণ করতে হবে। রাসপূর্ণিমা পুণ্যনস্নানে সময় কোনো বিস্ফোরকদ্রব্য, আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার ও বহন নিষিদ্ধ থাকবে।

কারো কাছে কোন আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরকদ্রব্য, হরিণ মারার ফাঁদ, দড়ি, গাছ কাটার কুড়াল, করাত ইত্যাদি অবৈধ কিছু পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোনো অবস্থাতেই সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক যেমন প্লাস্টিকের প্লেট, পানির বোতল, গ্লাস বা চামচ বহন করা যাবে না। লঞ্চ, ট্রলার, নৌকায় এবং পুণ্যনস্নান স্থলে মাইক বাজানো, পটকা, বাজি ইত্যাদি ফোটানোসহ সকল প্রকার শব্দ দূষণ নিষিদ্ধ।
রাস পূর্ণিমায় আগত পুণ্যার্থীদের সুন্দরবনে প্রবেশের সময় জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা ইউপি চেয়ারম্যানের নিকট হতে প্রাপ্ত সনদপত্রের মূলকপি সঙ্গে রাখতে হবে।

সারাবাংলা/জিজি