Monday 03 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বে-টার্মিনাল: ২০২৬ সালে কাজ শুরু, ২০৩০-এ অপারেশন

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৩ নভেম্বর ২০২৫ ১৯:৪২ | আপডেট: ৩ নভেম্বর ২০২৫ ২১:৩২

মতবিনিময় সভায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মুনিরুজ্জামান।

চট্টগ্রাম ব্যুরো : ২০২৬ সালের মাঝামাঝিতে কাজ শুরু করে ২০৩০ সালে বহুল আলোচিত বে-টার্মিনালকে অপারেশনে নিয়ে যাবার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মুনিরুজ্জামান। তিনি বলেছেন, বে-টার্মিনাল চালু হলে সারা পৃথিবী থেকে বিনিয়োগের জোয়ার আসবে।

সোমবার (৩ নভেম্বর) দুপুরে বন্দর অডিটোরিয়ামে ‘জেনারেল মার্কেট এনগেজমেন্ট কনফারেন্স ফর দ্য বে টার্মিনাল মেরিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট’ বিষয়ে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ তথ্য জানান। অংশীজন ও বিডারদের কাছে বে-টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের অগ্রগতি দৃশ্যমান করতে এ সভার আয়োজন করা হয়। এতে টার্মিনালের ব্রেক ওয়াটার নির্মাণ (ঢেউ প্রতিরোধক বাঁধ) এবং চ্যানেল ড্রেজিং নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

বিজ্ঞাপন

সভায় বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মুনিরুজ্জামান বলেন, ‘টার্মিনাল-ওয়ান ২০২৩ সালের মধ্যে অপারেশনে যাবার টার্গেট আমরা নিয়েছি। আগামী বছরের মাঝামাঝি যদি চ্যানেলের প্রবেশপথ ড্রেজিংয়ের কাজটা শুরু করা যায়, তবে ২০৩০ সালের মধ্যে অপারেশনে যাওয়া সম্ভব হবে। এখানে মাল্টিপারপাস টার্মিনালে দুটোই থাকবে। ভবিষ্যতের বাস্তবতায় জাহাজের আকার ও ধারণক্ষমতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তি উন্নত হচ্ছে। এর ফলে গিয়ার্ড ভেসেল (যে জাহাজগুলিতে নিজস্ব ক্রেন থাকে) আস্তে আস্তে উঠে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতে গিয়ারলেস ভেসেল (যেগুলি টার্মিনালনির্ভর) আসবে।’

‘এ জন্য আগামী ৫০ বছর বন্দরের সম্পূর্ণ দক্ষতা বজায় রাখার জন্য এমন একটি টার্মিনাল তৈরি করতে হবে, যেখানে গিয়ারলেস ভেসেল আসতে পারে। এটি একটি বাস্তবমুখী সিদ্ধান্ত। অন্তত আগামী ১০০ বছর কার্যকারিতা নিশ্চিত হয়, এমনভাবে এটি তৈরি করা হবে। এমনকি ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য সর্বোচ্চ গ্রেডিং ধরে প্রকল্পটি করা হচ্ছে।’

প্রকল্প বাস্তবায়নের পদ্ধতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যে প্রকল্পগুলো নেওয়া হয়েছে, এর সবগুলোই পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের গাইডলাইন অনুযায়ী হচ্ছে। এই গাইডলাইনের সমস্ত ধাপ ১০০ শতাংশ অনুসরণ করতে হবে, কোনো ধাপ এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।’

তবে প্রক্রিয়াগত কারণে প্রকল্পের কাজ শেষ করার সঠিক সময় বলা কঠিন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে অভূতপূর্ব অগ্রগতি অর্জন করেছি, যার ফলে আজ এই সভায় বসতে পেরেছি। আশা করছি, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই এই প্রকল্পের সফলতার গল্প দেখাতে পারবো। এই আত্মবিশ্বাস আমাদের আছে।’

বে-টার্মিনালের অর্থনৈতিক প্রভাব প্রসঙ্গে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, ‘বে টার্মিনাল হলে ইউরোপ এবং ফার ইস্টের দিকে সরাসরি জাহাজ পাঠানো সম্ভব হবে, যা বর্তমানে সম্ভব নয়। এই টার্মিনালের মাধ্যমে বাংলাদেশে একটি আঞ্চলিক ম্যানুফ্যাকচারিং হাব হওয়ার দরজা উন্মুক্ত হবে। এর জন্য স্পিড টু মার্কেট, সপ্তাহের সাতদিনই ২৪ ঘণ্টা অপারেশন, বড় জাহাজ পরিচালনা এবং গ্লোবাল কমপ্লায়েন্ট অনুযায়ী দক্ষ অপারেশন প্রয়োজন, যেটা বে-টার্মিনাল দিতে পারবে।’

‘এজন্য বে-টার্মিনাল তৈরি হলে সারা পৃথিবী থেকে বিনিয়োগের জোয়ার আসবে। বড় বড় কোম্পানি ইতোমধ্যে আগ্রহ দেখাচ্ছে। আপনারা জানেন, বর্তমানে বন্দরের সীমাবদ্ধতার কারণে প্রতিদিন ১ মিলিয়ন ডলার ক্ষতি হচ্ছে, যা তিন বছরে ১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। বে টার্মিনাল সেই সম্ভাবনাকে উন্মুক্ত করবে।’

অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত প্রতিটি দিক বিশ্বমানের পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে খতিয়ে দেখে বে-টার্মিনাল প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানান বন্দর চেয়ারম্যান।

সভায় বে-টার্মিনাল প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রকৌশল) কমডোর কাওছার রশিদ এর মাধ্যমে প্রকল্পের সার্বিক দিক অংশীজন ও বিডারদের কাছে উপস্থাপন করেন।

কমডোর কাওছার রশিদ বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরের ক্রমবর্ধমান চাপ কমাতে বে টার্মিনাল প্রকল্পটি সময়ের দাবি। চট্টগ্রাম বন্দরের সব স্টেকহোল্ডার চান, বে টার্মিনাল দ্রুত বাস্তবায়িত হোক। প্রকল্পের আওতায় সাগরে ব্রেকওয়াটার ও নেভিগেশন চ্যানেল নির্মাণের পাশাপাশি টার্মিনাল এলাকায় রেল ও সড়ক সংযোগ, কনটেইনার ইয়ার্ড, জেটি এবং আধুনিক সেবা অবকাঠামো তৈরি করা হবে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে ২০৩১ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদে বে টার্মিনাল মেরিন ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পটি নগরীর উত্তর হালিশহরের আনন্দবাজার এলাকায় গড়ে তোলা হবে।’

সভায় যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, চীন, ভারত ও তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশের ১২৭টি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা সরাসরি এবং ৫৭টি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অনলাইনে অংশ নেয়।

সারাবাংলা/আরডি/এইচআই