রাবি: জাতীয় ঐকমত্য কমিশন প্রণীত ‘জুলাই সনদ’-এর দ্রুত আইনি স্বীকৃতি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু)। একই সঙ্গে তারা রাজনৈতিক দলগুলোকে সংস্কারবিরোধী অবস্থান থেকে সরে এসে জাতীয় ঐক্যের প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
সোমবার (৩ নভেম্বর) বিকেল পাঁচটায় রাকসুর ভিপি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ, জিএস সালাউদ্দীন আম্মার ও এজিএস এস এম সালমান সাব্বিরের যৌথ স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এসব কথা জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার ভিত্তিতে গঠিত জুলাই সনদ কেবল রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতার ফসল নয়, এটি গোটা জাতির ন্যূনতম ঐকমত্যের দলিল। তাই এই সনদকে সাংবিধানিক মর্যাদা দেওয়া এখন সময়ের দাবি। দীর্ঘ দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসন দেশে এক ধরনের কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে, যা ক্রমেই ফ্যাসিবাদী রূপ নেয়। ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে সংবিধান পরিবর্তন, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর দলীয়করণ এবং দমন–নিপীড়নের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রকে সম্পূর্ণভাবে বিপর্যস্ত করা হয়। সেই ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রামের ফলেই সংঘটিত জুলাই অভ্যুত্থান নতুন বাংলাদেশের সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করেছে। এই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে জুলাই সনদই হবে পরিবর্তনের নীলনকশা।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব ছিল- জুলাই গণহত্যার বিচার, শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন, আহতদের চিকিৎসা, রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মৌলিক সংস্কার এবং অবাধ জাতীয় নির্বাচন আয়োজন। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, এসব বিষয়ে তেমন অগ্রগতি হয়নি। বরং কিছু রাজনৈতিক দল সংস্কার প্রক্রিয়ার মৌলিক প্রস্তাবগুলোতে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়ে অগ্রযাত্রায় বাধা সৃষ্টি করছে। বিশেষভাবে বিএনপি উচ্চকক্ষে প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (পিআর) ভিত্তিক আসন বণ্টনের প্রস্তাব, মেধাভিত্তিক পিএসসি নিয়োগ, বিচারপতি ও সাংবিধানিক পদে স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া, এবং দুর্নীতি দমন কমিশন ও মানবাধিকার কমিশনের স্বাধীনতার প্রশ্নে আপত্তি জানিয়েছে। এসব আপত্তি মূলত পুরোনো প্রথা ও ফ্যাসিবাদী ধ্যানধারণাকে আঁকড়ে থাকারই বহিঃপ্রকাশ।
বিবৃতির শেষে রাকসু জানায়, সংস্কার কেবল রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা নয়; এটি সমগ্র জাতির দাবি। জনগণের মতামত যাচাই করে প্রকৃত অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করাই গণতান্ত্রিক সরকারের দায়িত্ব। তাই জুলাই সনদ বিষয়ে গণভোট আয়োজন এখন জরুরি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনা বাস্তবায়নই বর্তমান সরকারের প্রধান দায়িত্ব। দলীয় বিবেচনা নয়, জনগণের আকাঙ্ক্ষাই হতে হবে সব সিদ্ধান্তের ভিত্তি। তাই আমরা সরকারকে আহ্বান জানাই, দ্রুততম সময়ে জুলাই সনদকে আইনি স্বীকৃতি দিয়ে গণভোটের উদ্যোগ নিন। দুই দশক ধরে ভোটাধিকারবঞ্চিত জনগণের কাছে জাতীয় নির্বাচন যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণেও জুলাই সনদ সমানভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।