Monday 03 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘বাংলাদেশ ব্যাংকের কারণে অতীতে পুঁজিবাজারে ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটেছে’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৩ নভেম্বর ২০২৫ ১৮:০১ | আপডেট: ৩ নভেম্বর ২০২৫ ২১:১৭

গোলটেবিল আলোচনায় ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম (সিএমএজেএফ)-এর প্রেসিডেন্ট এসএম গোলাম সামদানী ভূঁইয়া। ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: পুঁজিবাজারবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম (সিএমএজেএফ)-এর প্রেসিডেন্ট এসএম গোলাম সামদানী ভূঁইয়া বলেছেন, ২০০৯-১০ সালে ব্যাংকগুলোর সীমার অতিরিক্ত বিনিয়োগের কারণে পুঁজিবাজারে ভয়াবহ বিপর্যয় সৃষ্টি হয়। আগ্রাসী বিনিয়োগ এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর দলীয় গভর্নরের কারণে ব্যাংকগুলো ব্যাপক অনিয়ম করেছে। কোনো কোনো ব্যাংক এক্সপোজারের বাইরে গিয়ে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করেছে। ফলে ২০১০ সালে ভয়াবহ সংকট সৃষ্টি হয়।

তিনি আরও বলেন, ‘এক সময় ছিল যখন বীমার টাকা উঠানোর জন্য গ্রাহকদের তদ্বির করতে হতো সাংবাদিকদের কাছে, আর এখন ব্যাংকে রাখা আমানতের টাকা তুলতে তদ্বিরের ফোন আসে। আস্থাহীনতার চরম সংকটের কারণে এমনটি হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

সোমবার (৩ নভেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ পলিসি এক্সচেঞ্জ আয়োজিত ‘ব্যাংক খাতে আস্থা ফিরিয়ে আনা: পুঁজি কেন বেশি গুরুত্বপূর্ণ’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ পলিসি এক্সচেঞ্জের অর্থনীতিবিদ হাসনাত আলম।

গোলটেবিল আলোচনায় আরও বক্তব্য দেন ঢাকা স্টক একচেঞ্জ ব্রোকারেজ এসোসিয়েশন (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, প্রাইম ব্যাংকের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা হাসান উর রশিদ ও সিটি ব্যাংকের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান প্রমুখ। আলোচনায় সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাসরুর রিয়াজ।

এ সময় গোলাম সামদানী ভূঁইয়া আরও বলেন, ‘বর্তমানে পুঁজিবাজার থেকে নতুন করে অর্থায়নের সুযোগ নেই। কারণ ব্যাংকগুলোর বেশিরভাগের দর অভিহিত মূল্য বা ১০ টাকার নিচে রয়েছে। সেই কারণে নতুন করে বোনাস বা রাইট শেয়ার অফার করলে সেগুলো আর বিনিয়োগকারীরা কিনবে না। কারণ ১০ টাকার শেয়ার এখন ৪ টাকা বা ৫ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। সে কারণে ব্যাংকের মূলধন বাড়ানোর ক্ষেত্রে এ দুটি প্রক্রিয়া এখন কাজে আসবে না।’

বর্তমানে বড় ধরনের সংকট চলছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘পুঁজিবাজারের মাধ্যমে অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে যে সমস্ত বহুজাতিক কোম্পানি এখনো পুঁজিবাজারে আসেনি বা তালিকাভুক্ত হয়নি, সেগুলোকে দ্রুত তালিকাভুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি সরকারি কোম্পানি যেগুলো এখন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয়, সেগুলোতে দ্রুত তালিকাভুক্ত করতে হবে। কারণ ভাল ভাল কোম্পানি বাজারে আসলে মানুষের আগ্রহ বাড়বে এবং আগ্রহ বাড়লে ব্যাংকের শেয়ারের দর বাড়বে। তখন ব্যাংক রাইট ও বোনাস শেয়ার ছেড়ে টাকা তোলা যাবে।’

সিএমএজেএফ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘বর্তমানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশনের মধ্যে কোনা সমন্বয় নাই। বাংলাদেশ ব্যাংক বিএসইসি-কে আগে পাত্তাই দিতো না। সব সময়ই বাংলাদেশ ব্যাংক নিজেকে এলিট ভাবতো। অতীতে বিএসইসি’র চেয়ারম্যান তদ্বির করেও গভর্নরের সঙ্গে সাক্ষাত করতে পারেননি। একইভাবে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রন কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। অথচ আইনে আছে সব সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কিন্তু সেই আইন শুধু কাগজে-কলমে রয়েছে। অন্যদিকে আরও একটি আইন রয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অধীনস্থ কোম্পানির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংস্থার আইন প্রযোজ্য। সেটিও অনেক সময় পারস্পরিক বাধার সৃষ্টি করছে। সেই কারণে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় থাকা জরুরি। অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ক্ষেত্রে একই কথা প্রযোজ্য।’