Tuesday 04 Nov 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ফেব্রুয়ারিতে সবাইকে নিয়ে নির্বাচন চাই: জামায়াত আমির

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৪ নভেম্বর ২০২৫ ০৯:৩৫ | আপডেট: ৪ নভেম্বর ২০২৫ ১১:২৫

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান ও অন্যান্যরা।

ঢাকা: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘আগামী ফেব্রুয়ারিতে আমরা, আপনারাসহ দেশবাসী সবাই নির্বাচন দেখতে চাই। শুধু আমরা না, সবাইকে নিয়ে নির্বাচন দেখতে চাই।’

মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) সকালে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি গেটে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন। সৌদি আরবে ওমরাহ পালন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও তুরষ্কে প্রায় ১৫ দিনের সফর শেষে তিনি দেশে ফেরেন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘উনারা (সরকার) সময় বেধে দেয়নি। উনারা অনুরোধ করেছে যে এক সপ্তাহের মধ্যে যদি রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারে সরকারের জন্য এটা ভালো হয়। সবার আগে আমাদের নায়েবে আমিরতো আহ্বান জানিয়েছেন। আসুন সবাই মিলে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে দেশ এবং জাতির স্বার্থে সমাধানে পৌঁছি। আমরা আশা করি অন্যরা আমাদের এই আহ্বানে সাড়া দেবেন।’

বিজ্ঞাপন

শুনেছি লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে এই প্রশ্নের জবাবে জামায়াত আমির সরাসরি বলেন, ‘আপনারা শুনেছেন, আমি শুনি নাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেশ থেকে নিজের প্রয়োজনে বের হইনি। আমি বের হয়েছিলাম দেশ এবং জনগণের প্রয়োজনে। যেখানে গিয়েছি সেখানেই দেশ ও জনগণের স্বার্থেই কথা বলার চেষ্টা করেছি। যেখানে গিয়েছি একটা কথা বলার চেষ্টা করেছি যে, দুনিয়ার সকলের সঙ্গে আমরা সম্পর্ক চাই। এই সম্পর্কটা হবে মিউচুয়্যাল রেসপেক্ট এবং ইক্যুয়িটির ভিত্তিতে। আলহামদুলিল্লাহ যত জায়গায় গিয়েছি তাদের এপ্রিসিয়েশন পেয়েছি। তারা মন খুলে কথা বলেছেন। আমরাও মন খুলে সবগুলো বিষয়ে তাদের সঙ্গে শেয়ার করেছি। আল্লাহর কাছে দোয়া করি এই সফরে যেসব পদক্ষেপ ও আলোচনা হয়েছে এগুলো যেন দেশ এবং জাতির কল্যাণে নিয়োজিত হয়।’

বিএনপি তাদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে দিয়েছে এমন এক প্রশ্নের জবাবে জামায়াত আমির বলেন, ‘না তারা চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেনি। আমি দেখেছি ২৩৭ আসনে তারা তালিকা প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন এটি চূড়ান্ত নয়, এর মধ্যে পরিবর্তন আসতে পারে। আমরা কিন্তু প্রায় এক বছর আগে এই রকম তালিকা আঞ্চলিকভাবে জানিয়ে দিয়েছি। চূড়ান্ত তালিকা সময়মতো কেন্দ্রের পক্ষ থেকে ঘোষণা করবো। তবে, যেহেতু আমরা একা ইলেকশন করবো না। আরও অনেককে আমরা ধারণ করবো। দেশ এবং জাতির সার্থে সবদিক বিবেচনা করে যথাসময়ে প্রার্থী ঘোষণা করবো।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে মতানৈক্য হোক তবে দোয়া করবেন যেন মতবিরোধ না হয়। মতের ভিন্নতা থাকবেই। সব দলতো এক না। সবাই ভিন্ন ভিন্ন। তাদের দৃষ্টিভঙ্গীতে কিছু পার্থক্য থাকবে এটাই স্বাভাবিক। আমরা সকলের মতকে শ্রদ্ধার সঙ্গে দেখি। আমরা নিজেরা যে মতটা প্রকাশ করি সেটা জাতির স্বার্থে করার চেষ্টা করি। মতানৈক্য এটা গণতন্ত্রের সৌন্দর্য্য। এটার জন্য বিরোধ লেগে গেছে, একেবারে দেশ অস্থির হয়ে গেছে আমরা এটা চিন্তা করতে রাজি নই।’

ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, ‘গত অক্টোবর মাসের ১৯ তারিখ ওমরাহ করার উদ্দেশ্য দেশ থেকে বের হয়েছিলাম। তিন দিনে ওমরাহ শেষ করে ২২ অক্টোবর সকালে জেএফকে (নিউইয়র্ক) বিমানবন্দরে পৌঁছাই। সেখানে আটদিন বিভিন্ন স্তরে সরকারি বেসরকারি গুরুত্বপুর্ণ সংস্থা এবং ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক হয়। তার পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি যুক্তরাষ্ট্রে যারা বসবাস করেন তাদের সঙ্গে দেখা হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে আমার পক্ষে যাওয়া সম্ভব হয়েছিল। নিউ ইয়র্ক, বাফেলো, মিশিগান এবং সর্বশেষ ওয়াসিংটন ডিসি। আমার বাংলাদেশি প্রবাসীদের কথা শোনার সুযোগ হয়েছে। বিভিন্ন ব্যাপারে তাদেরকে আস্বস্ত করে এসেছি। বিশেষ করে দুটি মেসেজ তাদেরকে দিয়েছি। একটা হচ্ছে বাংলাদেশ আমাদের সকলের। দীর্ঘদিনের বঞ্চনা ও নিষ্পেষনের পর, ফ্যাসিবাদী শাসনের পর দেশ মুক্ত হয়েছে। মুক্তির এই সংগ্রামে প্রবাসীরা সমানতালে লড়াই করেছেন। তাদের অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, তাদের সেই অবদানের জন্য ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানিয়েছি।’

‘দ্বিতীয়ত: আমরা বলেছি প্রবাসীদের ভোটের অধিকার ছিল না। এবার এই দাবি সবার আগে আমরাই তুলেছিলাম। এই দাবি নিয়ে আমরা প্রধান উপদেষ্টা, নির্বাচন কমিশনসহ সব জায়গায় প্রবাসীদের হয়ে কথা বলেছি। আমরা সরকার এবং নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানাই, এই প্রথমবারের মতো ব্যাপকভাবে প্রবাসীদের ভোটার তালিকায় সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছেন। সেখানে কিছু সমস্যা রয়েছে। অক্টোবরের ৩০ তারিখ পর্যন্ত সময় বেধে দেওয়া হয়েছিল। এই সময়ের মধ্যে যে সফটওয়্যার ইনস্টল করা হয়েছিল সেটা সঠিকভাবে ফাংশন করেনি। যার কারণে আগ্রহ থাকা সত্বেও অনেকে ভোটার হতে পারেননি। নির্বাচন কমিশনের কাছে আমাদের দাবি থাকবে কমপক্ষে আরও ১৫দিন সময় বর্ধিত করা হোক। জটিলতাগুলো সহজ করে তাদেরকে ভোটার হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হোক। আরও সমস্যা আছে কিছু শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা বলবো একজন নাগরিকের প্রমাণের জন্য তার জাতীয় পরিচয়পত্র যথেষ্ট। প্রবাসে যদি তার একটা ভেলিড পাসপোর্ট থাকে সেখানে আর কিছু প্রয়োজন হয় না। আমরা শর্ত সহজ করার আহ্বান জানাবো।’

তিনি বলেন, ‘সর্বশেষ আমি তুরষ্কে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে এখন দেশে ফিরলাম। সেখানেও সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মিটিং হয়েছে। বাংলাদেশি ডায়াসপোরা (প্রবাসী) আছে তাদের সঙ্গেও কথা হয়েছে।’

সাংবাদিকদের সহযোগীতা কামনা করে জামায়াতের আমির বলেন, ‘আপনারা জাতির বিবেক দেশ গড়ার অভিযাত্রায় জামায়াতে ইসলামী যেসব কর্মসূচি ঘোষণা করছে, যা দেশ এবং জাতির কল্যাণে সবগুলোতে আপনাদের সঙ্গে চাই। কারণ আপনারা শুধু সাংবাদিক না, এদেশের নাগরিকও বটে। অতএব আমরা যারা নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে চাই এ ক্ষেত্রে আপনাদের ভূমিকা হবে অগ্রগণ্য। কারণ সাংবাদিকরা যখন জাতির কল্যাণে সিদ্ধান্ত নেয়, জাতি তখন কল্যাণের পথ খুঁজে পায়।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি আমির নির্বাচিত হইনি। আমার সহকর্মীরা আমার ওপরে একটা দায়িত্বের ভার অর্পন করেছেন। দায়িত্বটা বড় ভারি। আপনারা দোয়া করবেন দেশ এবং দ্বীনের জন্য এই দায়িত্ব পালনে আল্লাহ যেন আমাকে সাহায্য করেন। আমি আপনাদেরও সহযোগিতা চাই।’

এ সময় বিমানবন্দরে আরও উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, নায়েবে আমির মাওলানা শামসুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারি সেক্রেটারি মাওলানা এটিএম মাছুম, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, মাওলানা আবদুল হালিম, হামিদুর রহমান আযাদ, মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, সাধারণ সম্পাদক ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, কেন্দ্রীয় নেতা সাইফুল আলম খান মিলন, মোবারক হোসাইন, মতিউর রহমান আকন্দ, মুহাম্মদ আতাউর রহমান সরকার প্রমুখ। এসময় ভিআইপি গেটের বাইরে সহস্রাধিক দলীয় নেতাকর্মী জামায়াত আমিরকে শুভেচ্ছা জানান।

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর