চট্টগ্রাম ব্যুরো: ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১৬ আসনের মধ্যে ১০টিতে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ আমলে গুমের শিকার হুম্মাম কাদের চৌধুরীর মনোনয়ন এবং হেভিওয়েট প্রার্থী আসলাম চৌধুরীর ছিটকে পড়া দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনসহ অধিকাংশ প্রার্থীই এবার নতুন মুখ।
সোমবার (৩ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন।
বিএনপি চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই) আসনে উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আমিন চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে উত্তর জেলার সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সরওয়ার আলমগীর চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে যুবদল নেতা কাজী সালাউদ্দিন, চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হুম্মাম কাদের চৌধুরী মনোনয়ন পেয়েছেন।
এছাড়া চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনে নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ, চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-হালিশহর) আসনে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে দক্ষিণ জেলার সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম, চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনে সাবেক সংসদ সদস্য সরওয়ার জামাল নিজাম এবং চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর ছেলে দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
যেসব আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি, সেগুলো হলো- চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ), চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান), চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া), চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা), চট্টগ্রাম-১৩ (চন্দনাইশ-সাতকানিয়া আংশিক) ও চট্টগ্রাম-১৫ (লোহাগাড়া-সাতকানিয়া আংশিক)। এর মধ্যে কোতোয়ালি-বাকলিয়া আসনে প্রথমে নগর বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানকে প্রার্থী ঘোষণা করা হলেও পরে সেটা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
বন্দর-পতেঙ্গা আসন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নিজস্ব আসন হিসেবে পরিচিত। তিনি ওই আসন থেকে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু এবার তিনি পাশের আসন ডবলমুরিং-হালিশহর থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন। ওই আসনে বিএনপি প্রয়াত নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান দুইবার প্রার্থী হয়েছিলেন। এবার নোমানের ছেলে সাঈদ আল নোমান ওই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। বন্দর-পতেঙ্গা আসনে আমীর খসরুর ছেলে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ইসরাফিল খসরু চৌধুরীকে প্রার্থী করা হবে বলে আলোচনা আছে।
রাঙ্গুনিয়া থেকে হুম্মাম কাদের চৌধুরী প্রথমবারের মতো দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। ওই আসন থেকে হুম্মামের বাবা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ফাঁসি হওয়া সালাহউদ্দিন কাদেরের সন্তান হুম্মাম কাদের আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুমের শিকার হয়েছিলেন। এ কারণে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে তার জন্য সহানুভূতি আছে, যে কারণে শুরু থেকেই মনোনয়নের জোর আলোচনায় ছিলেন হুম্মাম।
এদিকে সীতাকুণ্ড আসন থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আসলাম চৌধুরী মনোনয়ন না পাওয়ায় হতবাক হয়েছেন তার অনুসারী নেতাকর্মীরা। তিনি প্রায় ১০ বছর কারাবন্দি ছিলেন। আসলামকে মনোনয়ন না দেওয়ার প্রতিবাদে সোমবার সন্ধ্যা থেকে সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন স্থানে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন তার অনুসারীরা।
সীতাকুণ্ড থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো.মজিবর রহমান বলেন, ‘সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে মহাসড়কের বিভিন্নস্থানে অবরোধ চলছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ আছে। অবরোধকারীদের সড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা চলছে।’